হাতির ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় কি কি
বিশালদেহী হাতিও আমাদের মতো লম্বা সময় ধরে বাঁচে। এবং তাদের দেহে কোষের সংখ্যাও অগণিত। কিন্তু বিশালদেহী হাতি কখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় না বললেই চলে, বিশালদেহী হাতির দেহকোষে পি-৫৩ জিনের ২০টি কপি থাকে। আবার প্রতিটি কপির দুটি করে প্রকরণ থাকে, এগুলোকে ডাকা হয় অ্যালিল। তাহলে হাতির দেহকোষে পি-৫৩ জিনের প্রকরণ সংখ্যা দাঁড়ায় চল্লিশে। মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার কারণ, কোষের ভেতর লম্বা সময় ধরে জমা মিউটেশন।
হাতির ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় কি কি
মানুষ যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তা তো বলা বাহুল্য কিন্তু বিড়াল, কুকুর বা ঘোড়ার মতো অনেক প্রাণীই আছে যাহারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বিষয়টা অবাক করা মতো, হাতির মতো বিশালদেহী প্রাণীর ক্যান্সার বলতে গেলে হয়ই না। বটেই।
অবাক বিষয়, তিমি বা হাতির মতো বিশালদেহী প্রাণীর ক্যান্সার হয় না বললেই চলে। অর্থাৎ ক্যান্সার হওয়ার সঙ্গে কোনো প্রজাতির কোষের সংখ্যার সম্পর্ক দেখা যায় না। তবে বিজ্ঞানে পেটোর প্যারাডক্স বলে একটা ব্যাপার আছে। এই প্যারাডক্স বা হেঁয়ালির মূল কথা হলো, একই প্রজাতির প্রাণীর কোষের সংখ্যা বেশি হলে তার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি (ক্যান্সারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত থাকলেও এমনটাই দেখা যায়)। আবার প্রজাতিভেদে এই বিষয়টি আর কাজ করে না। বিশালদেহী তিমি বা হাতির মতো প্রাণীর ক্যান্সার হয় না বললেই চলে। তবে ক্যান্সার হওয়ার সঙ্গে কোনো প্রজাতির কোষের সংখ্যার সম্পর্ক দেখা যায় না। কেননা, সে বিষয়টা বুঝতে আগে ক্যান্সার জিনিসটা কী, তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।
মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার কারণ, কোষের ভেতর লম্বা সময় ধরে জমা মিউটেশন। কিন্তু মিউটেশন কী? কোষের ডিএনএতে ৪ ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষার একটা নির্দিষ্ট অনুক্রমে বসানো থাকে। চারটা ক্ষার হলো অ্যাডিনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) আর থায়মিন (T)। মিউটেশন মানে হলো, কোনো কারণে ডিএনএতে ৪টি ক্ষারের অনুক্রম পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া। আবার মিউটেশন হওয়ার একটা কারণ হলো কোষের ভেতরে ডিএনএ অনুলিপন অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় এক ডিএনএ থেকে অন্য ডিএনএ তৈরি হয়, সে প্রক্রিয়ায় ভুল হওয়া।
হয়তো ভাবতে পারেন, বিশালদেহী হাতিও আমাদের মতো লম্বা সময় ধরে বাঁচে। এবং তাদের দেহে কোষের সংখ্যাও অগণিত। কিন্তু বিশালদেহী হাতি কখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় না বললেই চলে, কারণটা কী?
আরও পড়ুন: গরু বা ষাঁড় লাল রঙ দেখতে অক্ষম
আমাদের দেহের মতো বিশালদেহী হাতির দেহেও পি-৫৩ নামে একধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। এই পি-৫৩ নামে প্রোটিনের কাজই হলো ডিএনএ অনুলিপনের সময় হওয়া ভুলগুলো ঠিক করা। আবার কোষে প্রোটিন তৈরি হয় জিন থেকে, তবে পি-৫৩ প্রোটিনের জন্যও আছে নির্দিষ্ট জিন যার নাম টিপি-৫৩ [TP53]। একে ‘গার্ডিয়ান অব দ্য জিনোম’ বা জিনের অভিভাবক বলে ডাকা হয়, ডিএনএ অনুলিপনের সময়ের ভুলগুলো ঠিক করার মতো গুরু দায়িত্ব পালনের করে বলে।
অবাক বিষয় হলো, বিশালদেহী হাতির দেহকোষে পি-৫৩ জিনের ২০টি কপি থাকে। আবার প্রতিটি কপির দুটি করে প্রকরণ থাকে, এগুলোকে ডাকা হয় অ্যালিল। তাহলে হাতির দেহকোষে পি-৫৩ জিনের প্রকরণ সংখ্যা দাঁড়ায় চল্লিশে। বিশালদেহী হাতিদের কোষে মোট চল্লিশটি পি-৫৩ প্রোটিন তৈরি হয়। অপরদিকে মানুষের দেহকোষে এই জিনের কেবল একটি কপি (দুটি প্রকারণ) থাকে। ফলে আমাদের দেহকোষে কেবল দুটি পি-৫৩ প্রোটিন তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: অঙ্গের কার্যপ্রণালি
যদি লম্বা সময় ধরে কোষের ডিএনএতে মিউটেশন জমা হলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং এই টিউমার থেকে হয় ক্যান্সার। পি-৫৩ প্রোটিন ডিএনএর মিউটেশনগুলো ঠিক করে টিউমার গঠনের হাত থেকে কোষকে রক্ষা করে থাকে। আবার ডিএনএ অনুলিপন প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল দেখা গেলেই এই প্রোটিন অনুলিপন প্রক্রিয়া থামিয়ে সেটা মেরামত করে, কিংবা কোষে যদি যথেষ্ট মিউটেশন জমে যায়, পি-৫৩ প্রোটিন সে কোষকে আত্মঘাতী হতে বাধ্য করে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, এই প্রোটিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি মানুষের দেহে ক্যান্সার হয় রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা কিংবা কোনো কারণে পি-৫৩ প্রোটিনের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে।
আগের প্রশ্নে ফেরা যাক, বিশালদেহী হাতির দেহে কেন ক্যান্সার হয় না?
যেহেতু হাতির দেহে বহু সংখ্যক পি-৫৩ প্রোটিন তৈরি হয়, মিউটেশনের কারণে এই প্রোটিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে। একই কারণে একসঙ্গে বিভিন্ন আণবিক সংকেতে সাড়া দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোষের মিউটেশন মেরামত করাও সম্ভব হয়। এখনো বিজ্ঞানীরা হাতির দেহকোষে পি-৫৩ প্রোটিনগুলো কী করে ক্ষতিগ্রস্ত কোষের প্রতি সাড়া দেয়, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। এবং সঙ্গে এই গবেষণা মানুষের দেহের ক্যান্সার রুখতে কাজে লাগানো যায় কি না, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সূত্র:- উইকিপিডিয়া, সায়েন্টিফিক আমেরিকান.
Pingback: মানুষ শীতনিদ্রায় যায় না কেন - amaderkhabar