আবার আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারপাশেও ঘুরছি। কারণ, মিল্কিওয়ের চারপাশে ঘুরছে সূর্য। মিল্কিওয়েকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে সাড়ে ২২ কোটি থেকে ২৫ কোটি বছর যাকে বলা হয় গ্যালাক্টিক ইয়ার বা কসমিক ইয়ার। বর্তমানে আমরা মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে ২৬ হাজার ১০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছি।

সৌরজগৎ সম্পর্কে কিছু তথ্য

পৃথিবী যে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে বোঝা হয়তো একটু কঠিন। কারণ, আমরা ভূপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি না পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘণ্টায় প্রায় এক লাখ ৭ হাজার কিলোমিটার (প্রায় ৩০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড) বেগে ঘুরছে এবং এই ঘূর্ণনের কারণেই বছর হয়। এ ছাড়াও নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরছে সেকেন্ডে প্রায় ৪৬০ মিটার বেগে, যে কারণে দিন-রাত হয়।

এটুকু শুনে যদি অবাক হন, বিস্ময়ের আরও বাকি আছে। কারণ, পৃথিবী তথা আপনি বা আমরা একই সঙ্গে ২ টি বস্তুর চারপাশে ঘুরছি যার মধ্যে একটা অবশ্যই সূর্য। তাই পৃথিবী যেহেতু সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, আমরাও সূর্যের চারপাশে ঘুরছি। আবার আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারপাশেও ঘুরছি। কারণ, মিল্কিওয়ের চারপাশে ঘুরছে সূর্য।

বিষয়টা অনেকটা চাঁদের মতো যেমন, চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আবার একই সঙ্গে সূর্যের চারপাশেও ঘোরে তেমনি পৃথিবীও ২টি বস্তুর চারপাশে ঘোরে।

স্পষ্ট করে বললে, পৃথিবী আসলে পরোক্ষভাবে ঘুরছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা একটি ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে, এই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের নাম স্যাজিটারিয়াস এ। সব নক্ষত্রসহ অন্য বস্তুগুলোকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ধরে রেখেছে এই মিল্কিওয়ের।

আরও পড়ুন: বুধ গ্রহে কত দিনে এক বছর হয়

সূর্যসহ গোটা সৌরজগৎ ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার বেগে ঘুরছে মিল্কিওয়ের চারপাশে। হয়তো আপনার কাছে এই গতি অনেক বেশি মনে হতে পারে। এখানেই শেষ নয়, ঠিক কতবার আমাদের সৌরজগৎ বা সূর্য ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘুরেছে এ পর্যন্ত। বিষয়টা যত সহজ মনে হয়, তত সহজ নয়।

তবে সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলোর কক্ষপথের তুলনায় মিল্কিওয়ের চারপাশে অন্যান্য নক্ষত্রের কক্ষপথ অনেক বড় বা কম স্থিতিশীল। তাই গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে আমরা কতবার ঘুরেছি, তা গণনা করা কঠিন।

মিল্কিওয়ের চারপাশে সূর্যসহ গোটা সৌরজগৎ প্রতি ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার বেগে ঘুরছে। হয়তো আপনার কাছে এই গতি অনেক বেশি মনে হতে পারে। আরও বাকি আছে বিস্ময়ের, মিল্কিওয়ের চারপাশে কিছু অতি দ্রুতগতির নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করে যাকে বলে হাইপারভেলোসেটি নক্ষত্র। এ গুলোর গতি প্রতি ঘন্টায় ৮২ লাখ কিলোমিটার।

বর্তমানে সূর্য যে বেগে ঘুরছে, তাতে মিল্কিওয়েকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে সাড়ে ২২ কোটি থেকে ২৫ কোটি বছর যাকে বলা হয় গ্যালাক্টিক ইয়ার বা কসমিক ইয়ার। ডাইনোসর যতদিন পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে, তারচেয়েও বেশি সময়। যতদিন ধরে মানুষ বসবাস করছে, এটা তারচেয়েও ৭৫০ গুণ বেশি সময়।

মার্কিন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন ‘’দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটির’’ মতে, সূর্যের বয়স প্রায় ৪৬০ কোটি বছর। এর প্রায় দশ কোটি বছর পরে পৃথিবীর জন্ম। অর্থাৎ যদি সূর্য জন্মের পরপরই গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে ঘোরা শুরু করত, তাহলে এতদিনে প্রায় বিশ থেকে ২৫ বার প্রদক্ষিণ করা হতো। তবে সূর্য জন্মের পর থেকে সব সময় একই জায়গায় থাকেনি।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী ভিক্টর ডিবাটিস্তা, সূর্য মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের অনেক কাছাকাছি গঠিত হয়েছিল বলে জানান। তিনি আরও বলেন, সূর্যকে আমরা যেখানে দেখছি, হয়তো এটা সেখানে গঠিত হয়নি। হয়তো হতে পারে সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের অনেক কাছাকাছি গঠিত হয়েছিল।

বর্তমানে আমরা মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে ২৬ হাজার ১০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছি। কিন্ত সূর্যের বুকে যে রাসায়নিক প্রক্রিয়া চলছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, সূর্য গঠিত হয়েছিল মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে।