ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা
ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি বা এর ভর্তা তৈরির ছাড়াও ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুরের ঝোলও রাঁধা হয়। চিকিৎসায় প্রাচীন কাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল বা এর মূল কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে পুষ্টি উপাদান জলীয় অংশ ৮৮.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৬, হজম যোগ্য আঁশ ২.২, খাদ্যশক্তি ৩৭ গ্রাম, আমিষ ১.৩, চর্বি ০.২, শর্করা ৭.৬, ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন-সি ৫ মিলিগ্রাম।
ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা
ডুমুরের ফুল’ না দেখলেও ডুমুর ফল আমরা সবাই গ্রামের বন-বাদাড়ে দেখেছি। আমাদের চেনা এই ডুমুর খাবার হিসেবে অনেক জায়গাতেই পরিচিত। দেশের রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষত পাইনবাবগঞ্জ, সিলেটের মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, পার্বত্য এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, ডুমুর তুলনামূলক বেশি জন্মে। আমাদের দেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ডুমুরের গাছ দেখা যায়। ডুমুরের কাঁচা ফল অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি বা এর ভর্তা তৈরির ছাড়াও ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুরের ঝোলও রাঁধা হয়। ছোট এই ফলগুলো ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ যা স্বাস্থ্যের জন্য বিস্ময়কর কাজ করে। ডুমুর শুকনো খেতে পারেন অথবা অতিরিক্ত উপকারিতার জন্য পানিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন।
ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় প্রাচীন কাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল বা এর মূল কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি, গুটিবসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত সমস্যা, সর্দি-কাশি, ফোড়া বা গ্রন্থস্ফীতি (টিউমার) ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় ডুমুর কার্যকর।
হিলিং ফুডস’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সতেজ ও শুকনো ডুমুর খাওয়া যায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া ডুমুর পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখার পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখে। যাঁরা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এই ডুমুর দারুণ খাবার।
পুষ্টি উপাদান:-
হচ্ছে প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে পুষ্টি উপাদান জলীয় অংশ ৮৮.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৬, হজম যোগ্য আঁশ ২.২, খাদ্যশক্তি ৩৭ গ্রাম, আমিষ ১.৩, চর্বি ০.২, শর্করা ৭.৬, ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন-সি ৫ মিলিগ্রাম। এতে ফাইবারের উপস্থিতি এই ফলের খাদ্যগুণকে বাড়িয়ে তুলেছে।
ডুমুর শরীরকে কীভাবে ভালো রাখতে সক্ষম জেনে নিন…
উচ্চ রক্তচাপ:-
বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত ডুমুর ফল খেলে আমাদের শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সামঞ্জস্য রক্ষা হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা কম হয়। ডুমুর ফল কিছু মিনারেল ও ভিটামিন সরবরাহ করে যা শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হয়ে থাকতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন: কালোজিরার তেলের উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:-
ডুমুরে আছে প্রচুর দরকারি ফাইবারের উপস্থিতি, এ ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ সাহায়ক। ডায়রিয়া বা অন্য কোনো পেটের গোলযোগ সহজে হতে দেয় না ডুমুর।
হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে:-
ডুমুরে আয়রনের ভাল একটি উৎস, যা রক্তনির্বাহন এবং হেমোগ্লোবিন তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে:-
ডুমুরের ফাইবার মেটাবলিজমকে ঠিক রাখে এবং শরীরে অকারণ মেদ জমতে বাধা দেয়। ডুমুরের ফাইবার উপাদান স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরে মেদ নিয়ে যাঁরা দুশ্চিন্তা করেন, তাঁদের জন্য ডুমুর বেশ উপকারী ফল। ডুমুর খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে, যে কারণে ঘন ঘন খাবার খাওয়ার অভ্যাস কমে। তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে বা অতিরিক্ত কমাতে ডুমুর একটি মূল্যবান সহযোগী হতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:-
প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে ডুমুরে। ডুমুর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে আপনার প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। আবার শুকনো ডুমুর রক্তের ট্রাইগ্লিসারিডসকে কমায়। ডুমুরের পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা আপনার শরীরের টিস্যুগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের জন্য উপকারী:-
শুধু খেতে ভালো তা-ই না, ঔষধি গুণ নিয়েও অনেক প্রশংসা আছে ডুমুরের। ডুমুর ফল কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, ফোঁড়া ও চর্মরোগ নিরাময়ে বেশ কাজ দেয় ও সেইসঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:-
ডুমুরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক, এই বিষয়ে ডুমুর সাহায্য করতে পারে। ডুমুর থেকে যোগ হওয়া ফাইবার রক্তে শর্করার ভালো ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে।
আরও পড়ুন: চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা
হাড় শক্তিশালী করে:-
ডুমুর খেলে তা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে যা আমাদের হাড়েরও যত্নের ও হাড়ের শক্তি বাড়াযতে প্রয়োজন। ডুমুরের ক্যালসিয়াম উপাদান হাড়-সম্পর্কিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে বেশ সাহায়ক।
ভেজানো ডুমুর কেন খাবেন:-
দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ডুমুর যোগ করুন ২/৩টি ডুমুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই ডুমুর পানিসহ খেয়ে ফেলুন। মিষ্টি স্বাদ যোগ করতে চাইলে আপনার গ্লাসে কিছুটা মধু যোগ করতে পারেন। সুস্থতা বাড়ানোর একটি সহজ এবং আনন্দদায়ক উপায়।
মন্তব্য:- যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কেননা প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে।
Pingback: - amaderkhabar