ঘূর্ণিঝড়: সংকেতে কী বোঝায়
ঘূর্ণিঝড়: সংকেতে কী বোঝায়
আন্তর্জাতিক আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা থেকে আলাদা ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি সংকেত ব্যবস্থা ।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও পায়রা বন্দর এবং মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় দেশের তিন সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তার বিষয়টি সেখানে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি তখন জনসাধারণের জন্য। সনাতনী এ সংকেত ব্যবস্থা মূলত তৈরি করা হয়েছিল সমুদ্রগামী জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তার জন্য।
-: সমূদ্র বন্দরের জন্য সংকেত সমূহ :-
১ নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত:-
জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুযোগপর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬১ কিমি যা সামূদ্রিক ঝড়ে পরিনিত হতে পারে।
২ নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত:-
দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি:মি:। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাকগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।
৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত:-
বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দূযোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণী বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কি:মি: হতে পারে।
৪ নং স্থানীয় হুশিয়ারী সংকেত:-
বন্দর ঘূর্নীঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘন্টায় ৫১-৬১ কি:মি: তবে ঘূর্নীঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তাতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
৫ নং বিপদ সংকেত:-
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপাতিত।ঝড়ে বাতাসের সবোচ্ছ একটানা গতিবেগ ৬২-৮৮ কি:মি:। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নং বিপদ সংকেত:-
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল ১ সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপাতিত। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং ঝড়ে বাতাসের সবোচ্ছ একটানা গতিবেগ ৬২-৮৮ কি:মি:।
৭ নং বিপদ সংকেত:-
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপাতিত।ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৬২-৮৮ কি:মি:। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নং মহাবিপদ সংকেত:-
বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘুণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কি:মি: বা তার উদ্ধে হতে পারে ।
৯ নং মহাবিপদ সংকেত:-
বন্দর প্রচন্ড বা সবোচ্ছ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘুণিঝড়ের কবলে নিপাতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কি:মি: বা তার উদ্ধে হতে পারে । প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
১০ নং মহাবিপদ সংকেত:-
বন্দর প্রচন্ড বা সবোচ্ছ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘুণিঝড়ের কবলে নিপাতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কি:মি: বা তার উদ্ধে হতে পারে । প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
১১ নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত:-
আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সকল যেগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থা্নীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত্র দযোগপূর্ন বলে মনে করেন।
-: নদী বন্দরের জন্য সংকেত সমূহ :-
১ নং নৌ সতর্ক সংকেত:-
এই সংকেত আবহাওয়ার চলিত অবস্থার উপর সতর্ক নজর রাখার তাগিদ দেয়। ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবেলে নিপাতিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বন্দর এলাকা। ঘন্টায় সবোচ্ছ ৬০ কি:মি: গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদশিত হয়।
২ নং নৌ হুঁশিয়ারী সংকেত:-
নিস্নচাপের সমতূল্য তীব্রতার একটি ঝড়বন্দর এলাকাবন্দর এলাকায় যার গতিবেগ ঘন্টায় অনুদ্ধে ৬১ কি:মি:বা একটি কালবৈশাখী ঝড় যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কি:মি: বা তদূদ্ধ। নৌ-যান এদের যে কোনটির কবলে নিপাতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ-যানকে দ্রত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৩ নং নৌ বিপদ সংকেত:-
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘন্টায় একটানা ৬২-৮৮ কি:মি: পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামূদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সকল প্রকার নৌ-যানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে গ্রহন করতে হবে।
৪ নং নৌ-মহাবিপদ সংকেত:-
এই সংকেত বন্দর এলাকা একটি প্রচন্ড বা সর্বাচ্ছ র্তীব্রতার সামূদ্রিক ঝড় কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বাচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কি:মি: বেশি হতে পারে। সকল প্রকার নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
ফুজিয়ান টেক্সটাইলের ফটকে চীনা প্রকৌশলীর স্ত্রী
-: সংকেত প্রচার ও পতাকা উত্তোলন পদ্ধতি :-
৪ নম্বর সংকেত:- ৪ নম্বর সংকেতে পতাকা উত্তোলন হবে ১টি। মৌখিকভাবে একে অপরকে জানাতে হবে। ৫ থেকে ৭ নম্বর সংকেত: সংকেত পতাকা উত্তোলনর। মেগাফোন এবং মাইক দিয়ে প্রচার; ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি সভা করতে হবে।
৮ থেকে ১০ নম্বর সংকেত:- এই সংকেতে পতাকা উত্তোলন হবে ৩টি। মেগাফোন, মাইক, হ্যান্ড সাইরেন, পাবলিক এড্রেস সিস্টেম ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণকে জানাতে হবে।
ঝড়ের সতর্ক বার্তা হিসেবে সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত, ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের পর ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়। সর্বশেষ ১১ নম্বর দিয়ে বোঝানো হয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
১ নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত, ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত ও ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত রয়েছে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্যও। কোন দিক দিয়ে ঝড় যাবে তার ভিত্তিতে নম্বর আলাদা করা হয়, যদিও বিপদ সব ক্ষেত্রেই সমান। সমুদ্রবন্দরের জন্য সংকেতগুলোর মধ্যে ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা এক। আবার ৮, ৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেরও মাত্রা এক।
সাধারণ মানুষ মনে করে সংকেত যত বেশি বিপদও তত বড়। ফলে দ্রুততম সময়ে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। গত ২ দশকে বেশি সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখেনি সংকেত ব্যবস্থা সংস্কারের। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী নেতৃত্বে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর গঠিত একটি কমিটি সংকেত ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ জমা দিয়েছিল, এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।