জাতীয়

সুগম হল ডিজিটাল ব্যাংকের পথ

সুগম হল ডিজিটাল ব্যাংকের পথ

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট প্রস্তাবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুন ধরনের এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের পথ সুগম করতে নীতিমালা অনুমোদন করেছে, উদ্যোক্তাদের মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা নতুন ধরনের এ ব্যাংক গড়তে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল বশার, গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এ নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ঋণ খেলাপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা মূলধন থাকতে হয়। এখন প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি নতুন ধরনের এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পথ খুলল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের এ অনুমোদনের ফলে।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থবছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের কথা বলেছিলেন। এ ব্যাংকের রূপরেখা প্রণয়ণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি কাজ শেষ করেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে তিনি দেশের সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন বাজেট বক্তৃতায়।

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬১টি ব্যাংক। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা দিচ্ছে আরও কয়েকটি কোম্পানি, যেগুলো মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত। ডিজিটাল ব্যাংকের এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের শেয়ার ৫ বছরের আগে হস্তান্তর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ বছরের আগে এ অনুমোদন দিতে পারবে না।

ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩১ এর মোতাবেক প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং পরিশোধ সেবা (পেমেন্ট সার্ভিস) পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪ এর বিধান অনুসরণ করতে হবে ব্যাংকটির পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

এ ব্যাংকের পর্ষদে একই পরিবার থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ৩ জনের অধিক পরিচালক থাকতে পারবেন না। পর্ষদে কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ সদস্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশিষ্ট সদস্যরা ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন, ব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে এ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যালয় থাকবে না। যে কারণে প্রচলিত ব্যাংকের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। নিজস্ব এটিএম/সিডিএম/সিআরএম থাকতে পারবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো জামানত রেখে ঋণ প্রদান করতে পারবে। ঋণ দিতে অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি গ্রাহকের সহায়ক জামানত হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে দেওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন অনুসরণ করবে।

নীতিমালায় ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরুর ৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্তির শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে আইপিওর মাধ্যমে তোলা অর্থের পরিমাণ উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা প্রাথমিক মূলধনের কম হতে পারবে না।

তামিল সিনেমায় মনোযোগ নায়িকার

ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করতে অনলাইন প্রযুক্তি নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংক লেনদেনের জন্য কোনো প্রকার স্পর্শযোগ্য ‘ইনস্ট্রুমেন্ট’ ইস্যু করতে পারবে না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদনের পর তানভীর এ মিশুক বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য নগদ ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা নিয়ে গ্রাহক সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। নগদ যদি আজ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পায়, তাহলে আমরা কাল থেকে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে আগে থেকে বলে আসছে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *