পারমাণবিক সাবমেরিন বহরের পরিকল্পনা তিন দেশের…
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তি চালিত পরবর্তী প্রজন্মের সাবমেরিনের একটি বহর তৈরির যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, সেটির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। আকুস এগ্রিমেন্ট নামের ওই চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম কোন দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াই পাবে তিনটি পারমাণবিক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাবে।
তিন দেশের এই সমঝোতার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা করা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবমেরিনের নতুন একটি বহন তৈরিতে কাজ করবে এই তিনটি দেশ। এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকছে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েসের বানানো পারমাণবিক রিয়্যাক্টরও।
গত সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেন পায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নেতাদের মাধ্যমে। সেখানে বক্তব্য দেয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই সাবমেরিন গুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও পরমাণু অস্ত্র মুক্ত থাকার যে অঙ্গীকার করেছে, সেটারও কোন বিচ্যুতি ঘটবেনা। সোমবার ঘোষণা করা এই চুক্তি মোতাবেক, রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর সদস্যরা এ বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নৌঘাটিগুলোয় সাবমেরিনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।
২০৩০ সাল নাগাদ ভার্জিনিয়া ক্লাস তিনটি আমেরিকান সাবমেরিন ক্রয় করবে অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ২০২৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ছোট একটি সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করতে পারবে। তাদের জন্য আরও দু টি সাবমেরিন ক্রয়েরও সুযোগ খোলা থাকবে। এরপর থেকে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর জন্য পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তির পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরি করা হবে, যার নাম হবে ”এসএসএন-আকুস”। ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই আক্রমণকারী সাবমেরিনগুলো আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হবে ব্রিটিশ নকশায়। এগুলো তৈরিতে তিন দেশ থেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার যে সাবমেরিন বহর রয়েছে, তার তুলনায় নতুন সাবমেরিনগুলো দ্রুত গতি এবং অনেক দূর পথ চলাচল করতে পারবে। এসব সাবমেরিন গুলো ভূমি এবং সাগরে একাধারে আঘাত হানতে সক্ষম ক্রুজ মিসাইল থাকবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিন দেশই চায় ওই এলাকা চলাচলে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সোমবারের ওই ঘোষণা অনুযায়ী, ডুবোজাহাজ তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে আগামী কয়েক বছর ধরে ৪০০ ষাট কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন উন্নতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানেজ বলেছেন, ডুবোজাহাজ তৈরির এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। তিনি আরও বলেছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে গত ৬৫ বছরের মধ্যে প্রথম বার আর ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি অন্য কোন দেশের সঙ্গে বিনিময় করছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন যে, আঠারো মাস আগে যখন আমরা এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করি, তখন থেকে সারা বিশ্বে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। ইউক্রেনে উপর অবৈধভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া, চীনের গোঁড়ামি, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীল আচরণ এসব বিশৃঙ্খলা ও বিভাজন সারা বিশ্বের জন্যই হুমকি। সুনাক আরও বলেছেন, আগামী দুই বছর প্রতিরক্ষা খাতে আরও প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাড়বে যুক্তরাজ্যর।
এই চুক্তির বিরোধিতা প্রথম থেকেই করে আসছে চীন। গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন এই চুক্তির ফলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে কিনা এমন উদ্বেগের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, সেখানে নেটোর মতো কোন জোট তৈরির ইচ্ছা নেই যুক্তরাষ্ট্রের। চুক্তির ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী।