নওগাঁয় অসময়ে আম বেশি দামে বিক্রি
নওগাঁয় অসময়ে আম বেশি দামে বিক্রি
দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে নওগাঁ জেলায় দিন দিন বাড়ছে আম চাষের পরিধিও। এ জেলায় সাধারণত জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম। এ সময়ে বাজারে আমের সরবরাহ বেশি হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পান না। সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামের আম বাগানে মালিক রায়হান আলম বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেরিতে আমের ফলন পাচ্ছেন। এতে রায়হান আলম আমের দাম পাচ্ছেন বেশি।
রায়হান আলম বারোমাসি জাতের বাইরে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি জাতের আমে সাফল্য পেয়েছেন । স্বাভাবিকভাবে আম্রপালি জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেষ হয় আর বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো জুলাইয়ে শেষ হয়ে যায়। তবে সাপাহারের রায়হান আলমের আম বাগানে আগস্ট, সেপ্টেম্বর কিংবা আরও পরে ও তিন জাতের আমের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি মূলত গাছে মুকুল আসার সময় বিলম্বিত করে দেরিতে ফলন পাচ্ছেন।
পোরশা উপজেলা ছাওড় ইউনিয়নের বন্ধুপাড়া এলাকায় অবস্থিত রায়হান আলমের মিশ্র ফলের বাগান। আম ছাড়াও ড্রাগন ও পেয়ারার গাছ রয়েছে মিশ্র ফলের বাগানে । মিশ্র বাগানের ১৫০টি বারি-৪, ৩০টি ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও ২০টি আম্রপালি গাছ থেকে অসময়ে আম পাওয়া যাচ্ছে। অসময়ে উৎপাদিত প্রতি মণ বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পরিপক্ব হবে।
পোরশার সারাইগাঁছী-আড্ডা সড়কের পাশে বন্ধুপাড়া মোড়সংলগ্ন ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু গাছে ছোট ছোট আমের গুঁটি, কিছু গাছে মুকুল এসেছে। আবার কিছু গাছে গাছে ঝুলছে ডাঁসা ডাঁসা বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আম। বাগানটি থেকে অন্তত আরও ৩ মাস আম পাওয়া যাবে।
রায়হান আলম বলেন, বন্ধুপাড়া এলাকায় ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ২০১৯ সালে সেখানে আম, পেয়ারা ও ড্রাগন ফলের মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলেন। শুরুতে বাগানে নাবি জাতের গৌড়মতি আমের গাছ লাগান। গৌড়মতি জাতের কিছু গাছের ডাল কেটে ওই সব ডালে কলম করে বারি আম-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি জাতে রূপান্তরিত করেন।
মৌসুমের আম অমৌসুমে নেওয়ার জন্য চলতি বছর আমগাছে মুকুল আসার মাস খানেক আগে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আমগাছের ডগা তিনি ভেঙে দেন। এবং গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার, জৈব সার ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক ধরনের হরমোন খুব সীমিত পরিমাণে গাছে ব্যবহার করেন। এতে করে ওই সব গাছে মার্চের পরিবর্তে মে মাসের দিকে মুকুল আসে। সেই মুকুলের আম এখন বড় হয়েছে। বারি-৪ গাছ থেকে গত সোমবার ছয় মণ আম বিক্রি করেছেন।
ওজন ও অ্যাসিডিটি কমায় জোয়ান
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সিজনের সময় আমগাছে মুকুল এলে সেই মুকুল ও আমগাছের ডগা কেটে গেলে ঐ সব গাছে ঠিক ২ মাস পরে আবারও মুকুল আসবে। মুকুল ধরা বিলম্বিত করে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আম অমৌসুমে উৎপাদন করা সম্ভব। আমগাছ বেশি বয়সী না হলে আমরা চাষিদের হরমোন ব্যবহার করতে নিষেধ করি। কারণ, এতে করে আমগাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আগেও বারোমাসি বারি-১১ ও কার্টিমন জাতের আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে আম হয়েছিল। তবে রায়হানের সফলতা দেখে অন্য আমচাষিরা এই পদ্ধতিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কেননা মৌসুমের সময় এই প্রতি মণ আমই বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। অমৌসুমে উৎপাদিত সেই আম এখন চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
Pingback: কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না নোরা ফাতেহি - Amader Khabar