জাতীয়

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রায় দুমাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়া শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করে খালেদা জিয়া পরিবার। এ অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই সরগরম দেশের রাজনীতি।

গত রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়ে দেন, আইনগতভাবে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে অনুমতি দেওয়ার সরকারের হাতে কোনো সুযোগ নেই। বেশ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, খালেদা জিয়া এখন যে অবস্থায় আছেন, সেই অবস্থায় রেখেই তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়া যায়। আইনে সে সুযোগ আছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দ্রুত বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। এ অবস্থায় গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে খালেদা জিয়া পরিবার। মতামতের জন্য আবেদন পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। রোববার আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে মত দেওয়া হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার অবকাশ আইনে থাকে না। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং সর্বশেষ উপধারা ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আইনগতভাবে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের হাতে নেই। সেই মতামতই আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। মতামত হচ্ছে ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে, দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেটির অতীতও শেষ হয়ে গেছে। এটি আর খোলার কোনো উপায় নেই। আইনমন্ত্রী আরও বলেছেন, উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন সরকার প্রয়োগ করে তখন আর সেটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে।

প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটি হচ্ছে এখন যে আদেশ আছে, সেটি যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে খালেদা জিয়াকে যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে আদালতে যেতে পারেন। বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়া আদালতে যেতে পারেন বলে কোনো সুযোগ নেই।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের দ্বিমত পোষণ করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থায় রেখেই তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়া যায়। আইনেও সে সুযোগ আছে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর ছয় মাস তা বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে ড. শাহদীন মালিক বলেন, আইনমন্ত্রী যে বলছেন আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, আইনে আর কিছু করার নেই। তাহলে আমার প্রশ্ন তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়ানো হলো কোনো আইনে? যদি ওটা নিষ্পত্তি হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তো তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৪০১ ধারায় বলা আছে, সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা শর্তহীনভাবে কারও দণ্ড মওকুফ বা স্থগিত করতে পারে। খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শর্ত হলো তিনি ঢাকায় চিকিৎসা করাবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। বর্তমানে তাকে শর্তহীনভাবে মুক্তি দেওয়া যায় বা বলে দেওয়া যায় তিনি যেখানে প্রয়োজন চিকিৎসা করাতে পারবেন। সেখানেও একটা শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, তিনি বিদেশে চিকিৎসা শেষে এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন। খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে গিয়ে আগের আদেশ বাতিল করে আবেদন করার দরকার নেই।

ড. শাহদীন মালিক অবশ্য বলেন, এটি করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নির্বাহী সিদ্ধান্ত হওয়ায় তা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন। ম্যান্ডেটরি নয়। তা না হলে সব আসামি বলবে আমাকে ছেড়ে দাও। কিন্তু খালেদা জিয়া বৃদ্ধ বয়সে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যেতে দিয়ে সরকার তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলে অভিমত এই আইনজীবীর।

সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, নির্বাহী আদেশে সরকার চাইলে অনুমতি দিতে পারে। চিকিৎসা সুবিধার জন্য বিদেশে যেতে পারেন। বেঁচেই যদি না থাকেন তাহলে বিচার করবে কার।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য সবাই প্রত্যাশা করছে যেহেতু উনি অসুস্থ, তাই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগটা দেওয়া উচিত। সেটা যেভাবেই করুক তা নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছার উপর। যেহেতু তিনি ২ বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বড় একটা রাজনৈতিক দলের প্রধান, সে কারণে উনাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া উচিত।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়া এখন নির্বাহী আদেশের যে অবস্থায় আছেন, তাতে করে আদালতে যাওয়ারও সুযোগ নেই। আমরা সরকারকে বলেছি, আপনারা আরও মানবিক হন। মানবিক হয়ে খালেদা জিয়ার জীবনকে বাঁচান। খালেদা জিয়ার পরিবার চাইলে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা চাইতে পারে।

বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত: প্রণয় ভার্মা

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে যে ৪০১ ধারায় শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেই ধারায়ই শর্তহীনভাবে মুক্তি দেওয়ার বিধান আছে। আইনমন্ত্রী আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে শর্তমুক্তভাবে মুক্তি দিলেই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন। কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার অনেক উদাহরণ আছে। জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রবও কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসা করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওয়ান-ইলেভেনের সময় নির্বাহী আদেশে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। কায়সার কামাল দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এটা করা হচ্ছে।

৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি এবং কিডনি সমস্যার কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।

One thought on “খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *