প্রবাসী

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ও যেভাবে পাবেন স্বপ্নের গ্রিন কার্ড

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ও যেভাবে পাবেন স্বপ্নের গ্রিন কার্ড

বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অঞ্চল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে এখানে জড়ো হন। তারা নিজেরা যেমন সেখানে স্থায়ী হয়েছেন, তেমনি তাদের পরের প্রজন্ম বড় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। গোটা বিশ্বের জিডিপির ২৫ শতাংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। একই অবস্থান ৪ দশকের বেশি সময় ধরে ধরে রেখেছে বহুজাতি অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই সব অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রভাব ও অবদান রয়েছে দেশটির ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি অভিবাসীক বা বিদেশিদের নিজ সংস্কৃতিতে যুক্ত করার অংশ হিসেবে দেয়া হয় স্থায়ী নাগরিকত্বসহ গ্রিন কার্ড। যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবে সারাজীবন বসবাসের অনুমতি দেয়।

প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মানুষ বৈধ উপায়ে আবার কেউ কেউ ভিন্ন পথে সাগর-নদী-জঙ্গল পেরিয়ে দেশটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। লাখো মানুষের কাছে স্বপ্নের দেশটির আমেরিকা। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতি আর চাকচিক্যময় জীবনের জন্য অনেকের আকাঙ্ক্ষিত এক গন্তব্যও দেশটি।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় ৭৬ হাজার ৩৯৮ ডলার। ৩৩ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার জনসংখ্যার দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় সাড়ে ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার যা গোট বিশ্বের ২৫ শতাংশের বেশি। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্যতা, নিপীড়ন-নির্যাতন, দুঃস্বপ্ন থেকে পালিয়ে বাঁচতে কিংবা স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমেরিকায় যান। অনেকেই বৈধ উপায়ে যাওয়ার নিয়মনীতি জানেন না।

২০০০ সালের পর থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বা অবৈধভাবে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী। এবং গত দুই দশকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।

যাবতীয় আইন মেনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি এবং সবশেষে সোনার হরিণ সেই গ্রিন কার্ড পাওয়ার মধ্যে দিয়ে কীভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া যায় তার সহজ ৬ টি উপায় এখানে দেয়া হয়েছে। আমেরিকায় বৈধ উপায়ে যাওয়ার খুঁটিনাটি নিয়ে তাদের জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন।

পরিবার-ভিত্তিক ভিসা:-
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অংশটি পরিবার-ভিত্তিক অভিবাসনের (ফ্যামিলি-বেইজড ইমিগ্রেশন) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে যান। যাদের পরিবারের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা তারা এই ভিসা পেতে পারেন। যার মধ্যে দিয়ে বিদেশি স্ত্রী/স্বামী বা বাগদত্তাকে স্পন্সর করতে পারে একজন মার্কিন নাগরিক এবং বৈধ/স্থায়ী বাসিন্দারা (লিগ্যাল রেসিডেন্ট)। সঙ্গে তিনি তার অবিবাহিত সন্তানদের আমেরিকায় আনার জন্যে স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। ২১ বছর বয়সী ভাই-বোন এবং তার মা-বাবার জন্যে তিনিও আবেদন করতে পারেন।

ওয়ার্ক ভিসা:-
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি উপায় হল ওয়ার্ক ভিসা যাকে কাজ বা চাকরির ভিসাও বলা হয়ে থাকে। নিয়োগকর্তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে না পান, তবে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন একজন বিদেশি কর্মীকে স্পন্সর করতে পারেন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। বিভিন্ন ধরণের ওয়ার্ক ভিসা রয়েছে। সেই নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাকে অবশ্যই নিজ জন্মভূমি বা উৎস দেশে ফিরে যেতে হবে। সিলিকন ভ্যালিতে সাধারণ যেখানে প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বেশি তাই এইচওয়ানবি ভিসার প্রচলন সেখান বেশি।

স্টুডেন্ট ভিসা:-
স্টুডেন্ট ভিসাধারীরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছুর সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখী হন। অভিবাসীদের জন্যে ২ ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা আছে। একটি এফ ভিসা একজন বিদেশীকে যুক্তরাষ্ট্রে একাডেমিক অধ্যয়ন অথবা ভাষা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো ভর্তির সুযোগ দেয়। আর এম ভিসা অ-একাডেমিক প্রোগ্রাম বা বৃত্তিমূলক অধ্যয়নের জন্য।

ভিসা লটারি:-
ডাইভারসিটি ভিসা লটারি প্রোগ্রাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অন্যতম আরেকটি উপায়। ফেডারেল সরকার প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে আবেদনকারী মধ্যে থেকে ৫০ হাজার জনকে ভিসা দিয়ে থাকে। সাধারণত এমন দেশ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিসা দেয়া হয় যেসব দেশের অভিবাসীর সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলক কম। বাংলাদেশ থেকে আপাতত ডিভি লটারি প্রোগামে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত

ইমিগ্রেন্ট ইনভেস্টর ভিসা:-
বিদেশী উদ্যোক্তা হিসেবে সেখানে কমপক্ষে ৫ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করতে হবে। আপনি যদি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হন আর যুক্তরাষ্ট্রে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের ইচ্ছা থাকে তবে সেখানে যাওয়া আপনার জন্য কোন ব্যাপারই না। আপনার প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ জন মার্কিন নাগরিককে পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ দিতে হবে। এই ২টি শর্ত পূরণ করতে পারলে আপনার হাতে চলে আসবে ইমিগ্রেন্ট ইনভেস্টর ভিসা।

আশ্রয় প্রার্থী:-
জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, বা নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীতে অংশগ্রহণ বা তাদের রাজনৈতিক মতামত ধারণ করার কারণে নিজ দেশে আপনি হুমকি বা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। আশ্রয় প্রার্থী (অ্যাসাইলাম সিকার) হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে হলে ব্যক্তিকে দেশটির প্রবেশমুখে কোন একটি বন্দরে উপস্থিত হতে হবে।

সেখানকার কর্মকর্তাদের এমন কিছু প্রমাণপত্র দেখাতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারেন নিজে দেশে আপনি আর নিরাপদ নন এবং যেকোন সময় নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পড়তে পারেন আপনি। এই পরিস্থিতিতে যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে এসে সুরক্ষা চাইলে তাকে শরণার্থী হিসেবে ভিসা দেয়া হতে পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করা যে কেউ আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে ভিসার আবেদন করতে পারেন।

আমেরিকায় ভিসা পাওয়ার বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ‘ইমপ্লয়মেন্ট-বেজড’ (ইবি) সিরিজ। যারা আমেরিকায় স্থায়ীভাবে চাকুরির ভিসা পেতে আগ্রহী তারা ইবি সিরিজের ১ থেকে পাঁচ পর্যন্ত ক্যাটাগরি গুলোতে আবেদন করতে পারবেন।

2 thoughts on “যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ও যেভাবে পাবেন স্বপ্নের গ্রিন কার্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *