হিমছড়িতে নতুন পর্যটন স্পট বন বিভাগের
হিমছড়িতে নতুন পর্যটন স্পট বন বিভাগের
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের রামুর হিমছড়ির এই পর্যটন স্পটকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে তদারকি সংস্থা কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ। পর্যটন স্পট হিমছড়ি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা, সুউচ্চ পাহাড়চূড়া থেকে সাগরের বিশালতা দেখে বিমুগ্ধ হন পর্যটকরা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হিমছড়ি বিট ও টহল ফাঁড়ি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বন বিভাগের এই জায়গাটি কলাতলী ও হিমছড়ি মধ্যবর্তী। মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ পূর্ব দিকে কৃত্রিম লেক, ক্যাকটাস, অর্কিডসহ নানান সবুজ গাছে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলবে। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের অধীনে মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ঢুকার মুখেই সড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে দৃষ্টি নন্দন পার্ক (নতুন পর্যটন স্পট)। সড়কের পাশে পরিত্যক্ত প্রায় ৬ একর জায়গা নিয়ে পর্যটকদের জন্য অর্কিড ও ক্যাকটাস হাউস, পাবলিক টয়লেট (গণশৌচাগার), নতুন পর্যটন স্পটে পিকনিক পার্টি এলে তাদের রান্নার সুব্যবস্থাসহ সকল সুবিধায় পরিপূর্ণ বিনোদন স্থান করা হচ্ছে এটি।
পার্কের ঢুকলেই নজরে আসে সুউচ্চ পাহাড় চূড়া। এর পাদদেশে দক্ষিণে রয়েছে আঁকাবাঁকা লেক (হ্রদ)। লেকের চারপাশে হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে বসেই সুশীতল হওয়ায় পর্যটকরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পরিবেশ প্রেমী পর্যটকদের জন্য গড়া হচ্ছে ক্যাকটাস ও অর্কিড় হাউস। নতুন পার্কের বিশাল ফটক, বাউন্ডারি সম্পন্ন হয়েছে। থাকবে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস ও অর্কিড, পাশাপাশি লাগানো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, গর্জন, তৈলসুর, গামারী, ঝাউ, রাঁধাচূড়া, জারুল, পলাশ, স্যাতকাঞ্চন, বকুলফুল, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
পর্যটন উদ্যোক্তা ও হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়তে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন যজ্ঞের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বনবিভাগও হিমছড়িতে নির্মিতব্য নতুন পার্ক, পর্যটন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিবে যাবে আশা করা যায়।
সবাই আমাকে বাংলাদেশ বলেই ডাকবে
টুয়াক সভাপতি ও ইউনিভার্সেল ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী বলেন, সুদীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পশ্চিমে নীল জলরাশির পূর্ব দিকে সবুজ বনের সম্মিলন সবাইকে বিমোহিত করে। হিমছড়ি, ইনানী ছাড়া সড়কটির অন্য কোথাও তেমন কোনো বিনোদন পার্ক গড়ে না উঠায় শহরের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটক ও দর্শনার্থীর ভিড় জমে। সৈকতের বেলাভূমি, সাগরে গোসল ছাড়া ঘোরার জায়গা না থাকায় পর্যটকরা ১/২ দিন থেকে চলে যান। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সঙ্গে নতুন পর্যটন স্পট গড়ে উঠলে পর্যটকরা হিমছড়ি-ইনানীর দিকে আরও ধাবিত হবে। শহরের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে বেলাভূমিতে চাপ কমবে পর্যটকের। আয় বাড়বে পর্যটন খাতে।
হিমছড়ি বন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বলেন, পাখি প্রেমীদের জন্য হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। নানা প্রজাতির পাখির মধ্যে ময়না, ফিঙ্গে ও তাল বাতাসি উল্লেখযোগ্য। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান গড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো- গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। এই রক্ষিত বনাঞ্চলে হাতিসহ মায়া হরিণ, বন্যশূকর ও বানরের দেখা মিলে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী। হিমছড়ি বনাঞ্চল উল্লুকেরও আবাসস্থল। হিমছড়িসহ আশপাশে অনেক পর্যটন স্পট দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে। ধীরে ধীরে হিমছড়ি অনেক সংস্কার হয়েছে। সাগর, পাহাড় ও কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌর্ন্দর্য অতি সহজে উপভোগ করা যায় কয়েক শ’ সিঁড়ি বেয়ে পাহাড় চূঁড়ায় উঠে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীনতা উত্তর সময় হতেই কক্সবাজারের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করে এসেছে বনবিভাগ। হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে সৈকত তারই নিদর্শন। নতুন পর্যটন স্পটটি তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গেইট, বাউন্ডারী ওয়াল, ভেতরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ শেষ পর্যায়ে। সব থেকে আকর্ষণীয় হবে এখানকার পাহাড়ের পাদদেশে লেকটি। লেকেটিতে পর্যটকরা প্যাডেল চালিত বোট নিয়ে ঘুরার ব্যবস্থা থাকছে।
কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন বিদ্যা বালান
তিনি আরও বলেন, সুন্দর একটি স্পটে বনবিভাগের প্রশিক্ষণার্থীরা যেন প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এখানে বন বিভাগের জন্য প্রটেক্টেড এরিয়া ম্যানেজমেন্ট সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে এ পর্যটন স্পটকে পর্যায়ক্রমে আরও সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, এই জায়গা নিয়ে আমরা একটি মাস্টারপ্লান করেছি। আবাসন প্রকল্প, সেমিনার হলসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে এখানে। সেই হিসাবে এই স্পটে ইক্যু টুরিজ্যম, বনবিভাগের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিদের সভা সেমিনার ও থাকার জন্য আবাসন থাকবে। এটি পার্ক কাম প্রটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট সেন্টার হিসাবে থাকবে।
এটি শুধু বন বিভাগের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সবাই সরকারি ফি দিয়ে এই সেন্টারের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। আর তাতে পর্যটন উন্নয়নে সহায়ক হবে আবার রাজস্বখাতও সমৃদ্ধ হবে।