শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রীর এপিএসের বাসায় অভিযান ভয়ংকর মাদক এলএসডির জন্য
শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রীর এপিএসের বাসায় অভিযান ভয়ংকর মাদক এলএসডির জন্য
কুরিয়ারে নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকায় আসা একটি পার্সেলে ছিল ভয়ংকর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড)। মাদকের এই চালান আটকের পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মফিজুর রহমানের সরকারি বাসায় অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সোমবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরের মফিজুর রহমানের সরকারি বাসায় অভিযানে মাদকসহ মফিজুরের শ্যালক ইব্রাহিম কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইব্রাহিমের বন্ধু ফারদিন খান ও আজরাফ আহমেদকে (ওজি) গ্রেপ্তার করা হয় এই অভিযানে ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুর রহমানের শ্যালক তাঁর সঙ্গে শেরেবাংলা নগরের সরকারি বাসায় থাকেন। সেখানে বসেই বন্ধু আজরাফ ও ফারদিনের মাধ্যমে এলএসডি মাদক কেনাবেচার চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন ইব্রাহিম কিবরিয়া। এলএসডিতে আসক্ত তাঁরা তিনজনই। কর্মকর্তারা জানান, ইব্রাহিমের বন্ধু ফারদিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় থাকেন আর আজরাফ গান করেন।
অভিযানের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ রিফাত হোসেন আজ বৃহস্পতিবার বলেন, এলএসডিসহ গ্রেপ্তার করা হয় ফারদিনকে। গুলশান থেকে আজরাফ ও শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুরের বাসা থেকে তাঁর শ্যালক ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয় ফারদিনের তথ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু ইব্রাহিম ও আজরাফের কাছে এলএসডি পাওয়া যায়নি। তাঁদের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এলএসডি উদ্ধারের ঘটনায় ইব্রাহিমের বন্ধু ফারদিনকে আসামি করে পল্টন থানায় গত মঙ্গলবার একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় ফারদিন এখন কারাগারে। আর ইব্রাহিম ও আজরাফের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার দেখানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক দিন করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয় তাঁদেরকে।
তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার বলেছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, এলএসডি মাদক উদ্ধার হলে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। কিন্তু নেদারল্যান্ডস থেকে আসা এলএসডির চালানের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল থেকে ইব্রাহিম ও আজরাফকে ছাড়িয়ে নিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়া হয়। সে কারণে তাঁদের ২ জনকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাসায় অভিযান ও শ্যালককে মাদকসহ গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে জানতে মফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি, বার্তা পাঠিয়ে তাঁর বাসা থেকে মাদকসহ শ্যালককে গ্রেপ্তারের বিষয় বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিদর্শক ইকবাল আহমেদ পার্সেল মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা এলএসডি উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার পল্টন মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার তোপখানা রোডের বৈদেশিক ডাক অফিসের বৈদেশিক পার্সেল শাখায় গত ৮ মে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে একটি পার্সেল আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ৯ মে পার্সেলটি তল্লাশি করে ১ টি হলুদ রঙের কাগজের ভেতরে ফয়েল প্যাকেটে ২৫ টি এলএসডি উদ্ধার করা হয়। এই পার্সেলে প্রাপকের নাম লেখা ছিল ফারদিন খান। ঠিকানা ছিল দক্ষিণ বাড্ডা, কাঁচাবাজার।
ফারদিনকে ধরতে ডাক বিভাগের গুলশান শাখায় গত সোমবার অভিযানে যায় গোয়েন্দা দল। ফারদিন না এসে পার্সেল সংগ্রহ করতে পাঠান আজরাফকে। আজরাফকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আটক করেন। কৌশলে ফারদিনকে গুলশানে ডেকে এনে তাঁকেও আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেন, এলএসডি কেনাবেচায় শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুরের শ্যালক ইব্রাহিম জড়িত। আরও এলএসডি পাওয়া যাবে তাঁর বাসায়। তারপর মফিজুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ইব্রাহিমকে আটক করা হয়।
কূটনীতিকদের নিরাপত্তা চূড়ান্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান ২০২১ সালের ১৫ মে, নিজের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেশে এলএসডির অস্তিত্ব থাকার কথা প্রথমবারের মতো জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্তে বেরিয়ে আসে, হাফিজুরের ৩ বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় তাঁকে এলএসডি সেবন করান। এর পর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শর্টস পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কৃত্রিম মাদক এলএসডি, যা পরীক্ষাগারে তৈরি। মাদকটি খুবই ভয়ংকর এবং দেশে অপ্রচলিত। এই মাদকের উৎস ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। এ ধরনের মাদক মনের ওপর প্রভাব ফেলে, কখনো কখনো ভীতিকর অনুভূতি তৈরি করে, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।