কবি পাগলা কানাই’র ২১৩ তম জন্মজয়ন্তী উৎসব শুরু…
শত শত গানের মরমী লোক কবি পাগলা কানাইয়ের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
# আরব দেশে মানব বেশে
এলো একজনা
যার পরশে লোহা ঘসলে রে হয়ে যায় সোনা।
# জিন্দা দেহে মুরদা বসন
থাকতে কেন পরনা
মন তুমি মরার ভাব জান না
মরার আগে নামরিলে পরে কিছুই হবে না
আমি মরে দেখেছি
মরার বসন পরেছি
কয়েকদিন বেঁচে আছি
তোরা দেখবি যদি আয় পাগলা কানাই বলতেছি।
কবির মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গত ১১ মার্চ জেলা পরিষদের সচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজিবুল ইসলাম খান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুর রশীদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন এর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান চলবে ১৬ মার্চ পর্যন্ত। সদর উপজেলার বেড়বাড়ী গ্রামের পাগলাকানাই সমাধিস্থলে উৎসবের শেষ দিনেও চলবে পাগলা কানাইয়ের লেখা অনেক সংগীত।
পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ কর্তৃক আয়োজিত ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই জন্মজয়ন্তী উৎসব কবি পাগলাকানাই একজন প্রতিভাধর লোককবি ছিলেন। লোক-সাধনা ও মরমী সঙ্গীতের ঐতিহ্য মন্ডিত উর্বর ভূমি ঝিনাইদহের সন্নিকটে লেবুতলা ”মতান্তরে” বেড়বাড়ী গ্রামে ১৮১০ সালের ৯ মার্চ বাংলা ১২২৬ সালের ২৫ ফালগুন মাসে তিনি জম্মগ্রহণ করেন। কুড়ন-মোমেনার তিন সন্তানের মধ্যে কানাই ও উজ্জল দু পুত্র এবং স্বরনারী ”মতান্তরে” সরনারী এক কন্যা। ছোটবেলা থেকেই পাগলা কানাই দুরন্ত প্রকৃতির পাগলাটে স্বভাবের এবং আধ্যাত্ম প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। খেয়ালীপনার জন্যে শৈশবে স্মেহবশতঃ লোকে তার নামের সাথে পাগলা উপাধিটি যুক্ত করে। তার কর্মকীর্তির সাথে এ পাগলা উপাধিটি অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত হয়েছে। বাল্যকালে পিতৃহারা হওয়ায় তিনি হয়ে ওঠেন ভবঘুরে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কানাইয়ের লেখাপড়াও শেখা হয়নি। পিতার মৃত্যুর পর পাগলা কানাই লেবুতলা থেকে এসে কালীগঞ্জের ভাটপাড়া গ্রামে কিছু দিন অবস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে হরিণাকুন্ডুর বলরামপুর ভরম মন্ডলের বাড়ী কিছু দিন রাখালের কাজও হিসেবে করেছেন পরে ভগ্নী স্বরনারীর শ্বশুরালয় বেড়বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ বেড়বাড়ী গ্রামই প্রকৃত পক্ষে কানাইয়ের কীর্তিধারিণী বলে পরিচিত। গরু চরানো কাজ নেন বোনের বাড়িতে তার তিনি গরু চরাতে গিয়ে জারীগান গাইতেন এবং উপস্থিত সবাই তার সঙ্গীত মুগ্ধ হয়ে শুনত। এভাবে ধুয়োজারীতে তার হাতে খড়ি হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে তার কোন সঙ্গীত শিক্ষা না থাকলেও এখানকার তৎকালীন বাউল, সাধু-ফকির প্রভৃতি গুণীজনের পদচারণা সর্বোচরি জীবন ও জগত সম্পর্কে কবি আত্মার আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আত্ম-অন্বেষণ তাকে প্রখর আধ্যাত্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ করে তোলে। তার গানে ইসলাম ও আল্লাহর প্রিয় নবীর প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ পায়। পাগলা কানাই নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি ও মেধা ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে একের পর এক গান রচনা করতে পারতেন। এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য প্রায় ১৫ শত সংগৃহীত হয়েছে। ড. মাযহারুল ইসলাম, মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, আবু তালিব. আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গা দাস লাহিড়ী ও উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য পাগলা কানাইয়ের গানের সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন। এ মহান মরমী লোক কবি ১৮৮৯ সালের ১২ জুলাই ইহলোক ত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও অতিথিবৃন্দের পাগলা কানাইয়ের জীবনীর উপর আলোচনা, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, চিত্রাঙ্কন, বই পাঠ, সংগীতানুষ্ঠান ও লোকনৃত্য প্রতিযোগিতা, পাগলাকানাই রচিত গানের প্রতিযোগিতা, পাগলা কানাইয়ের জীবনীর উপর উপস্থিত বক্তৃতা, কৌতুক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ এর মধ্যে ৬ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান চলবে।