সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে বলছেন অলৌকিক পাতা, আসলে সজনে পাতাকে এখন বলা হচ্ছে এত কিছু থাকতে সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হচ্ছে কেন? সজনে পাতার যে ফুড ভ্যালু খাদ্যমান, এর নিউট্রিশন পুষ্টি, এর কনটেন্ট যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। সে কারণেই বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, সময়ের একটি অলৌকিক পাতা হচ্ছে সজনে পাতা।
মৌসুমে পাতে নিয়মিতই সজনে রাখেন অনেকে, পরিণত বয়সী বাংলাদেশিদের মধ্যে সজনের ডাটা বা সজনে শাক খাননি এমন মানুষের সংখ্যা আর কত হবে। কিন্তু তাদের সবাই কি জানেন সজনে কতটা উপকারী? কীভাবে খেতে হয় সেটিও হয়তো জানানেই অনেকের।
অলৌকিক পাতা:
সুপারফুড সজনে পাতা। এ সময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি গবেষণা। সেটি হচ্ছে সজনে পাতার নাম তো আমরা ছোটকাল থেকেই শুনেছি। সজনে খেতে খেতে বড় হয়েছি। সজনে পাতার ভর্তা খেয়েছি, শাক খেয়েছি। এ আবার এমন কিছু কী এর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে যেটা নিয়ে আলোচনা। আসলে সজনে পাতাকে এখন বলা হচ্ছে অলৌকিক পাতা। বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে বলছেন অলৌকিক পাতা। এত কিছু থাকতে সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হচ্ছে কেন? সজনে পাতার যে ফুড ভ্যালু {খাদ্যমান}, এর নিউট্রিশন {পুষ্টি}, এর কনটেন্ট যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। সে কারণেই বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, এ সময়ের একটি অলৌকিক পাতা হচ্ছে সজনে পাতা।
কী আছে সজনে পাতায়:
সজনে পাতায় আমিষ ২৭ শতাংশ আছে । এক কেজি সজনে পাতা যদি আপনি খান, তাহলে এর ২৭ শতাংশ, মানে ২৭০ গ্রাম হচ্ছে আমিষ পাচ্ছেন। ৩৮ শতাংশ হচ্ছে শর্করা (কার্বোহাইড্রেট)। ফ্যাট হচ্ছে ২ শতাংশ, ১৯ শতাংশ আছে ফাইবার বা আঁশ। আমরা জানি যে, এখন ফাইবার বা আঁশকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আঁশ কোনো ঐচ্ছিক খাবার নয় যে, ইচ্ছা হলে খেলাম ইচ্ছা না হলে খেলাম না। ইট ইজ অ্যা ম্যান্ডাটোরি কম্পোনেন্ট {এটা আবশ্যিক উপাদান}। প্রত্যেক দিন আপনার খাদ্যতালিকায় যেন পর্যাপ্ত আঁশ থাকে এবং সেই সজনে পাতায় আছে ১৯ শতাংশ।
অ্যামাইনো অ্যাসিডের উৎস:
অনেকগুলো নিউট্রিয়েন্ট থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, সজনে পাতা একটি অলৌকিক পাতা। সজনে পাতায় অ্যাসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে আটটি। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি আছে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
দুধের সমান পুষ্টি:
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরুর দুধের পুষ্টি এবং সজনে পাতার পুষ্টি অলমোস্ট কাছাকাছি। সজনে পাতা যদি তুলনা করেন কোনো খাবারের সাথে, তাহলে আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খাবারের সাথে তুলনা করতে পারি। সেটি হচ্ছে গরুর দুধ। আমরা উপমহাদেশে বা বাংলাদেশে গরুর দুধ কেন খাই, কিসের জন্য খাই মূলত কী লক্ষ্যে খাই গরুর দুধ আমরা খাই মূলত ক্যালসিয়ামের জন্য, প্রোটিনের জন্য, আমিষের জন্য। গরুর দুধ খেয়ে আমরা বলি, এটা একটা সুষম খাবার। গরুর দুধ এবং সজনে পাতার মধ্যে পুষ্টিগত কোনো পার্থক্য নাই। গরুর দুধে যা আছে সজনে পাতাতেও তা আছে। যে লক্ষ্যে আমরা মূলত গরুর দুধ খাই সে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে সজনে পাতায়। পর্যাপ্ত আমিষও আছে সজনে পাতায়।
ঔষধি গুণ:
আমরা এক্সপেরিমেন্ট করেছি। যাদের হাঁটু ব্যথা আছে, সজনে পাতার জুস খান। সজনে পাতার কিছু ঔষধি গুণ আছে এবং ঔষধি গুণের কারণে আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে এটি দারুণ কার্যকর। সজনে পাতার ভর্তা খান অথবা গুঁড়া খান। ছয় মাস খান। দেখেন আপনার আর্থ্রাইটিসের কী অবস্থা হয়। শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে সজনে পাতা। আমরা জানি যে, আমাদের শরীরে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। প্রত্যেকটা কোষের ভেতরে লক্ষাধিক রিঅ্যাকশন হয় প্রত্যেক দিন প্রতি মুহূর্তে এবং এই লক্ষাধিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বিক্রিয়া হতে গিয়ে ভয়াবহ কিছু টক্সিন, কিছু ক্ষতিকর পদার্থ সেলের ভেতরে তৈরি হয়ে জমে থাকে, এগুলোকে আমরা বলি বর্জ্য পদার্থ, টক্সিন, ফ্রি রেডিক্যাল। এগুলো যদি সেলের ভেতরে থেকে যায়, আপনি কোনো দিন সুস্থ থাকতে পারেনা। আপনাকে কেউ সুস্থ করতেও পারবেন না।
এই বর্জ্য পদার্থকে বের করার জন্য আপনি সজনে পাতা খেতে পারেন। এটা দারুণ একটা ডিটক্স হিসেবে কাজ করতে পারবে ও আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাই করবে। আপনারা আমরা সবাই জানি, বিশ্বব্যাপী এই ডিটক্স প্রোগ্রামগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সজনে পাতা সেই কাজটা করতে আপনাকে সাহায্য করবে যা আপনার ভেতরের বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে দেবে। ৭ দিন /১৫ দিন আপনি একটা বিশেষ প্রোগ্রাম ফলো করবেন, বিশেষ এই খাবার টা খাবেন, আপনার শরীরে অভ্যন্তরের জমানো বর্জ্য পদার্থগুলো বেরিয়ে যাবে।
কীভাবে খাবেন সজনে পাতা :
আমরা বলি যে, ফুল সিজনে সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে আপনি জুস করে খান। কিছু সজনে পাতা নিন। ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে এটাকে ব্লেন্ডারে নিন কিছু পানি, টেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু জিরা গুঁড়া, একটু বিট লবণ দিতে পারেন। ভালো করে ব্লেন্ড করেন ছেকে নিন। ছেকে নিয়ে খাওয়ার সময় একটু মধু দিয়েও খেতে পারেন। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুসটি আপনার খাওয়া হয়ে গেল। আর যদি আপনার জুস বানাতে ঝামেলা হয় অথবা সব দিন যদি জুস খেতে না পারেন, ভর্তা খান, হে তবে এটা কাচা হলে বেস্ট। আপনি যখন সিদ্ধ করলেন এর যে নানাবিধ যে উপাদানগুলো আছে, এগুলো নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। সে জন্য কাচা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে এটাকে টেস্টি করার জন্য আপনি আদা দেন, মরিচ দেন, রসুন দেন, পেঁয়াজ দেন, যা যা দিলে টেস্টি হয়, দেন। তারপর আপনি খান সিজনে। অফ সিজনে গুঁড়া। সজনে পাতাকে আপনি সিজনে ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন। ছয় মাস এটা চমৎকার থাকবে এবং এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা যথেষ্ট আপনার পুষ্টির জন্য। তাই আমরা বলব যে, নিজের দেশের এই অ্যাভেইলেবল এই পাতাটিকে অবহেলা করবেন না।
আজ না হলে কাল থেকে শুরু করুন। সিজনে আপনি গুড়ো সংগ্রহ করুন। অফ সিজনে প্রতিদিন এক চামচ সকালে, এক চামচ রাত্রে। ছয় মাস পর আপনি আপনার স্ট্রেংথ, আপনার কর্মক্ষমতা দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন।
Balo & Right Information
ধন্যবাদ আপনাকে
🥦🧄🥦🧄🍐🍏🍏🍈
Thank U.