কিডনিতে পাথর হলে কি ব্যায়াম করতে হবে
কিডনি আমাদের শরীরকে পরিষ্কার করে। প্রতি দিন সঠিক মাত্রায় পানি পান না করেন তবে ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। কিডনিতে পাথর বিকাশের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের অবদান অনেক। বদলে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এমন সবজি খান। মধ্যম মানের ব্যায়াম করা কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।
কিডনিতে পাথর হলে কি ব্যায়াম করতে হবে
অনিয়মিত জীবন, পানি কম খাওয়া, অতিরিক্ত লবন এবং আমিষ খাবার খাওয়া এর কারণে আজকের দিনে কিডনিতে পাথরের সমস্যা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রকোপের বাইরে নন অল্পবয়সিরাও। মনে রাখতে হবে, কিডনি আমাদের শরীরকে পরিষ্কার করে। তাই প্রতি দিন সঠিক মাত্রায় পানি পান না করেন তবে ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যাঁদের একবার কিডনিতে পাথর হয়, তাঁদের আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
কিডনি পাথর কী?
কিডনির ভেতরে মিনারেল জমে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মতো পদার্থ তৈরি করে, যাকে আমরা কিডনি পাথর বলি। অর্থাৎ এই রোগের উৎপত্তি হয় ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের ডিপোজিশনে।
আরও পড়ুন: খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা
এই রোগের লক্ষণ:-
# বমি বমি ভাব ও কখনও কখনও বমি হওয়া।
# তলপেটের নিচে এবং কুঁচকিতে ব্যথা হওয়া।
# দুর্গন্ধ ও ফেনার মতন প্রস্রাব।
# পাঁজরের নিচে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া বা এই ব্যথার তীব্রতা উঠা নামা করে।
# বারবার প্রস্রাব পাওয়া ও প্রস্রাব করতে গেলে ব্যথা হওয়া, এবং স্বাভাবিকের তুলনায় প্রস্রাব বেশি পরিমাণে হওয়া বা কালচে লাল, লাল কিংবা বাদামি রঙের প্রস্রাব হওয়া।
কী করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় দেখে নিন…
পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান:- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দিনে অন্তত ৩ লিটার পানি পান করুন। গরমের সময় আরও বেশি পরিমাণ পান করতে হবে। শরীরের যাবতীয় টক্সিন কিডনিতে গিয়ে পানির মাধ্যমে ধুয়ে তা প্রধানত মূত্র রূপে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করলে কিছু টক্সিন কিডনিতেই থেকে যায়। তবে একবারে বেশি পানি পান করবেন না। এতে ক্ষতি হয়। কিডনিতে পাথর বিকাশের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের অবদান অনেক। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা কিডনিতে পাথর নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার:- মনে করা হয় ক্যালসিয়াম জমা হয়েই কিডনিতে পাথর তৈরি হয়, এটা আংশিক সত্যি। তবে এটা নয় যে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হবে। কিন্তু যদি না খান তা হলে এর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। প্রাকৃতিক ভাবে খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নয়।
নুন বা লবন কমিয়ে দিন:- বেশি মাত্রায় লবন খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নুন বা লবনে থাকা সোডিয়াম কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
নিরামিষ খান বেশি বেশি:- ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কিডনিতে পাথর হয়েছে বিশেষত তাঁরা আমিষ খাওয়া একেবারে কমিয়ে ফেলুন। রেড মিট, পোলট্রি জাতীয় খাবার, সামুদ্রিক খাবার এবং ডিম খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। বদলে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এমন সবজি খান। মনে রাখবেন দিনে ১০০ গ্রামের বেশি কখনই খাবেন না। এগুলো কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে। ওজনাধিক্য, চর্বি জাতীয় খাবার, পরিশোধিত চিনি এবং কম পানি পান সব কিডনির উপর চাপ ফেলে।
মদ্যপান বন্ধ করুন:- অ্যালোকোহল বেশি শরীরে গেলে পিউরিন লেভেল বেড়ে যায় তাই যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড পাথরের সমস্যা রয়েছে তাঁরা মদ্যপান বন্ধ করে দিন বা একেবারে কমিয়ে ফেলুন।
ব্যায়াম করুন:- কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় প্রতি দিন ব্যায়াম করলে আমেরিকা সোসাইটি অব ন্যাপ্রোপ্যাথি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ২০১৪ সালের বলা হয়, মধ্যম মানের ব্যায়াম করা কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন ব্যায়াম করা ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ করে এতে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম শরীরকে ভালো রাখে।
পাশাপাশি কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারেরও চেষ্টা করতে পারেন।
আসুন জেনে নিই ঘরোয়া উপায়ে কিডনি পাথর দূর করবেন কীভাবে:–
আরও পড়ুন: কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম
## অন্তত দিনে দুবার করে তুলসীর রস খান ও তুলসীর পাতা দিয়ে চা করেও পান করতে পারেন। তুলসী পাতায় থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনির পাথরকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
## ডালিম রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর বা অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিনে কতবার এটি পান করবেন তা ঠিক করুন।
## রোজ সকালে পানির সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশ্রিত করে পান করুন বা দিনের যেকোনো সময়ে লেবুর রস পান করুন। পাতিলেবুর রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড যা ক্যালসিয়ামজাত পাথর তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ছোট পাথরগুলোকে ভেঙে বের করে।
## আপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে পান করুন, এই আপেল সিডার ভিনিগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর দূর করে এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
## এক কাপ ফোটানো পানিতে ১/২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজ দিন এটি প্রতিদিন পান করুন। মেথি বীজ কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বীজগুলো কিডনিতে জমাকৃত পাথর হ্রাস করে এবং কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।
## গবেষণা অনুযায়ী, কালিজিরার বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন গঠনে উল্লেখযোগ্য ভাবে বাধা দেয়। ২৫০ এমএল গরম পানিতে হাফ চা চামচ শুকনো কালিজিরা বীজ দিন। এটি দিনে ২ বার পান করুন।
মন্তব্য:- যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কেননা প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে।
Pingback: চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা - amaderkhabar