রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: আক্রান্ত জাহাজের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে বাংলাদেশ…
ইউক্রেনে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পরিত্যক্ত বাংলার সমৃদ্ধির জাহাজের বিপরীতে প্রায় সোয়া দুই কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর মো. জিয়াউল হক বলেন, সোমবার আমাদের দপ্তরের থেকে ক্ষতিপূরণের কাগজপত্র সই করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়ে যাব। ওই আক্রমণে হাদিসুর রহমান নামের এক বাংলাদেশি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার প্রাণ হারান। বাকিদের জাহাজ থেকে উদ্ধার করা হয়। বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর জিয়াউল হক আরও বলেন, আক্রমণে নিহত হাদিসুর রহমানের পরিবারকে সাড়ে চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু যুদ্ধ আক্রান্ত এলাকা হওয়ায় জাহাজটি উদ্ধার করা যায়নি। তাই আমরা জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করি। কর্মকর্তারা বলছেন বিএসসির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো জাহাজ যুদ্ধাঞ্চলে গিয়ে আক্রান্ত ও পরিত্যক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে ঋণের টাকায় কেনা নতুন এই জাহাজ পরিত্যক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক বড়ো ক্ষতি।
লন্ডনভিত্তিক বীমা প্রতিষ্ঠান বিজলী সিন্ডিকেটস বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে এই অর্থ প্রদান করছে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত বছর ২ মার্চ রাতে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে রকেট আক্রমণের শিকার হয় বাংলার সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। ২০১৮ সালের অক্টোবর চীনা ঋণে আড়াই কোটি ডলারের বেশি দামে কেনা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি বিএসসির বহরে যুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে। বর্তমানে নিজস্ব জাহাজের সংখ্যা সাত। এরপর আর কোনো জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়নি। এই সাত জাহাজের মধ্যে পাঁচটিই চীনা ঋণে চীনের কাছ থেকে কেনা বলে বিএসসি’র ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কমোডোর আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি পরিত্যক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। এই জাহাজগুলো বিদেশি ঋণে কেনা। বাংলাদেশকে এই জাহাজগুলোর বিপরীতে সুদ এবং আসল দুটিই ফেরত দিতে হবে। এবং একটি জাহাজের বিপরীতে ঋণ পেতে অনেক সময় লাগে ও একটি জাহাজ নির্মাণ করতে কয়েক বছর লেগে যায়।
প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন করেনি রুশ সরকার ইউক্রেনের বন্দরে থাকা বাংলাদেশের ওই জাহাজে কে হামলা করেছে সে ব্যাপারে তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকারকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়া এই জাহাজে আক্রমণের কথা অস্বীকার করেছে। আবার ইউক্রেন এই আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে। কিন্তু সেই তদন্ত পরিচালনা করা হয়নি। আমাদের পক্ষেও সেখানে গিয়ে তদন্ত করা সম্ভব নয়। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার দিনেই বাংলার সমৃদ্ধি কার্গো জাহাজটি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে নোঙ্গর করে। সেখান থেকে সিরামিক ক্লে ভরাট করে ইটালি যাওয়ার কথা ছিল। জাহাজটি ভাড়া করেছিল ডেল্টা কর্পোরেশন ডেনমার্ক ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ।
কমোডোর আরিফুল ইসলাম বলেন রাশিয়া সরকারের উচিত এই বিষয়টি তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকারকে প্রকৃত ঘটনা জানানো।আমি মনে করি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাহাজটিকে ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। এ ব্যাপারে বিএসসি’র আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলেন মনে করেণ আরিফুল ইসলাম।