আয়না আবিষ্কার হাজার বছর আগে…
এমতো নয় যে আয়না আবিষ্কার করার আগে মানুষ নিজের মুখ দেখতে পারতো না। মানুষ আয়না আবিষ্কারের আগে জলে নিজের মুখ দেখতো। জলে মুখের ছায়া পরিষ্কার দেখা যায় না যার ফলে জলে নিজেকে দেখে মেকআপ বা সাজগোজ করা সম্ভব সহজে হতোনা।
জার্মান রসায়ন বিজ্ঞানী জাস্টাস ফন লিবিগ প্রথম ১৮৩৫ সালে, কাঁচ আবিষ্কার করেছিলেন। বিজ্ঞানী জাস্টাস ফন লিবিগ কাচের একটি পাতলা পৃষ্ঠে ধাতব রূপার একটি পাতলা স্তর প্রয়োগ করে একটি কাচ তৈরি করেছিলেন। এই কাচের তৈরি জিনিসে মুখ স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছিল এবং এর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করা সোজা হয়ে উঠেছিল আর এই ভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল আয়না।
ধনী ব্যক্তিরা অর্ডার করে নিজেদের জন্য আয়না তৈরি করাতো। কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তিরা আগের মতোই জলকেই আয়না হিসাবে ব্যবহার করতো। ঐ সময়ে মেটালিক সিলভার দ্বারা তৈরি আয়না শুধুমাত্র ধনী ও বড় বাড়ির লোকেরা ব্যবহার করত। প্রাচীনকালের লোকেরা আয়নাকে একটি যাদুকরী জিনিস বলে মনে করত। আনুষ্ঠানিক ভাবে আয়না আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৩৫ সালে, কিন্তু মানুষ তার আগেও আয়না ব্যবহার করত। ধরা হয় যে আজ থেকে প্রায় আট হাজার বছর আগে এনাটোলিয়া অর্থাৎ বর্তমান তুরস্ক ও মেক্সিকোর মতো দেশে আয়না ব্যবহার প্রচলন ছিল। সেই যুগের আয়না গুলো কিন্তু সঠিক চেহারা দেখানোর জায়গায় কেমন অদ্ভুত ধরণের চেহারা দেখতো। তারা মনে করতো যে আয়নার সাহায্যে তারা তাদের দেবতা, দেবী ও পূর্বপুরুষদের যোগাযোগ করতে পারে। সেই যুগের মানুষ আয়নায় তাকাতো তাদের মুখ দেখার জন্য নয় বরং তাদের দেবতা ও পূর্বপুরুষদের সাথে দেখা করার জন্য। সময়ের সাথে সাথে মানুষ আয়নার ব্যবহার শিখে গেলেও দরিদ্র শ্রেণির কাছে আয়নার ব্যবহার দীর্ঘকাল সময় ধরে অস্পৃশ্যই ছিল।
যে ব্যক্তি প্রথম আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিল তার নাম ছিল তেবেলে। ইনি একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ ছিল। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর ১৮৩৫ সালে এমন একটি আয়না তৈরি করা হয় যাতে মুখমণ্ডল স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে দেখা যাচ্ছিল। প্রথম শতাব্দীতে রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার কাঁচের দ্বারা আয়না তৈরির পদ্ধতি ব্যাপারে লিখেছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে আয়না তৈরি করায় তাতে মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল ও আকার আয়তনে ছোট দেখছিল। তেবেলের পরে দ্বিতীয় যেই ব্যক্তি আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলেন তিনি ছিলেন গোষ্ঠীর প্রধান। তার নাম ছিল পুয়া। আয়নাকে পুয়া গোষ্ঠীর জন্য ও বংশের জন্য বিপজ্জনক বস্তু মনে করেছিল যার কারণে তিনি আয়নাকে ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন। পুয়া তার মুখ আয়নায় দেখার পর আনন্দে পাগল হয়ে গেছিলেন সে আয়নায় তাকিয়ে বিভিন্ন ধরণের অঙ্গি-ভঙ্গি করতে শুরু করেছিল।
১০০০ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় পাথর পালিশ করে আয়না তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু সেটায় অস্পষ্ট চিত্র দেখা যেত। মিশর ও মেসোপটেমিয়াতে তামাকে পলিশ করে আয়না হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই জায়গাটি আজ ইরাক নামে পরিচিত। আয়না এইভাবে বিভিন্ন মানুষ ও গোত্রের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে এবং যার পরে আজ ধনী থেকে দরিদ্র সকল মানুষ আয়না ব্যবহার করতে পারে।
যত সহজে আয়না ভেঙ্গে যায় তা বানাতে কিন্তু অনেক সময় লাগে। তাই পরের বার যখন আপনি আয়নায় আপনার মুখ দেখবেন তখন জাস্টাস ফন লিবিগকে একটা ধন্যবাদ অবশ্যই জানাবেন।