খুনের রহস্য চার বছর পর উদঘাটন পিবিআই
খুনের রহস্য চার বছর পর উদঘাটন পিবিআই
ঢাকার সদরঘাটে মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে চার বছর আগে খুন হন লিলুফা বেগম (৫৭)। এরপর খুন হওয়া নারী মোবাইলসহ বিভিন্ন আলামত গায়েব করে খুনী মোঃ দেলোয়ার মিজি পালিয়ে যান ব্রুনাই। খুনী মোঃ দেলোয়ার মিজি (৪৪) কেবিনটি নিজের নামে না নিয়ে লিলুফার প্রতিবেশি জাহাঙ্গীরের নামে নেন। তদন্ত চলতে থাকে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। তদন্ত তার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তে উঠে আসে দেলোয়ার মিজির নাম। পিবিআই তদন্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউকে কিছু না বুঝতে দিয়ে দেলোয়ারের অপেক্ষায় থাকে।
মোঃ দেলোয়ার মিজি গত মাসের শেষ দিকে ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। দেলোয়ার মিজি তখন পুলিশকে জানান, পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর পর বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় স্বামীহীন লিলুফাকে হত্যা করেন।
পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার। গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্রুনাই প্রবাসী আসামী মোঃ দেলোয়ার মিজিকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা জেলা। আসামী মোঃ দেলোয়ার মিজি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার মোল্লাবাড়ি নাসিরকোর্ট গ্রামের আঃ মান্নানের ছেলে। একই এলাকায় ভুক্তভোগী লিলুফা বেগমের বাড়িও।
ঢাকায় আসার জন্য ২০১৯ সালের ১৬ জুন রাত ১০টার দিকে মিতালি-৭ লঞ্চের এস-৩০৯ নম্বর কেবিনে ওঠেন লিলুফা পরদিন সকাল ৯টার দিকে লঞ্চের কেবিন বয় ভুক্তভোগীর লাশ দেখতে পায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পিবিআই’র ক্রাইমসিন টিম ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় সনাক্ত করে।
ইতি চিত্রা সিনেমার মুক্তি আগামী ২০ অক্টোবর
পিবিআই জানায়, লিলুফা বেগমের ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। নিহত লিলুফা বেগমের সঙ্গে তার প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের সখ্যতা থাকায় এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর জড়িত থাকতে পারে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
এতে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যে জাহাঙ্গীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। লঞ্চের বুকিং রেজিস্টারে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের নামের পাশে ভুক্তভোগীর মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। পরে তদন্তে একই গ্রামের দেলোয়ার মিজির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর প্রায় সাড়ে ৪ বছর অপেক্ষার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
দেলোয়ার মিজি লিলুফা হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করেন। দেলোয়ার জানান, দেশে আসার কিছু দিন আগে তিনি তার এক আত্মীয়কে একটি ভয়েস রেকর্ডেড মেসেজ পাঠান। তার আত্মীয়কে লিলুফা হত্যা মামলার খোঁজ খবর নিতে বলে। মামলা শেষ করতে যদি টাকা পয়সাও লাগে সেটার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে বলে। আসলে সমস্যা হবে না এমন আশ্বাসে সে ব্রনাই থেকে দেশে আসে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামী দেলোয়ার আরও জানায়, ভুক্তভোগী লিলুফা বেগমের স্বামী ২০১৫ সালে মারা যান। তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন। ভুক্তভোগীর বাড়িতে কাঠ মিস্ত্রীর কাজের সুবাদে ২০১২ সালের দিকে তার সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয় ধীরে ধীরে সখ্যতা গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। ২০১৭ সালে দেলোয়ার মিজি ব্রুনাই চলে গেলে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথা বার্তা চলতে থাকে। ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ২ মাসের ছুটিতে আসামী দেলোয়ার মিজি দেশে আসে। দেশে আসালে ভুক্তভোগী লিলুফার সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে ভুক্তভোগী লিলুফা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। বিয়ের বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে ভুক্তভোগী লিলুফা বেগম তার বাড়িতে গিয়ে উঠবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
নারী যাত্রীকে হেনস্থার শিকার না হয় দিব্যা প্রভা
এরই মধ্যে দেলোয়ার মিজির বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হলে লিলুফা বেগম সেখানে গিয়ে সম্পর্কের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। দেলোয়ার মিজি ভুক্তভোগীকে অল্প কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলে এবং বিদেশ যাওয়ার আগেই তাকে বিয়ে করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শান্ত করে। আসামী দেলোয়ার মিজি মান সম্মানের কথা চিন্তা করে ভুক্তভোগীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
আসামী দেলোয়ার মিজি পরিকল্পনা মোতাবেক লিলুফা বেগম ঘটনার দিন চাঁদপুর থেকে মিতালি লঞ্চের ৩য় তলার কেবিনে ওঠে। ঘটনার দিনও সে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে লঞ্চ ছাড়ার পর রাত ১২টার দিকে লিলুফাকে ধর্ষণ করে। এবং রাত দেড়টার দিকে বিয়ের কথা নিয়ে ভুক্তভোগীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দেলোয়ার ভুক্তভোগীর গলা চেপে ধরে ও ভুক্তভোগীর গলায় ওড়না পেচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তাদের সম্পর্কের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ভুক্তভোগীর মোবাইলে থাকায় সে ভুক্তভোগীর সাথে থাকা দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে গাবতলীতে এক আত্মীয়ের বাসায় যায়। ঐ দিনই আবার সে চাঁদপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। ঘটনার নয় দিন পর ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন দুটি নিয়ে আসামী দেলোয়ার মিজি ব্রুনাই চলে যায়।