পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন সোনার চর
পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন সোনার চর
একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনার চর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণ সীমানার বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এ দ্বীপটিতে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ বনভূমি, প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত। এই সংরক্ষিত বনে আছে লাল কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। নগরের কর্মচাঞ্চল্ল থেকে বহুদূরে এই সৈকতের, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।
সোনার চরে সুন্দরবনের মতই জোয়ার ভাটার খেলা চলে, এখানে সৈকতের বালুও খুবই স্বচ্ছ। রোদের আলোয় ঝিকঝিক করে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে সোনার চর। এই চরের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এততাই নির্মল ও সবুজ যে সুন্দরবনের থেকেও সুন্দর না বলে উপায় নেই।
এই সংরক্ষিত বিশ হাজার হেক্টর সবুজে ঘেরা বনে আছে বন্য মহিষ, হরিণ, বানর, শুকর এবং পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এই বিশাল বনভুমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোটবড় খাল। ছোট নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার করে এসব খালে খালে ভ্রমনে উপভোগ করতে পারবেন বিচিত্র সব পশুপাখির বিচরণ। আবার বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পড়বে বুনো মহিষ। পাশাপাশি ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা যেতে পারে হরিণের পালের সঙ্গে।
এখানকার ঝাউবন সোনার চরের মূল সৌন্দর্য, এ ছাড়াও সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন খুব সহজে। যদি শীতে সোনার চরে বেড়াতে যান তাহলে হাজারো পাখির বিচরণ ও কলরবে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে চরটিতে ক্যাম্পিংও করা যায়, তবে সোনার চর ভ্রমণ সেন্ট মার্টিনের মতই রোমাঞ্চকর ও আনন্দময়। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে লঞ্চে করে চর কাজল, রাঙ্গাবালী বা চর মন্তাজ হয়ে সোনার চর যাওয়ার। এপথে চোখে পড়বে সবুজ ম্যানগ্রোভ বনভূমি, বিশাল মহিষের পাল, চর অঞ্চলের মানুষের কর্ম চঞ্চলতা বা স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের দিতে হবে কর
সোনার চর ২০১১ সালে পশুপাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বনের মধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গেছে পাকা রাস্তা, পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। সোনার চরে বন বিভাগের উদ্যোগে বাঘ এবং হরিণের অভয়াশ্রম করা হয়েছে, এছাড়াও একটা কুমির প্রজনন কেন্দ্রও গড়ে উঠছে সোনার চরে।
কীভাবে যাবেন:-
ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর লঞ্চে উঠে চরকাজল এ নামার পর ছোট লঞ্চে চর মন্তাজ যেতে হবে এবং সেখান থেকে ট্রলার ঠিক করে সোনার চর যাবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি গলাচিপার লঞ্চে উঠে গলাচিপা চলে যান লঞ্চঘাট থেকে স্পিডবোটে সোনার চরে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা। গলাচিপা থেকে সোনার চরে রিজার্ভ ট্রলারে একদিনে যাওয়া-আসার খরচ দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা।
প্রতিদিন লঞ্চ যাতায়াত করে গলাচিপা থেকে চর মন্তাজ পর্যন্ত সকাল দশটা এবং বেলা ২টায় ছেড়ে যায়। আবার কুয়াকাটা থেকেও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোনার চরে যাওয়া যেতে পারে। যেতে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা।
কোথায় থাকবেন:-
আরামদায়ক থাকার মত কোনো ব্যবস্থা নেই সোনার চরে, তবে চর মন্তাজে রয়েছে বন বিভাগ, স্যাপ বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির ব্যবস্থাপনায় মোটামুটি সুবিধা সম্পন্ন বাংলো। আবার কিছু হোটেলও আছে তবে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়াও রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প যদি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে চান তবে চরেই তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন।
পরামর্শ ও সতর্কতা:-
সোনার চর ভ্রমণ শীতকালেই বেশি নিরাপদ। যেহেতু সমুদ্রের কোল ঘেঁষে এই চরের অবস্থান সোনার চরে যেতে আপনাকে অবশই লঞ্চ, স্পিডবোট বা ট্রলারে করে যেতে হবে। বিশেষ করে বর্ষকালে নদী বা সমুদ্র অনেক সময়ই উত্তাল থাকে। যাদের হাটার অভ্যাস কম তাদের না যাওয়াই ভালো।
বনের বেশি গহিনে যাবেন না, আর গেলেও সঙ্গে অন্তত দুজনকে রাখুন। এই অঞ্চলে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই, অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন। নিকটবর্তী বাজারে সোলার পাবেন মোবাইলফোন চার্জ করতে পারেন যা অনেক সময়সাপেক্ষ।
Rights
Thank U
Pingback: হাওরে অতিথি পাখির কিচিরমিচির - amaderkhabar