জাতীয়

সামনে একটা বিশাল বাজার আছে: ইন্টেলের চেয়ারম্যান

সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বক্তৃতা দিয়েছেন। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইন্টেলের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের ওমর ইশরাক।

আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি খুব সম্মানিত। এত মানুষের সামনে কথা বলতে পারাও একধরনের রোমাঞ্চ, অনুপ্রেরণার ব্যাপার। যাঁরা সমাবর্তন নিচ্ছ, সবাইকে অভিনন্দন।

ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আসতে তোমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই অর্জনই তোমাদের আত্মত্যাগ ও অধ্যবসায়ের সাক্ষ্য দিচ্ছে। তোমরা যখন জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছ, তখন আজকের এই মুহূর্তটার তাৎপর্য নিয়ে কিছু কথা আমি বলতে চাই। আজ যে শুধু তোমার শিক্ষাজীবন শেষ হচ্ছে তা নয়, জীবনের নতুন একটা ধাপও শুরু হচ্ছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুমি অর্জন করেছ, নিশ্চয়ই তা তোমার ভবিষ্যৎ গঠনের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে। আমি অনুরোধ করব, ভবিষ্যতের কথা ভাবার সময় নিজেকে প্রশ্ন করো—তোমার উদ্দেশ্য কী? সমগ্র জীবন বিলিয়ে দিয়ে পৃথিবীর জন্য কী ভূমিকা তুমি রাখতে চাও। হ্যাঁ, নিজেদের মতো করে আমরা সবাই-ই একটা পরিবর্তন আনতে পারি। কিন্তু শুরুটা হতে হবে `ইচ্ছা` দিয়ে।

রাতারাতি তুমি লক্ষ্য খুঁজে পাবে না। কিন্তু ভাবনাটা মাথায় খেলা করার এখনই সময়। এই ভাবনাই তোমাকে বলে দেবে, তোমার অগ্রাধিকার কিংবা পছন্দ কী হওয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কীভাবে একটা পরিবর্তন আনতে পারে, সে বিষয়ে একটা উদাহরণ তোমাদের সামনে তুলে ধরি। ধরো, তুমি কোথাও কাজ করছ। কিন্তু এই কর্মস্থল নিয়ে তুমি ঠিক খুশি নও। এমন সময় তোমার কাছে একটা নতুন চাকরির প্রস্তাব এল। তুমি কি সুযোগটা লুফে নেবে? কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে? কেউ হয়তো শুধু বেতনটাই দেখবে। কেউ ভাববে, এখন যাঁর অধীনে কাজ করছি, তাঁর একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। কিন্তু যদি জানো, তোমার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কী, তুমি কী পরিবর্তন আনতে চাও, তাহলে তুমি ভিন্নভাবে ভাববে। তুমি হয়তো যেখানে আছ, সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন চাকরির প্রস্তাবটা যতই আকর্ষণীয় হোক, সেটা হয়তো তোমার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণে কাজে আসবে না। দীর্ঘ মেয়াদে এই বিবেচনাই তোমাকে ব্যক্তিগত অনেক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

মনে রেখো, সারা জীবন শিখতে হবে। পৃথিবী ক্রমেই বদলাচ্ছে। নতুন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানা, এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চশিক্ষা, চাকরি কিংবা অন্য যে পথই বেছে নাও না কেন, মনে রেখো শিক্ষা কখনো শেষ হবে না। যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুমি অর্জন করেছ, তা সংশোধন করতে শেখো। নতুন নতুন পরিস্থিতিতে সেগুলো কাজে লাগাও। এতে করে সমস্যাগুলো তুমি ভিন্ন চোখে দেখতে পারবে। শিক্ষা, বিশ্লেষণ, গবেষণা, সমস্যা সমাধানের পেছনে তুমি গত কয়েক বছর সময় দিয়েছ। শিখেছ, কীভাবে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হয়। এসবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এসব দক্ষতার প্রয়োগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে।

সুযোগ আছে তোমাদের অনেক
আমি জানি, তোমরা অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবছ। ভাবছ স্বাধীনভাবে কিংবা অন্যের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবে। সব ক্ষেত্রেই মাথায় রেখো, বাংলাদেশে তোমাদের সামনে একটা বিশাল ও সম্ভাবনাময় বাজার আছে। যে আইডিয়াই তোমার মাথায় থাকুক, আগে সেটা স্থানীয়ভাবে কাজে লাগাও। আমি জানি, একটা বড়, প্রতিষ্ঠিত বাজার কখনো কখনো আকর্ষণীয়। কিন্তু তোমার কাছে এখানেই যা আছে, সেটাকে ছোট করে দেখো না। এখানে শুরু করেই তুমি হয়তো স্থানীয়ভাবে একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারবে, আবার একই সঙ্গে দ্রুত পৌঁছে যাবে দেশের বাইরে। আরও একটা সুবিধা তোমাদের আছে, তোমরা ইংরেজি জানো। বৈশ্বিক ব্যবসা অনেকাংশেই হয় ইংরেজিতে। তুমি যেন আরও ভালোভাবে, স্বাচ্ছন্দ্যে যোগাযোগ করতে পারো, সেই দক্ষতা উন্নয়ন অব্যাহত রাখো। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি নয়। এমন অনেক দেশের বহু মেধাবী মানুষ দেখেছি, যাঁরা শুধু এই একটি বাধার জন্যই এগোতে পারছে না। তোমাদের সুযোগ আছে, অতএব কাজে লাগাও। ইংরেজির সঙ্গে পরিচিতি, এর ব্যবহার বাড়াও। তাই বলে নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করো না। অবশ্যই মাতৃভাষাকে অগ্রাধিকার দাও। কিন্তু জেনে রাখো, আন্তর্জাতিক ব্যবসার ভাষা হলো ইংরেজি।

সবশেষে তোমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধটির কথা বলি সততা। কথাটির অর্থ খুব সাধারণ। ছেলেবেলা থেকেই আমাদের সততা শেখানো হয় সত্য বলো, আইন মানো। যা-ই করো, যে সমস্যারই মুখোমুখি হও, এই মূল্যবোধগুলো মনে রেখো।

 

 

ইংরেজি থেকে অনুদিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *