গর্ভাবস্থায় ভিটামিন কোনটা খাওয়া কোনটা নয়
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন কোনটা খাওয়া কোনটা নয়
আমাদের দৈহিক গঠন ও কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রয়োজন হয়। বয়সের বিভিন্নতা ও বিভিন্ন সময়ে এসব ভিটামিনের চাহিদার তারতম্য ঘটে। তখনই দরকার হয় পরিপূরক, যখন প্রতিদিনের খাবার থেকে তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। যেমন গর্ভাবস্থায় দেহে বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার কিছু ভিটামিন আছে, যা এ সময়ে সেবন করলে মা এবং গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি…
সেবনের সময়কাল
কিছু বাদে বেশির ভাগ ভিটামিন ১২ সপ্তাহের পর থেকেই সেবন করতে হয় কেননা গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহ বমি বমি ভাব থাকে।
সেবন করা যাবে যেসব ভিটামিন
ক্যালসিয়াম:- ক্যালসিয়াম নবজাতকের হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য প্রয়োজন। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে গর্ভাবস্থায়। এ সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম ১২ সপ্তাহ পর থেকে সেবন করতে হবে, যেহেতু নবজাতকের হাড়ের গঠন ১২ সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়।
ফলিক অ্যাসিড:- রক্ত তৈরি, ভ্রূণের বৃদ্ধি, ডিএনএ উৎপাদন, ভ্রূণের স্নায়ু ত্রুটি ও জন্ম ত্রুটি প্রতিহত করতে ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা অসীম। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থার ১ মাস আগে থেকে গর্ভাবস্থার ন্যূনতম ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করতে হবে।
আয়রন:- দৈনিক ১৭ মিলিগ্রাম আয়রন দরকার গর্ভাবস্থায়। এটি রক্তকণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। আয়রন এর অভাবে শিশু ও মা দুজনের রক্তস্বল্পতা হতে পারে, এর অভাবে অপরিণত শিশু জন্মদান, মায়ের মানসিক অবসন্নতা ও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আয়রনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, যার থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। তাই এটি ১২ সপ্তাহ পর থেকেই সেবন করতে হবে।
ভিটামিন-ডি:- ভিটামিন ডি-র প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য গর্ভাবস্থায়। নবজাতকের হাড়, দাঁতসহ সুস্থ চামড়া ও চোখের জন্য ভিটামিন ডি খুব দরকার।
আয়োডিন:- গর্ভাবস্থায় আরও একটি প্রয়োজনীয় উপাদান আয়োডিন। আয়োডিন এর অভাবে গর্ভপাত, মৃত নবজাতক প্রসব, বাচ্চার খর্বাকৃতি গঠন এবং নবজাতকের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য এই অবস্থায় প্রতি দিন ১৫০ মিলিগ্রাম আয়োডিন খেতে হবে।
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:– গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৬৫০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দরকার। এর অভাবে অপরিণত ও কম ওজনসমৃদ্ধ শিশু জন্ম নিতে পারে।
আয়ুর্বেদিক চা- এক সমাধান
জিংক:- গর্ভাবস্থায় দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম জিংক খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় জিংক অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি অপরিণত ও কম ওজনের শিশু জন্মদান প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন সি:– ভিটামিন সি গর্ভাবস্থায় আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি আয়রন হজমে সহায়তা করে, দৈনিক ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।
বিরত থাকতে হবে যেসব ভিটামিন থেকে
ভিটামিন এ:– শিশু জন্মত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে ভিটামিন এ পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে। নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে মায়ের লিভারও। যদিও নবজাতকের দৃষ্টিশক্তি ও রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন এ দরকার, কিন্তু সন্তান ও মায়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় যতটুকু ভিটামিন এ দরকার, আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার থেকেই এর চাহিদা পূরণ হয়।
ভিটামিন ই:- পেটে ব্যথা হতে পারে ভিটামিন ই খাওয়ার কারণে, যার ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। তাই ভিটামিনসহ যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে সাবধানতার সঙ্গে সেবন করতে হবে।
Pingback: ক্যাটরিনার ভরসা এবার জুনিয়র - Amader Khabar