লিভার পরিষ্কার হবে যে খাবারে | জেনে নিন সঠিক খাবার
লিভার পরিষ্কার হবে যে খাবারে
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লিভার। শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলোকে বের করে দিতে এই অঙ্গ ২৪ ঘণ্টা কাজ করে। লিভার এমন এক অঙ্গ যেটি নিজেকে পরিষ্কার ও পুনর্নবীকরণ নিজেই করতে পারে। এমনকি এই অঙ্গ ওজন কমাতে সহায়তা করে ও শরীরের সুস্থ ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে। আসুন জেনে নেই লিভার পরিষ্কার হবে যে খাবারে
যদি অতিরিক্ত টক্সিন বা বর্জ্য লিভারে জমে থাকে, সেক্ষেত্রে এই অঙ্গ সঠিকভাবে তার কাজ সম্পাদন করতে পারে না। ফলে মারাত্মক সব রোগ যেমন- লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার এমনকি লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই সঠিক খাবার খেতে হবে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার আছে, যার মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিকভাবেই লিভার ডিটক্স অর্থাৎ পরিষ্কার করতে পারবেন।
সবুজ শাক:-
লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী সবুজ শাকসবজি, যার মধ্যে বাঁধাকপি ও পালংশাক অন্যতম। এগুলো পিত্ত উৎপাদন বাড়ায়। সব শাকসবজিতে যেহেতু ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে, তাই এগুলো লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, শাকসবজিতে লিভার-ক্লিনিং বৈশিষ্ট্য আছে। তাই নিয়মিত সবুজ শাকসবজি পাতে রাখা জরুরি। এছাড়া শাকসবজিতে উচ্চ ক্লোরোফিল বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি থাকায় তা রক্তপ্রবাহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে।
ক্রুসিফেরাস সবজি:-
কিছু উল্লেখযোগ্য ক্রুসিফেরাস শাকসবজি গ্লুকোসিনোলেটের একটি চমৎকার উৎস। যা লিভারকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে ও শরীর থেকে টক্সিনসহ অন্যান্য টক্সিন কার্সিনোজেনকে বের করে দেয়। বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, কেল ও ব্রাসেলস স্প্রাউট নিয়মিত খেলে লিভারে টক্সিন জমে না ও জমে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায়। ক্রুসিফেরাস শাকসবজি খেলে শরীরের গ্লুকোসিনোলেট উৎপাদন বেড়ে যায়, যা কার্সিনোজেনসহ অন্যান্য দূষণকারী অপসারণে বেশ সহায়ক।
বাদাম:-
বাদাম পুষ্টিকর খনিজ ও লিপিড সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্ত্রের উপকার করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাদাম খাওয়া লিভারের এনজাইমের মাত্রা বাড়ায়, যার মধ্যে আছে- আখরোট ও ব্রাজিলিয়ান বাদাম। এগুলো লিভার ডিটক্সিফিকেশন অর্থাৎ পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। বেশিরভাগ বাদাম এনএএফএলডি (নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ) কমাতে সাহায্য করে। আখরোট সাধারণত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লুটাথিয়ন ও আরজিনিনে সমৃদ্ধ। এই অ্যামিনো অ্যাসিড লিভার প্রাকৃতিকভাব পরিষ্কার করতে বেশ সাহায়তা করে থাকে। অ্যামোনিয়া ডিটক্স করার সময়, বিশেষ করে আখরোটে উপস্থিত থাকে।
অ্যাভোকাডো:-
এই ফলটিকে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয় । শরীরের গ্লুটাথিয়নের উৎপাদন বাড়ায় এই ফল। এক কথায়, অ্যাভোকাডো একটি সুপারফুড। যা লিভারের ক্ষতিকারক টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে। যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটাথিয়ন তৈরিতে সাহায্য করে ও লিভারের নিজেকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে, ধমনীতে জমে থাকা প্ল্যাক পরিষ্কার করার ক্ষমতাও আছে গ্লুটাথিয়নে। অ্যাভোকাডোতে থাকা গ্লুটাথিয়ন শরীরের সংশ্লেষণকে উৎসাহিত করে, যা লিভারে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পদার্থ।
হলুদ:-
একটি ঐতিহ্যবাহী মসলা যার বিভিন্ন থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যও আছে হলুদের। এতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে। নিয়মিত ব্যবহারে লিভারের ক্ষতির লক্ষণগুলো কমতে থাকে। হলুদ দারুণ উপকারী ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায়। হলুদের প্রাথমিক জৈবিকভাবে সক্রিয় উপাদানটিকে কারকিউমিন বলা হয়। এমনকি এনজাইমগুলোকে সহায়তা করে, যারা বিষাক্ত পদার্থগুলোকে অপসারণ করে ও লিভার বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতু থেকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। এর বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লিভারের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়।
সাইট্রাস ফল:-
কার্যকর কিছু সাইট্রাস ফল যেমন- কমলা, জাম্বুরা, লেবু সহজেই লিভারের প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে কার্যকার ভূমিকা রাখে। লিভার আরও আরও বেশি এনজাইম তৈরি করতে পারে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ সাইট্রাস ফল খেলে । ফলে টক্সিন ও কার্সিনোজেনগুলোর টক্সিফিকেশনে অবদান রাখে। সাধারণত আঙুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। যা অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়িয়ে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ও কোষের ক্ষতি এড়াতে বেশ কার্যকর। রেসভেরাট্রল পদার্থ আছে আঙুরে , যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সমৃদ্ধ।
রসুন:-
প্রধানত লিভারের এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে রসুন। রসুনে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে ও লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কারণ এতে উচ্চ মাত্রার সেলেনিয়াম থাকে, যা সরাসরি লিভারের প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম বাড়াতে সাহায্য করে। রসুনে পাওয়া সালফার অণুগুলো লিভারের এনজাইমগুলোকে ট্রিগার করে ও শরীর থেকে কমিয়ে দেয় বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ গুলো। লিভার পরিষ্কারে রসুন হলো আদর্শ খাবার।
বিটরুট:-
একটি স্বাস্থ্যকর সবজি বিটরুট । নিয়মিত বিটরুট খেলে লিভারের সামগ্রিক কার্যকারিতা বাড়ে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন ও উদ্ভিদ ফ্ল্যাভোনয়েড আছে। বিটের প্রাকৃতিক উদ্ভিদ যৌগগুলো বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, লিভার পরিষ্কার করতে ও রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এছাড়া বিটরুট শরীরের পিএইচ ভারসাম্য স্থিতিশীল করে, যা ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। সাধারণত বিটরুট জুস হলো নাইট্রেট ও বিটালাইনের প্রধান উৎস, যা হৃদরোগের উন্নতি করতে, প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে কার্যকারি ভূমিকা রাখে।
কিডনির পাথর ও অতিরিক্ত টক্সিন বেরোবে এই সবজিতেই
ব্লুবেরি ও ক্র্যানবেরি:-
প্রাকৃতিক ডিটক্স বৈশিষ্ট্য ভরপুর ব্লুবেরি ও ক্র্যানবেরিতে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন (অ্যান্টি অক্সিডেন্ট) থাকে। বেরি খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও লিভার পরিষ্কা হয় প্রাকৃতিক ভাবেই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লুবেরিতে উপস্থিত কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ইঁদুরের লিভারে ক্ষত ও ফাইব্রোসিস বা দাগের টিস্যু গঠনে বাধা দেয় ও লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এক্ষেত্রে ক্র্যানবেরি ও ব্লুবেরির জুস পান করতে পারেন।
ব্লুবেরি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম ও ইমিউন সেল প্রতিক্রিয়াশীলতাও উন্নত করে। চর্বিযুক্ত মাছ:-
বেশিরভাগ সামুদ্রিক খাবার লিভারকে ডিটক্স বা পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে সামুদ্রিক মাছেও। যেমন- সার্ডিন, স্যামন, টুনা ও ট্রাউট ইত্যাদি মাছ লিভারের চর্বি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা অনুসারে, এই মাছগুলো লিভারের এনজাইমের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে ও অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাঁধা দেয়।
গ্রিন টি:-
স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে গ্রিন টি’র। লিভারের জন্যও খুবই উপকারী গ্রিন টি। জাপানিদের গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়া লিভারে উপস্থিত টক্সিন দূর করে ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। গাছে পাওয়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সবুজ চায়ে প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
সূত্র:-হেলথলাইন
🍞🍞🍞🍞🍞
Thank U.