মানব পাচার ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য
মানব পাচার ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য
কাগজপত্র জালিয়াতি করে মানব পাচার ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।
এটা বাংলাদেশে কোনো বৈধ এনজিও নয়, এর নিবন্ধন নেই যুক্তরাষ্ট্রেও।
মহিউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের সঙ্গে কৌশলে সখ্য গড়ে তুলতেন।
বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে একটি কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি কোম্পানি খুলে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার কথা বলে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে জাতিসংঘের পরামর্শক পদমর্যাদার দাবি করে এবং নিউইয়র্কে কার্যালয় রয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসের অনুসন্ধানে তাঁদের জালিয়াতি ধরা পড়ে এবং বেরিয়ে আসে এটা বাংলাদেশে কোনো বৈধ এনজিও নয়, এর নিবন্ধন নেই যুক্তরাষ্ট্রেও। কাগজপত্র জালিয়াতি করে মানব পাচার ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।
প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন জুয়েল ও নির্বাহী পরিচালক উজ্জ্বল হোসেন ওরফে মুরাদ এবং তাঁদের তৈরি কাগজপত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করা ৩ জন এনামুল হাসান, শাহাদাদ ও হাদিদুল মুবিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পাঁচজনের বিরুদ্ধেই মার্কিন দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইকেল লি মানব পাচারের অভিযোগে ২১ মে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ভিসার জন্য গত ২৬ এপ্রিল, সাক্ষাৎকার দিতে যান এনামুল হাসান, শাহাদাদ ও হাদিদুল মুবিন। সেখানে এনামুল ও হামিদুল নিজেদেরকে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এর উপপরিচালক, শাহাদাদ জনসংযোগ কর্মকর্তা পরিচয় দেন। সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় তাঁদের বিষয়ে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এরপরই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দূতাবাস কর্মকর্তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। তাঁরা এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোতে যোগাযোগ করে এই প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাননি।
প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইটে নিউইয়র্কে কার্যালয়ের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তারও কোনো অস্তিত্ব নেই ও জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। পরে খুঁজে পাওয়া যায়, নিজেদের এনজিও হিসেবে প্রমাণ করতে তাঁরা আবেদনে ভুয়া কাগজপত্র ও জাতিসংঘের পরামর্শক মর্যাদার (কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস) কাগজ সংযুক্ত করে।
পর গত ২১ মে, তিনজন (এনামুল, শাহাদাদ ও হাদিদুল) ভিসার জন্য আবার মার্কিন দূতাবাসে গেলে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাঁদের আটক করে পুলিশে দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও তাঁদের প্রতারণার বিষয়টি বেরিয়ে আসে তখন দূতাবাসের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। পরে তিনজনের (এনামুল, শাহাদাদ ও হাদিদুল) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন শীর্ষ ২ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জুয়েল ও উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো: জুনায়েদ আলম সরকার জানিয়েছেন।
ডিবির কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের সদস্যদের ৩ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, এতে বেরিয়ে আসে প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনকে মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে প্রচার করে এর আগেও প্রতারক চক্রের ওই সদস্যরা একাধিক ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইতালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০/১২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান চালু করে মানবাধিকার সংগঠনের নামে প্রতারকেরা ইউরোপর ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ঢাকার পল্টন এলাকায় একটি কার্যালয় রয়েছে। এর সদস্যরা নিয়মিত জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলনের বিজ্ঞপ্তির খোঁজখবর রাখতেন। এ দফায় তাঁরা ৪ মে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আদিবাসী বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা বলে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সেই আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এনামুল, শাহাদাদ ও হাদিদুলকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন জুয়েল ও উজ্জ্বল হোসেন। মহিউদ্দিন ৩ জনের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও নিয়েছিলেন চুক্তি অনুযায়ী, ভিসা হওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য থাকবে কর্ণাটক সরকার
মহিউদ্দিন ও উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তারের সময় ফারহান নামের এক ব্যক্তির পাসপোর্ট উদ্ধার হয় তাঁদের কাছ থেকে। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ঐ ব্যক্তির ভিসাও হয়ে গিয়েছিল। ফারহানকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন মহিউদ্দিন। পুরো টাকা দিতে না মহিউদ্দিন ঐ ব্যক্তির পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, প্রটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনে অনেকেই বিভিন্ন সময় নানা সমস্যা নিয়ে আসতেন। মহিউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের সঙ্গে কৌশলে সখ্য গড়ে তুলতেন। প্রলোভন দেখাতেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর। এরপর ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সম্মেলন, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতেন। সেই সব কাগজপত্র ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে জমা দিয়ে ভিসা নিয়ে তাঁদের বিদেশে পাচার করতেন। স্বল্প সময়ের ওই ভিসার মেয়াদ শেষ হলে পাচার হওয়া ব্যক্তিরা অবৈধভাবে সেখানে থেকে যেতেন।
Pingback: পূরবী ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা - Amader Khabar