অন্যরকম খবর

চশমার পাওয়ার বলতে কি বুঝায়  

চশমার উপর দিয়ে তাকানোর বিষয়ে যৌক্তিক কারণও থাকে। তাই কারণটা জানার আগে চোখ কীভাবে কাজ করে, সেটা একটু দেখা যাক। আইরিস, জিনগত কারণে আইরিসের রং কালো, বাদামি, নীল, ধূসর, এমনকি সবুজও হয়। চশমা প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কর্মরত প্রকৌশলী বার্নার্ড মাইতেনাজ ১৯৫৯ সালে উদ্ভাবন করেন ভেরিফোকাল চশমা।তাই আজ আমাদের আলোচনা বিষয় চশমার পাওয়ার বলতে কি বুঝায় ।

 

চশমার পাওয়ার বলতে কি বুঝায়

খুব একটা পরিচিত দৃশ্য গম্ভীর কোনো ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা চশমাটা নাকের ডগায় রেখে চশমার উপর দিয়ে তাকাচ্ছেন। গম্ভীর বাবয়স্ক মানুষদের অনেক সময় এমনটা করতে দেখা যায়। অনেকে কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হাসি-তামাশা করতেও ছাড়েন না। তবে চশমার উপর দিয়ে তাকানোর বিষয়ে যৌক্তিক কারণও থাকে। তাই কারণটা জানার আগে চোখ কীভাবে কাজ করে, সেটা একটু দেখা যাক।

কোনো বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়লে ঐ বস্তুকে দেখি, এ তো জানা কথা। কিন্তু কীভাবে ছোট্ট চোখ দিয়ে বিশাল দুনিয়া দেখি, তা ভাবনার বিষয়। অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা কারণটা বের করেছেন। আমাদের চোখের উপরিভাগের একদম উপরে থাকে কর্ণিয়া, স্বচ্ছ গম্বুজের মতো অংশ। আলো সবার আগে এসে এখানেই পড়ে। সেটা পিউপিল নামের ছোট্ট ছিদ্রপথ ধরে ঢুকে পড়ে চোখের ভেতরে। আবার আলো কতটুকু পিউপিলে প্রবেশ করবে তা নির্ধারণ করে আইরিস।

আইরিস কি

চোখের মধ্যে গাঢ় বৃত্তটার নামই আইরিস, জিনগত কারণে আইরিসের রং কালো, বাদামি, নীল, ধূসর, এমনকি সবুজও হয়। আবার আইরিসের মধ্যে আরও গাঢ় রঙের যে ছোট বৃত্ত থাকে, সেটাই পিউপিল। যখন পিউপিলে আলো প্রবেশ করে পরে তা একটি জৈব লেন্সে আঘাত করে এবং লেন্স এবার ছড়ানো আলোকরশ্মিকে একত্রিত করে পাঠিয়ে দেয় রেটিনার কাছে, তখন লেন্সকে সাহায্যে করে কর্ণিয়া। রেটিনায় থাকা সংবেদী কোষ তখন আলোক সংকেতকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করে মস্তিষ্কে পাঠায় এবং আমরা বস্তুটা দেখি। এই হলো আমাদের চোখের কাজকর্ম।

ক্ষতিগ্রস্ত লেন্স

বিভিন্ন কারণে আমাদের চোখের লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা জন্ম থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকতে পারে। যার কারণ চোখ আলোকরশ্মিকে ঠিকভাবে এক করতে পারে না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, কারো কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়, কারো আবার দূরের জিনিস। চোখের এমন সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসকেরা চশমা পরার পরামর্শ দেন।

চশমার পাওয়ার কত হলে স্বাভাবিক

প্রয়োজন অনুযায়ী আলোকরশ্মিকে একত্রিত করার কাজে সাহায্য করে মূলত চশমা। চশমায় এ জন্য কাচ বা প্লাস্টিকের লেন্স ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট লেন্স মোটামুটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আসা আলোক তরঙ্গকে একবিন্দুতে ফেলতে পারে।

অনেকে খালি চোখে কাছের বস্তু ঝাপসা দেখলেও দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পান বা এর উল্টো ঘটনাও ঘটে। যেমন খালি চোখে দূরের বস্তু অস্পষ্ট দেখলেও হয়তো কাছের জিনিস খুব স্পষ্ট দেখতে পান। এই অবস্থায় একক লেন্সের চশমা ব্যবহার করলে বাধ্য হয়েই তাকে দূরে দেখার জন্য চশমার উপর দিয়ে তাকাতে হয়। কিংবা দূরের জিনিস চশমা দিয়ে দেখা স্পষ্ট দেখা গেলে কাছের জিনিস দেখার জন্য তাকাতে হয় খালি চোখে কিংবা অতিরিক্ত লেন্স ছাড়া।আরও পড়ুন: মজাদার খাবার কেন প্লেনে ভালো লাগে না

ভেরিফোকাল চশমা

মজার বিষয় হলো, বিশেষ এক ধরনের চশমার সাহায্যে একই সঙ্গে খুব কাছে, খুব দূরে এবং মাঝামাঝি স্থান স্পষ্ট দেখা সম্ভব, একে বলা হয় ভেরিফোকাল লেন্সের চশমা। এই চশমায় যে লেন্স ব্যবহৃত হয়, তা ভ্যারিলাক্স লেন্স হিসেবে পরিচিত। ফ্রান্সের এক চশমা প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কর্মরত প্রকৌশলী বার্নার্ড মাইতেনাজ ১৯৫৯ সালে উদ্ভাবন করেন ভেরিফোকাল চশমা।

চোখের চশমার পাওয়ার

আধুনিক চশমার একই ভেরোফোকাল লেন্সের মধ্যে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভিন্ন দূরত্ব দেখার ব্যবস্থা থাকে। সাধারণত কাছের বস্তু দেখার জন্য চশমার লেন্সের নিচের অংশ, দূরে দেখার জন্য চশমার লেন্সের উপরের অংশ এবং মাঝামাঝি দূরত্ব দেখার জন্য চশমার মধ্যবর্তী অংশ ব্যবহৃত হয়। দূরে-কাছের বস্তু দেখা যায় বাইফোকাল লেন্সের সাহায্যেও। সাধারণত এমন চশমায় নিচের অংশে প্রয়োজন অনুযায়ী একটি লেন্স বসানো থাকে এবং উপরের অংশে লেন্স থাকতেও পারে, নাও পারে। আবার বাইফোকাল লেন্সের প্রধান সমস্যা হলো, হঠাৎ কাছে থেকে দূরে তাকালে লেন্স পরিবর্তনের বিষয়টা চোখে অস্বস্তিকর লাগে। কিন্তু ভেরিফোকাল চশমায় সে সমস্যা হয় না। এখানে লেন্সের পরিবর্তনটা খুব মসৃণভাবে করা হয় বা দৃষ্টিসীমা বদলালে চোখে আর অস্বস্তিকর লাগে না।

পরিশেষ

ভেরিফোকাল চশমাকে সর্বেসর্বা ভাবার কোনো কারণ নেই, এরও অসুবিধার দিক আছে। চোখের সব ত্রুটির জন্য ভেরিফোকাল লেন্সের চশমা সমাধান নয়, ব্যবহারকারীর অনেক সময় মাথাঘোরা বা মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। অবশ্যই ভেরিফোকাল চশমা ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।আশা করি চশমার পাওয়ার বলতে কি বুঝায়

জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। 

 

সূত্র:-সায়েন্স ফোকাস.

4 thoughts on “চশমার পাওয়ার বলতে কি বুঝায়  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *