বেতন ভাতা ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত
বেতন ভাতা ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও পাঁচ বছরের বেশি সময় নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর কাছ থেকে বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের জুনিয়র সেকশন অফিসার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) আইন উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া ছাড়াই টিটুর কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিতির বিষয়টিকে কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছে না। জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই চাকরি নেওয়ার পর শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রভাবে কর্মস্থল রুয়েটে একদিনের জন্যও কাজ করেননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়মিতভাবে গ্রহণ করেন। রুয়েট থেকে নিয়েছেন এসিআর।
প্রেমের ফাঁদ মাস্টারমাইন্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী
টিটু রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ও বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক। পাঁচ বছর টিটু অবৈধভাবে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রুয়েট প্রশাসন চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে ওয়াহেদ খান টিটুর বিষয়টি সামনে আসার পর। টিটু বিভিন্নভাবে রুয়েট প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করে বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা করছেন বলে। ইতোমধ্যে টিটুর বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। ফলে সে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা তুলতে পারেনি। এদিকে টিটুর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রুয়েটে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে বা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল না হয় সে কারণে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। এই সতর্কতার অংশ হিসেবে রুয়েট সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এই টিটুর বিষয়টিকে কিভাবে শেষ করবেন তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রুয়েটের ভিসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কথা বলতে চাই না যা ঘটেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা নিয়ে রুয়েট প্রশাসন কাজ করছে এই মুহূর্তে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম গত ১৩ আগস্ট রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর বিষয়ে তিনি অবগত হন। তিনি টিটু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান রেজিস্ট্রারের কাছেও। রেজিস্ট্রার টিটুর কর্মস্থল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতির কাছে টিটুর বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর, রেজিস্ট্রার দপ্তরকে লিখিতভাবে জানান, তিনি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুকে একদিনের জন্যও অফিসে পাননি। আগের সভাপতিরাও একই তথ্য দেন।
জানা গেছে, রুয়েট প্রশাসনের সিদ্ধান্তক্রমে জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুকে শোকজ করা হয়। আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু তার জবাবও দেন। টিটু জবাবে বলেন, রুয়েট থেকে ডেপুটেশন ও ছুটি নিয়ে রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে নগর ভবনে কাজ করছেন।
ওজন কমাতে আদার ভূমিকা অনবদ্য
রুয়েটের রেজিস্ট্রার দপ্তর পুরকৌশল বিভাগে ও প্রশাসনের কাছে থাকা ব্যক্তিগত ফাইলে ডেপুটেশন বা ছুটি সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র খুঁজে পাননি। আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর ব্যক্তিগত ফাইল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, রুয়েটে জুনিয়র সেকশন অফিসার হিসেবে আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর যোগদানের পর ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব চালু করেন। ঐ হিসাব নম্বরে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বেতন-ভাতা নিয়মিত জমা হয়েছে। আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর মাসিক বেতন ত্রিশর হাজার ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা নিয়মিতভাবে ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে এবং তা তিনি উত্তোলন করেছেন। চাকরিস্থল রুয়েটে অনুপস্থিত থেকেও গত ৫ বছরে রুয়েট থেকে তিনি মোট ১৯ লাখ ৩ হাজার ১৮০ টাকা বেতন-ভাতা নিয়েছেন। ঘটনা জানাজানির পর এখন রুয়েট এই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
রুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক শহিদুর রহমান বলেন, আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুকে দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগে বিষয়টি নিয়ে আইন উপদেষ্টার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের এ সভায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।