কোন স্তন্যপায়ী প্রাণী উড়তে পারে
কোন স্তন্যপায়ী প্রাণী উড়তে পারে
বাদুড়ও উড়তে পারে কিন্তু বাদুড় অন্য পাখি বা প্রণির মতো গাছের ডালে বসে বা শুয়ে ঘুমায় না। অন্য পাখিরা রাতের বেলা গাছের ডালে বসে ঘুমায়। যখনই বাদুড়রা যখনই বিশ্রাম নেয় হোক দিন কিংবা রাত, সোজা হয়ে বসে না, উল্টো হয়ে গাছে ঝোলে। কেন? এরা উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে।
উত্তরটা হলো, বাদুড় উড়তে পারে বলেই তাদের জন্য উল্টো হয়ে ঝুলে থাকাটাই সুবিধার।
কিন্তু অন্য পাখিও উড়তে পারে, ওরা কেন উল্টো হয়ে ঝোলে না?
অন্যন পাখিদের যে সুবিধা আছে বাদুড়ের সেই সুবিধা নেই। বাদুড়ই উড়তে পারা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ীদের উড়তে পারার কথা নয় বিজ্ঞান সেটাই বলে, যার একটা কারণ, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শারিরিক কাঠামো।
প্রাণীদের দেহের যে ভর (চলতি কথায় ওজন), সেই ভর নিয়ে আসলে আকাশে উড়া যায় না। পাখিরা পারে, কারণ তাদের শরীরের আকারের তুলনায় ভর (চলতি কথায় ওজন) অনেক কম। উড়তে সমস্যা হওয়ার কথা বাদুড়েরও, কিন্তু হয়নি এর কারণ দীর্ঘদিনের বিবর্তন প্রক্রিয়া। উড়ার জন্য যে শারিরিক বাধাগুলো ছিল বাদুড় সেগুলো কাটিয়ে উঠেছে বিবর্তনের মাধ্যমে। পাখির ক্ষেত্রে তুলনামূলক ওজন যেমন কম, তেমনি মানানসই তাদের ডানার গঠন।
পাখিদের উড়ার ধরন নির্ভর করে ডানা কতটা ভার বইতে পারে, বাতাসে দেহটাকে কতটা সাপোর্ট দেয় সেটার ওপর। পাখির ওজন আর ডানার গঠন এমন, সহজেই পায়ে ভর দিয়ে আকাশে উড়তে পারে। পাখিকে এক্ষেত্রে নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে কাজে লাগাতে হয়।
পেঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বলে কেন
সুতারং এই সূত্র বলে প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ডালে বসে থাকার সময় পাখি যখন উড়তে শুরু করে, তখন প্রথমেই পা দিয়ে ডালে ধাক্কা দেয়। তখন পাখির পা যে বলে ডালকে ধাক্কা দেয়, ডালও সমান বল পাখির পায়ে ফেরত দেয় সেই বলের সাহায্যে পাখি সামনে এগোয়। কিন্তু সামনে এগোনোর সময় পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পাখি নিচে পড়ে যাওয়ার কথা। সেটা ঠেকিয়ে রাখার জন্য পাখিরা ডানা মেলে দেয়। পাখিদের ডানা প্যারাস্যুটের মতো কাজ করে। তখনই পাখি ডান ঝাপটায় এবং উড়তে শুরু করে, এটাকে বলে এয়ারলিফট। এই ভাবেই মৌমাছি, প্রজপতি, বোলতা, উইপোকা বা ফড়িংয়ের মতো কীটপতঙ্গরাও উড়ে।
কিন্তু বাদুড়ের পায়ের গঠন পাখি বা কীটপতঙ্গের মতো নয়। আগেই বলেছি অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো বাদুড়ের শরীরও ভারী। বাদুড় এই ভারী শরীর নিয়ে মাটি বা ডাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় উড়া সম্ভব নয়। আবার বাদুড়কে যদি একটা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ঠিকই সে উড়তে পারবে। বাদুড় উপর থেকে পড়তে পড়তে মাটিতে পড়ার আগেই উড়ার জন্য তার ডানাকে প্রস্তুত করে নিতে পারবে এবং স্বাচ্ছন্দে উড়তেও পারবে।
তার মানে বাদুড়দের শারিরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দাঁড়ানো অবস্থা থেকে উড়তে পারে না। তাই দাঁড়ানোর প্রয়োজনও হয় না বাদুড়ের। তাই বাদুড়রা গাছের ডালে উল্টো হয়ে গাছে ঝুলে থাকে। যখন তাদের উড়ার দরকার হয়, তখনই পা দুটো ডাল থেকে ছেড়ে দেয় এবং গাছ থেকে মাটির দিকে পড়তে থাকে। নিচে আছাড় খাওয়ার আগেই ডানা ঝাপটে উড়ার শুরু করে।
বাদুড় এই ব্যাপারটাতে দক্ষ হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কারণে। তাই ডাল ছেড়ে দেওয়ার পর খুব বেশি নিচে পড়তে হয়না সঙ্গেই সঙ্গেই ডানা প্রস্তুত করে উড়তে শুরু করে।
লজ্জাবতী গাছের পাতা নুয়ে পড়ে কেন
যেহেতু তাদের ধাক্কা মেরে উড়ার কোনো সুযোগ নেই, দাঁড়িয়ে বা বসে থাকারও কোনো দরকার নেই, তাই বাদুড়ের পা গুলোও দাঁড়ানো বা বসার জন্য উপযোগী নয়। এ কারণেই বাদুড় পায়ে ভর দিয়ে বসতে পারে না, উড়তেও পারে না। সুতরাং সবমিলিয়ে বাদুড়ের জন্য ঝুলে থাকাই সুবিধা।
যেহেতু বাদুড়ের পা পেছনের দিকে, তাই উল্টো হয়ে না ঝুলেও সোজা ঝোলার কোনো সুযোগ নেই। এভাবেই বাদুড় নিজেকে লক্ষ-কোটি বছর ধরে মানিয়ে নিয়েছে। বাদুড় এভাবেই ঘুম-বিশ্রাম- সবই করতে পারে।
সূত্র:- ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক.