লজ্জাবতী গাছের পাতা নুয়ে পড়ে কেন
লজ্জাবতী গাছের পাতা নুয়ে পড়ে কেন
আমরা কোনো কারণে খুব বেশি লজ্জা পেলে মাথা নিচু করে ফেলে। গাছেরও কী মানুষেরে মতোই লজ্জা আছে? লজ্জাবতী গাছের আচরণ দেখে তেমনটাই মনে হয়।
লজ্জাবতী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ও স্পর্শকাতর লতাবিশেষ। লজ্জাবতীর পাতা ছুঁয়ে দিলে পাতা সংকুচিত করে ফেলে, নিচের দিকে নুয়ে পড়ে।
এর মানে কী?
তাহলে গাছেরও অনুভূতি আছে?
বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু মনে করতেন, গাছেরও অনুভূতি রয়েছে। মানুষ যেমন আগুনের ছেঁকা লাগলে ও গরম অনুভব করলে হাত সরিয়ে নেয় বা চোখে কোনো ক্ষুদ্র বস্তু বালি কণা পড়লে পানি আসে এসব প্রমাণ করে মানুষের অনুভূতি রয়েছে। জগদীশ চন্দ্র বসু, গাছের অনুভূতি প্রমাণ করার জন্য ক্রেস্কোগ্রাফ নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। যা দিয়ে গাছের অতি সূক্ষ্ম বৃদ্ধি থেকে শুরু করে নড়াচড়ার সব কিছুই বোঝা যেত।
জগদীশ চন্দ্র বসু যন্ত্রটিতে একটা গাছকে বেঁধে তার পাতায় বিষাক্ত ব্রোমাইড দ্রবণ ঢেলে দেন। এতে দেখা যায়, যন্ত্রটির কাঁটা নড়তে শুরু করেছে, অনেকটাই জ্যান্ত প্রাণীকে যন্ত্রণা দিলে কষ্টে যেমন কাতরায়, ঠিক তেমন করে। ক্রেস্কোগ্রাফ নামের যন্ত্রটির মাধ্যমে জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, গাছেরও অনুভূতি রয়েছে। বর্তমানে জানা গেছে, গাছের ভেতরে অনুভূতি তৈরি বা জমা হওয়ার মতো সিস্টেম নেই। তবে লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ পেলে নুয়ে পড়ে কেন?
ডাবের ভেতর পানি আসে কোথা থেকে
লজ্জাবতী গাছের ছোট ছোট পাতাগুলো আলো পেলে খুলে যায়, অন্ধকারে বন্ধ হয় ও স্পর্শ করলে গুটিয়ে যায়।
পাতা হঠাৎ স্পর্শ করলে একটা তড়িৎ প্রবাহ লজ্জাবতীর গাছের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ অ্যাসিটাইল কোলিনের মাধ্যমে এই তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই রাসায়নিক পদার্থটি খুব দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে যেতে পারে।
ভালোভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায় লজ্জাবতী গাছের পাতার গোড়া একটু ফোলা। যার ভেতরে রয়েছে অনেক কোষ, কোষগুলো পানি এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ। রাসায়নিক পদার্থটির প্রভাবে খনিজ লবণসহ পানিও বের হয়ে আসে পাতার গোড়ায় ফোলা কোষ থেকে। এবং পানি বের হলে কোষগুলো চুপসে যায়। চুপসানো কোষে পানির চাপ কমার ফলেই লজ্জাবতীপাতার ডাঁটা বা কাণ্ড আর সোজা থাকতে পারে না বা কাণ্ড গুলো নিচের দিকে নুয়ে পড়ে।
লিপস্টিক ব্যবহার আন্ডারটোন বুঝে
যখন লজ্জাবতীর পাতা স্পর্শ করা হয়, ব্যাপারটা শুধু তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ধীরে ধীরে পাতার উপরে-নিচে সব পাতায়ই ছড়িয়ে পড়ে ও একইভাবে সব পাতা নুয়ে পড়ে। কাণ্ড ও পাতাগুলো শুধু নুয়ে যায় না, দুটো পাতার মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানও জোড়া লেগে বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র:- উদ্ভিদবিজ্ঞান/ ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা/ রাগিব হাসান।
Good 👍👍👍👍
ধন্যবাদ