নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা
কাঁচা হলুদ প্রাচীনকাল থেকে ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ও নিম ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে নিমপাতা ও হলুদ বেশ জনপ্রিয়। শরীরে ডিটক্স হিসেবে কাজ করে কাঁচা হলুদ।
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা
নিম পাতা এটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক ঘামাচি, অ্যালার্জিসহ নানা রোগ প্রতিরোধক। নিমপাতা উকুনের সমস্যার জন্যও বেশ কার্যকর, উকুনের সমস্যা দেখা দিলে নিমপাতার রস পুরো চুলে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এছাড়া নিমপাতা ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধেও খুব ভালো কাজ করে। নিমপাতা জ্বাল দিয়ে পানির রং সবুজ হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। অনেক সময় মাথার তালুতে ছোট ছোট গুটির মতো দেখা যায় শ্যাম্পু করার সময় এই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিলে এই গুটির সমস্যাটি চলে যাবে। এবং নিয়মিত এই পানি ব্যবহারে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চুল পড়া বন্ধ করতে নারকেল তেলের সঙ্গে নিমপাতার রস ভালো করে জ্বাল দিয়ে রেখে দিয়ে তা নিয়মিত ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুন: খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে নিমপাতা। বিশেষ করে যাঁদের প্রচুর ঘামাচির সমস্যা রয়েছে তারা গরম আসার আগে এই খাবারটি খেয়ে নিন, একদমই ঘামাচির সমস্যায় ভুগতে হবে না। নিমের কচি পাতা যখন আসে প্রথম শিরা থেকে প্রথম ৫ টি পাতা নিয়ে রসুন, কাঁচা মরিচসহ ভর্তা করে গরম ভাত দিয়ে খেলে সারা বছর শরীরের যেমন রোগ প্রতিরোধ হয় তেমনি গুটিবসন্ত, ঘামাচিও হয় না। যারা নিমপাতার বড়ি খেয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে বড়ির চেয়ে এই ভর্তাই বেশ কার্যকর। নিমপাতার বড়িতে ক্লোরোফিলের যে গুণাগুণ থাকে, তা নষ্ট হয়ে যায়।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় কিভাবে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করবেন?
চোখের নিচের কালো দাগ:-
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই চোখের নিচের কালো দাগ সারাতে বাজারের বিউটি প্রডাক্টসে নয়, নিন নিমপাতা ও কাঁচা হলুদেই পাবেন এর সমাধান। নিমপাতা ৪/৫ ও কয়েক টুকরা কাঁচা হলুদ এক গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ করা পানিতে অল্প কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পানি ছেঁকে আলাদা করুন, এই পানি ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা পানি তুলার বলে ভিজিয়ে দিনে ২ বার চোখের নিচে লাগান এক সপ্তাহেই উপকার পাবেন।
রোদে পোড়া দাগ:-
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর । চা চামচে এক চামচ নিমপাতা বাটা, এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক চা চামচ মুলতানি মাটি ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তবে সেনসেটিভ ত্বক হলে লেবুর রস বাদ দিন, এই প্যাক রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে হালকা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ফল পেতে সপ্তাহে দুই দিন করে ৩ সপ্তাহ ব্যবহার করুন।
ত্বকের তেল দূর করতে:-
নিমপাতা, কাঁচা হলুদ ও চন্দনের গুঁড়া দিয়ে ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে প্যাক বানিয়ে নিন। নিমপাতা ১০/১২টি, দুই টুকরা কাঁচা হলুদ ও আধা চা চামচ চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে নিন। এই প্যাক ভালো করে মুখে মাখুন ও আধা ঘণ্টা রেখে নরমাল পানিতে ধুয়ে ফেলুন। টানা সাত দিন ব্যবহারের পরই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
ব্রণ কমাতে:-
মুখের ব্রণ মানেই দাগের দুশ্চিন্তা, ব্রণের দাগ দূর করতে সব টোটকা ব্যর্থ হলেও নিম-হলুদ জুটি আপনাকে হতাশ করবে না। এক মুঠো নিমপাতা ভালো করে ধুয়ে নিন, তিন-চার টুকরা কাঁচা হলুদ এক সঙ্গে ব্লেন্ড করুন। এবার এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে এটি টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা
সতেজ ত্বকের জন্য:-
দূষণের এই নগরে সতেজ ত্বক পাওয়া এখন আর সহজ নয়, এর জন্য ঘরে তৈরি করে নিন সহজ প্যাক। প্রথমে নিমপাতা সিদ্ধ করুন ও সিদ্ধ পানি আলাদা করে রেখে দিন। এবং ব্লেন্ডারে কাঁচা হলুদ, সিদ্ধ নিমপাতা ও মধু দিয়ে ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে নিন। এই প্যাক মুখে ও হাত-পায়ে মেখে রেখে দিন যতক্ষণ না শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে গেলে প্রথমে নিমপাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ত্বক ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগান। ত্বকের সতেজতা ফিরে পেতে সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করুন।
মনে রাখা ভালো
# কাঁচা হলুদের রস কখনোই সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। হলুদের রস বের করে নিয়ে বেসন, ময়দার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।
# হলুদ দেওয়ার পরপরই রোদে যাওয়া যাবে না। এতে করে ত্বকে কালচে ভাব চলে আসবে।
# নিমপাতার গোড়ার দিকের অংশগুলো না নিয়ে ওপরের অংশগুলো ব্যবহার করা ও খাওয়া উচিত। কারণ এতে ক্লোরোফিলের পরিমাণ বেশি থাকে।
😍😍😍😍
Thank U.