যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা
যষ্টিমধু এক প্রকার গাছের শেকড়, যষ্টিমধু অনেক ঔষধি গুণ সম্পর্ণ, হারবাল বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে বহু বছর ধরে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যষ্টিমধু চিবিয়ে শেকড় রস খাওয়া যায়, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যায়, পরিমাণমত শুধু গুঁড়াও খাওয়া যেতে পারে। উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কিডনি, হাইপোথাইরয়েটিজমে সমস্যা আছে তাদের যষ্টিমধু খাওয়া উচিত নয়।
যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা
যষ্টিমধু এক প্রকার গাছের শেকড়, যষ্টিমধু নাম শুনে মনে করতেই পারেন এটি বোধহয় কোনো প্রকার মধু কিন্তু আসলে তা নয়। গাছের এ শেকড় থেকে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়, গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা বা বাংলায় যষ্টিমধু গাছের শেকড়কে যষ্টিমধু; বলা হয়।
হারবাল বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে বহু বছর ধরে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই যষ্টিমধু। যষ্টিমধু অনেক ঔষধি গুণ সম্পর্ণ, যা বিভিন্ন রোগ উপশমে ও শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
বিভিন্ন পদ্ধতিতে যষ্টিমধু খাওয়া যায়-
# গরম পানিতে পরিমাণমতো যষ্টিমধু ভিজিয়ে ঠান্ডা করে সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
# দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যায়।
# পরিমাণমত শুধু গুঁড়াও খাওয়া যেতে পারে।
# চায়ে দিয়ে পান করতে পারেন।
# চিবিয়ে শেকড় রস খাওয়া যায়।
যষ্টিমধুর উপকারিতা:
আলসার বা ক্ষত নিরাময়:- গ্লাইসিরাইজিন ও গ্লাইসিরাটিক অ্যাসিড আলসার সৃষ্টিকারী প্রোস্টাগ্লান্ডিন রিডাকটেজ এনজাইমের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করতে পারে যষ্টিমধুর। পাকস্থলীতে আলসার বা ক্ষত নিরাময়ে বেশ সহায়ক যষ্টিমধুর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:- প্রতিরক্ষা নার্ভকে উন্নত করে যষ্টিমধু এবং মাইক্রোবিয়াল আক্রমণ প্রতিরোধক লিম্ফোসাইট এবং ম্যাক্রোফেজ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যষ্টিমধু ইমিউন সম্পর্কিত অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া এবং অটোইমিউন জটিলতা হ্রাস করে।
লিভার ভালো রাখে:- যষ্টিমধু শরীরে পিত্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
হজমে সহায়তা করে:- যষ্টিমধু পেটের সমস্যা, হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে:- দুধের সঙ্গে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে:- যষ্টিমধুতে গ্লিসারিন উপস্থিত থাকায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
কাশি ভালো করে:- যষ্টিমধু কফকে তরল আকারে বের করে দেয় এবং খুসখুসে কাশির তাৎক্ষণিক উপশম করতে পারে। এ ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন প্রশমিত করে, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের সমস্যা ও কণ্ঠনালীর প্রদাহ দূর করে।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে:- যষ্টিমধুর ফাইটোস্ট্রোজেনিক মহিলাদের হরমোনজনিত সমস্যা দূর করে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধক:- যষ্টিমধুর গ্লাইসিরাইসিক অ্যাসিড মাস্টকোষ থেকে হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
ত্বক ভালো রাখে:- যষ্টিমধু ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে, ত্বকের অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, প্রদাহ ও সানবার্নের সমস্যা নিরাময় করে।
দাঁত ভালো রাখে:- যষ্টিমধুর ২টি কার্যকর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঠেকাতে পারে।
টিউমার প্রতিরোধক:- যষ্টিমধুর গ্লাইসিরাইটিনিক অ্যাসিড টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট করে।
আরও পড়ুন: খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
যষ্টিমধুর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যষ্টিমধুর অনেক উপকারিতা থাকলেও একটানা খাওয়া উচিত নয়, কিছুদিন বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। যষ্টিমধু অতিরিক্ত খাওয়া হলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন:-
# দীর্ঘ সময় যষ্টিমধু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
# যষ্টিমধু অত্যধিক পরিমাণ খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা, পেশি দুর্বলতা, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
# পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে যষ্টিমধু অত্যধিক পরিমাণ খাওয়ার ফলে।
# যাদের উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কিডনি, হাইপোথাইরয়েটিজমে সমস্যা আছে তাদের যষ্টিমধু খাওয়া উচিত নয়।