আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা

লোকে যখন আপনাকে নিয়ে হাসবে, রাজনীতিবিদ হিসাবে আপনার দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না এটা সানা মারিন ক্যারিয়ারকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর যদি অভিজাত পরিবারের কেউ হতেন, তাহলে এত কথা উঠত না।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সবথেকে কমবয়সী সরকারপ্রধানের তকমা পাওয়া সানা মারিন বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯ বছর একসঙ্গে কাটানোর পর স্বামী মার্কাস রাইকোনেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের আবেদনের খবর বুধবার ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন এই প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছে সিএনএন।

তিনি লিখেছেন আমরা এখন ভালো বন্ধু। পরস্পরের প্রতি নমনীয় এবং স্নেহময়ী মা-বাবা আমরা। আমরা একসঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছি। ১৯ বছর একসঙ্গে কাটানো এবং আমাদের প্রিয় কন্যার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বিচ্ছেদ হলেও আমরা পরিবারের মত করে সময় কাটাতে থাকব একে অপরের সঙ্গে।

“ওয়াইএলই“ ফিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে, সানা মারিনের স্বামী মার্কাস রাইকোনেন পেশাদার ফুটবলার ছিলেন একসময়। এমা আমালিয়া মারিন নামে তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। ১৯ বছর একসঙ্গে কাটালেও তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০২০ সালে।

সানা মারিন এখন ফিনল্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন জোট সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন তিনি। গত এপ্রিলেই ফিনল্যান্ডের সংসদীয় নির্বাচনে বিরোধী ডানপন্থী ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে শক্ত লড়াইয়ে হেরেছেন সানা মারিন। এরপরই বিচ্ছেদের খবর দিলেন তিনি।

শাকিরা বিচ্ছেদ ভুলে নতুন সম্পর্কে

অনেক ফিনিশ, বিশেষ করে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় সানা মারিন। বিশ্বজুড়ে ভক্তদের কাছে সানা মারিন প্রগতিশীল নতুন নেতাদের জন্য ‘মিলেনিয়াল রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হলেও কিছুদিন আগে এক পার্টিতে নাচানাচি এবং মোটা অংকের সরকারি ব্যয়ের কারণে তিনি সমালোচিতও হয়েছেন। তবে পেনশন ও শিক্ষায় অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে কিছু কিছু কনজারভেটিভ তার বিরোধিতা করেছিলেন।

স্যোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেতার আবির্ভাব ছিল উল্কার মত ফিনল্যান্ডের রাজনীতিতে। তার পরিবারে তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি রাজনীতির খাতায় নাম লেখান এবং খুব দ্রুত বামপন্থি সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা করে নেন। এবং ৩৪ বছর বয়সে ২০১৯ সালে যখন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন, সেসময় তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবথেকে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী।

অন্য এক কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন ফিনল্যান্ডের সরকারপ্রধান অগাস্ট ২০২২, সালের। একটি পার্টির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনকে গ্রীষ্মের এক রাতে বন্ধু আর পরিচিতজনদের সঙ্গে নাচতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত ঐ আয়োজনে অ্যালকোহল পানের পাশাপাশি নেচে-গেয়ে আনন্দে মাতেন রাষ্ট্রনেতা সানা মারিন।

রাজধানী হেলসিঙ্কির কোথাও ঐ পার্টিতে ক্যামেরার সামনেই বাদ্যের তালে তালে নাচের সঙ্গে হাসাহাসি আর আলিঙ্গন চলে সানা মারিন ও তার পরিচিতজনদের। কেউ একজন সেই ভিডিও করেছিলেন। সেই পার্টির সেই ভিডিও ফাঁস হলে প্রথমে দেশের ভেতরে, তারপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শোরগোল পড়ে যায়। সানা মারিন বাধ্য হন ড্রাগ টেস্ট করাতে রাজনৈতিক চাপে যদিও ফলাফল আসে ‘নেগেটিভ’। অন্য এক অনুষ্ঠানের একটি ছবি ফাঁস হয়, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন কেসারন্তায় ২ জন সেলিব্রেটিকে প্রায় উন্মুক্ত বক্ষে পরস্পরকে চুমু খেতে দেখা যায় সেখানে। সানা মারিনকে তখন ক্ষমা চেয়ে বলতে হয়, বিষয়টি ঠিক হয়নি।

শাকিব-বুবলীর অধ্যায়ের সমাপ্তি

সানা মারিনের বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা করে তার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিরই (এসডিপি) সাবেক সেক্রেটারি মিকায়েল জাংনার বলেছিলেন, ফাঁস হওয়া ঐ সব ছবি আর ভিডিও প্রধানমন্ত্রীকে হাস্যস্পদ করে ‍তুলেছে। পরবর্তী নির্বাচনে তার টেকা মুশকিল হয়ে যাবে। পার্টি করাটা সমস্যা নয়, ভুল মানুষের সঙ্গে পার্টি করাটাই সমস্যা তৈরি করেছে।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সাধারণ মানুষ হয়ত সেটা মেনে নিত; ভাবত তাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের মতই। ঐ ভিডিও বা ছবিতে সানা মারিনকে যদি তার শৈশবের বন্ধু বা রাজনৈতিক দলের সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা যেত, কিন্তু সেলিব্রেটিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মাস্তি করা তারা হজম করতে পারেনি। ঐ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার সময় সানা মারিনের প্রতি সহানুভূতিও দেখিয়েছেন অনেকে।

One thought on “প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *