ভারতীয় খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক: ইইউ
ভারতীয় দুই কোম্পানির পণ্য এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ও ইথিলিন অক্সাইড রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া করছে। খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা এই রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের পাশাপাশি লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। হংকংয়ে ভারতীয় দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় ক্যানসার-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতীয় খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক: ইইউ
হংকং এবং সিঙ্গাপুর নিষিদ্ধ করার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ক্যানসার–সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি মেলায় ভারতীয় দুই কোম্পানির পণ্য এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ও ইথিলিন অক্সাইড রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া করছে।
২৫ এপ্রিল বুধবার, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ দেশটির প্রথম সারির প্রায় সবকয়টি গণমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট পাঁচ শত ২৭টি পণ্যে ইথিলিন অক্সাইড খুঁজে পেয়েছে। এসবের বেশিরভাগই বাদাম এবং তিল বীজ (৩১৩), ডায়েট জাতীয় খাদ্য (৪৮), ভেষজ ও মশলা (৬০) এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য (৩৪)। ইউরোপে রপ্তানি করা ভারতীয় এ সকল পণ্যের ৮৭টি চালান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে আটকে দেওয়া হয়েছে, এবং বাকিপণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইথিলিন অক্সাইড (এক ধরনের রঙহীন গ্যাস) যা ভারতীয় পণ্যগুলোতে কীটনাশক ও জীবাণুমুক্ত করার রাসায়নিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা সাধারণত চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা এই রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের পাশাপাশি লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
(ইইউ) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিডের (আরএএসএফএফ) তথ্যমতে, ৫২৫টি খাদ্যদ্রব্য ও ২টি ফিড পণ্যে রাসায়নিকটি পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৩৩২টি পণ্যের উৎস দেশ ভারত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ও বাকি খাদ্যপণ্য অন্যান্য দেশ থেকে গেলেও সেগুলোতে ভারতের ট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
রামাইয়াহ অ্যাডভান্সড টেস্টিং ল্যাব ইউরোপে খাদ্যপণ্য পরীক্ষাকারীর সিওও জুবিন জর্জ জোসেফ বলেছেন, সরাসরি ইথিলিন অক্সাইডের সংস্পর্শে আসা ছাড়াও খাদ্যপণ্যে মেলা আরও ২ টি রাসায়নিক ভোক্তাদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল।
তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক ইথিলিন গ্লাইকল। আফ্রিকায় কিছুদিন আগে কাশির সিরাপের মধ্যে এই বিপজ্জনক ইথিলিন গ্লাইকল রাসায়নিক পাওয়া যায় এবং এই সিরাপ খেয়ে আফ্রিকায় অনেক শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে।
জোসেফ আরও বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয় ইথিলিন অক্সাইড। তিনি বলেন, ভারতীয় পণ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দ্য ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যানডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসএআই) উচিত বিকল্প জীবাণুনাশক হিসেবে গামা রশ্মির ব্যবহার করা যায় কি না; বা বিভিন্ন শিল্প–সংস্থাকে এ বিষয়ে ভাবতে উৎসাহিত করা যায় কি না।
আরও পড়ুন: ভারতীয় রাজ্য হিসেবে অরুণাচলকে স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের
রপ্তানি পণ্যে এ ধরনের রাসায়নিকের উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জেলা ভোক্তা ফোরামের সদস্য এক কর্মী বলেন। তিনি বলেন যেসব খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়, সেগুলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের, এসব পণ্যের মানেই যদি এমন হয় তা হলে স্থানীয় বাজারে যা বিক্রি হয়, তার কী অবস্থা সেগুলো এখন পরীক্ষা করা দরকার। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এফএসএসএআইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছে। তবে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি।
গত ২৩ এপ্রিল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেসের গুঁড়া মসলা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে হংকং এবং সিঙ্গাপুর। হংকংয়ে ভারতীয় দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় ক্যানসার–সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসে হংকং মাছ রান্নায় ব্যবহৃত ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচের তিন ধরনের গুঁড়া মশলা ও এভারেস্টের ১টি গুঁড়া মশলার বিক্রি স্থগিত করেছে। বাজার থেকে এভারেস্টের গুঁড়া মশলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে সিঙ্গাপুর এবং রান্নার কাজে এসব মশলা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে।