পোশাক রপ্তানি কমেছে বড় দুই বাজারে
পোশাক রপ্তানি কমেছে বড় দুই বাজারে
পোশাক রপ্তানিতে গত বছর ২৭.৬৪% প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে দশমিক ৭৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের বড় দুটি বাজারের যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৮ ও ২১ শতাংশ কমেছে।ইউরোপে জার্মানি ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে পোল্যান্ডের বাজারেও। সামগ্রিকভাবে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি স্বস্তির জায়গায় ছিল ডলার–সংকটের মধ্যেও। তবে চলতি বছরের প্রথম চার মাস জানুয়ারি–এপ্রিলে বড় দুটি বাজারের যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৮ ও ২১ শতাংশ কমেছে। এতে সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত বছর পোশাক রপ্তানিতে ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর চলতি বছরের এপ্রিল শেষে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে দশমিক ৭৭ শতাংশ।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা বলছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এ কারণে ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমেছে। তাতে তৈরি পোশাক বিক্রি কমেছে। ফলে অবিক্রীত পোশাকের স্তূপ জমেছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর গুদামে। তাই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাকের ক্রয়াদেশ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। নতুন শ্রমিক নিয়োগও কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। গত বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে এক হাজার ৫৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছর মোট পোশাক রপ্তানির ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। গত বছর দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ৯০৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার ইউরোপের দেশ জার্মানি। গত বছর মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশ হয়েছিল জার্মানিতে। চলতি বছরের জানুয়ারি–এপ্রিল ৪ মাসে জার্মানিতে ২০৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ কম। গত বছর দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলারের পোশাক। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, গত মাসে ৪ টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বলেছে, বেসিক পোশাকের বিক্রি কমে গেছে মূল্যস্ফীতির কারণে, ফলে গুদামে পণ্যের মজুত রয়ে গেছে। তাই বেসিক পোশাকের ক্রয়াদেশ প্রায় ৫০ শতাংশের মতো কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, ফাস্ট ফ্যাশনের বিক্রিও কমেনি, ক্রয়াদেশও কমেনি। ফলে যেসব কারখানা ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করে, তারা কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে।
ইউরোপে জার্মানি ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে পোল্যান্ডের বাজারেও। সে কারণে সামগ্রিকভাবে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে। বছরের প্রথম ৪ মাসে ইইউতে ৭৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। গত বছর বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের গন্তব্য ছিল ইইউ। রপ্তানি হয়েছিল দুই হাজার ৩০৪ কোটি ডলার। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৮ শতাংশ।
ইইউতে এ বছরের প্রথম ৩ মাসে ভালো অবস্থানেই ছিল বাংলাদেশ। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজার ৩৪০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ গেছে বাংলাদেশ থেকে। অবশ্য কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের রপ্তানিও কমেছে।
সামাজিক সাম্য থাকবে কর্ণাটক সরকার
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি জানুয়ারি–এপ্রিল সময়ে বেড়েছে। এই সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ১৭৯ কোটি ডলারের পোশাক। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৯ শতাংশ। তবে কানাডায় রপ্তানি কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় দশমিক ২১ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি–এপ্রিল সময়ে ব্রাজিল, জাপান, ভারত, চীনসহ নতুন বাজার গুলোতে ২৯৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। মোট পোশাক রপ্তানিতে এসব নতুন বাজারের হিস্যা ১৯ শতাংশ।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, পোশাক খাতে ক্রয়াদেশের খুবই খারাপ অবস্থায়। গত জানুয়ারি থেকে কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ বিগত বছরের তুলনায় ২০–২৫ শতাংশ কম। সে কারণেই তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমছে। আগামী বছরের শুরুতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তবে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করলে সামনের মাসগুলোতে ক্রয়াদেশ বর্তমানের তুলনায় কিছুটা বাড়বে মনে হচ্ছে।
Pingback: মারিয়াকে রাখছেনা ইতালিয়ান ক্লাবটি - Amader Khabar