পৃথিবীতে দেশ সংখ্যা কয়টি

প্রশ্নটির উত্তর একটু জটিল, পৃথিবীতে দেশ আসলে কটি। নিজেরাই স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় না, কিন্তু আবার কিছু দেশ আছে, তাদের জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো স্বীকৃতি দেয় না। তাদের নাম নেই জাতিসংঘের তালিকায়। ফলে পৃথিবীতে আসলে দেশ ১৯৫, ১৯৭ না ২০৭ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়।

জাতিসংঘের স্বীকৃত দেশ:- জাতিসংঘের তালিকায় বর্তমানে আছে ১৯৩ টি দেশ। এর বাইরে আরও ২টি দেশকে তারা পর্যবেক্ষক দেশের তালিকায় রেখেছে। দেশ ২ টি হচ্ছে হলি সিটি/ভ্যাটিকান সিটি এবং ফিলিস্তিন।

জাতিসংঘের এই তালিকা নিয়ে আবার বিতর্ক আছে। যেমন তাইওয়ান, ১৯৪৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রই ছিল। বরং মেইনল্যান্ড চীনশাসিত এলাকা বলে এখন গণ্য করে এখন দেশটিকে জাতিসংঘ আগের মতো স্বশাসিত এলাকা বলে স্বীকৃতি দিচ্ছেনা। কসোভোর কথাই ধরা যাক আবার, জাতিসংঘের সদস্য প্রায় অর্ধেক দেশই কসোভোকে সার্বিয়ার অংশ বলে মনে করে। অনেকের কাছে কসোভো স্বাধীন দেশ। জাতিসংঘ তালিকা অনুযায়ী, পৃথিবীতে দেশ এখন ১৯৩টি।

দেশগুলোর নাম কী:- বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মিসর, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন, ওমান, লাইবেরিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমিনিস্তান, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, কোস্টারিকা, সিঙ্গাপুর, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ঘানা, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ইতালি, ব্রাজিল, জাপান, নেপাল, ইথিওপিয়া, যুক্তরাজ্য, তানজানিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, উগান্ডা, সুদান, আফগানিস্তান, পেরু, মরক্কো, ক্যামেরুন, উত্তর কোরিয়া, বুরকিনা ফাসো, চিলি, জাম্বিয়া, সিরিয়া, মাল্টা, অস্ট্রেলিয়া, রোমানিয়া, কাজাখস্তান, ইকুয়েডর, জ্যামাইকা, লিথুয়ানিয়া, বতসোয়ানা, উত্তর মেসিডোনিয়া, লাটভিয়া, কম্বোডিয়া, জিম্বাবুয়ে, বেনিন, বলিভিয়া, কিউবা, চেক রিপাবলিক, পর্তুগাল, কানাডা, সৌদি আরব, অ্যাঙ্গোলা, শ্রীলঙ্কা, মোজাম্বিক, ভেনেজুয়েলা, কোত দিভোয়ার বা আইভরি কোস্ট, মালি, মালাউই, গুয়াতেমালা, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, চাদ, গিনি, বুরুন্ডি, বেলজিয়াম, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, আজারবাইজান, স্পেন, আলজেরিয়া, ইরাক, পোল্যান্ড, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইয়েমেন, মাদাগাস্কার, নাইজার, সেনেগাল, সোমালিয়া, রুয়ান্ডা, তিউনিসিয়া, হাইতি, ডমিনিকান রিপাবলিক, জর্ডান, সুইডেন, হন্ডুরাস, পাপুয়া নিউ গিনি, সুইজারল্যান্ড, লাওস, লিবিয়া, কঙ্গো, নিউজিল্যান্ড, কুয়েত, জর্জিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, বেলারুশ, সার্বিয়া, টোগো, প্যারাগুয়ে, লেবানন, এল সালভাদর, ডেনমার্ক, স্লোভাকিয়া, ফিজি, আয়ারল্যান্ড, মৌরিতানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইরিত্রিয়া, মঙ্গোলিয়া, কাতার, নামিবিয়া, গ্যাবন, ভুটান, স্লোভেনিয়া, বাহরাইন, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, ইসরায়েল, ডোমিনিকা, মোনাকো, সিয়েরা লিওন, বুলগেরিয়া, নিকারাগুয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, পানামা, মলদোভা, উরুগুয়ে, আর্মেনিয়া, সান মারিনো, ইসোয়াতিনি, কোমোরোস, আলবেনিয়া, গাম্বিয়া, লেসেতে, গিনি-বিসাউ, ইকুইটরিয়াল গায়ানা, পূর্ব তিমুর বা তিমুর-লেস্তে, মরিশাস, জিবুতি, গায়ানা, মন্টেনেগ্রো, কেপ ভার্দে, বাহামাস, বার্বাডোজ, সেইন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইন, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, মার্শাল আইল্যান্ড, লিচটেনস্টেইন, টুভালু, সাইপ্রাস, লুক্সেমবার্গ, মাইক্রোনেশিয়া, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, ব্রুনেই, আইসল্যান্ড, সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, কিরিবাতি, টোঙ্গো, অ্যান্ডোরা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সলোমান আইল্যান্ড, সুরিনাম, বেলিজ, ভানুয়াতু, সামোয়া, গ্রেনাডা, সিসেলেস, নাউরু ও পালাউ। এবং সঙ্গে যুক্ত হবে হলি সিটি বা ভ্যাটিকান সিটি ও ফিলিস্তিন।

১৯৫টি দেশের মধ্যে ৫৪টি দেশই আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত। এশিয়া মহাদেশের ৪৮টি দেশ, ইউরোপ মহাদেশ ৪৪টি দেশ, লাতিন আমেরিকা ও দা ক্যারাবিয়ানে অন্তর্ভুক্ত ৩৩ টি দেশ, ১৪টি দেশ আছে ওশেনিয়া মহাদেশে এবং উত্তর আমেরিকা মহাদেশ ২টি দেশ নিয়ে গঠিত।

তবে এমন অনেক অঞ্চল আছে জাতিসংঘের তালিকায় নেই, বা আংশিক স্বীকৃত। অর্থাৎ অনেকেই স্বীকৃতি দেন না অনেকে হয়তো মানেন। এসকল দেশ বা অঞ্চলকে হিসেবে ধরলে দেশের সংখ্যা হবে ২০৭ বা আরও বেশি।

কসোভো:- সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে তারা ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। তাদের স্বীকৃতি দেয়নি ১৫টি দেশ। জাতিসংঘের সদস্য ৯৮টি দেশ অবশ্য তাদের স্বীকৃতি দেয়।

গ্রিনল্যান্ড:- একটি বিশাল দ্বীপ উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর আর্কটিক বা উত্তর মেরুর মাঝামাঝি অবস্থান। এটিকে আলাদা দেশ বলে মনে করেন অনেকেই। অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়েই তাদের সার্বভৌমত্ব আছে। দ্বীপটি আসলে পরিচালনা করে ডেনমার্ক, কয়েক হাজার মাইল দূরে যার অবস্থান। অর্থাৎ ডেনমার্কের অধীন স্বনিয়ন্ত্রিত অংশ তারা।

আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়া:- ককেশাস অঞ্চলের আরও ২ টি বিরোধপূর্ণ এলাকা, যারা রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধের পর ২০০৮ সালের জর্জিয়া থেকে আলাদা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য অধিকাংশ দেশ তাদের জর্জিয়া রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, সিরিয়াসহ বেশ কিছু দেশ তাদের স্বাধীনতা স্বীকার করে। আবার জর্জিয়ার সরকার এ দুটিকে রুশ-অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করে।

রিপাবলিক অব কাবিন্ডা:- পর্তুগাল অধিকৃত ছিল এক সময়, এখন অ্যাঙ্গোলা তাদের একটি প্রদেশ বলেই মনে করে। কিন্তু কাবিন্ডা নিজেরা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে স্বাধীন দেশ হিসেবেই।

নর্থ সাইপ্রাস, তুর্কি সাইপ্রাস বা টার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দান সাইপ্রাস (টিআরএনসি):- যেই নামেই ডাকা হোক, আসলে এটি সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলের নাম। বর্তমানে এই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে মেনে নেয় তুরস্ক। এটি তুরস্কের অধিকৃত একটি অঞ্চল বাকি সবাই মনে করে । এই অঞ্চলকে বাংলাদেশ ১৯৮৩ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপে সেই স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নতুন নিয়ম

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক:- ২০১৪ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে ইউক্রেনে রাশিয়া-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোচের পতন হলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রজাতন্ত্রের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল নিলে নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেন ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রিমিয়া তৎকালীন রুশ প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল ১৯৫৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত।

রিপাবলিক অব সোমালিল্যান্ড:- সোমালিয়া থেকে ১৯৯১ সালে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। উত্তর সোমালিয়ার একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটিকে সোমালিয়ার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ট্রান্স-নিস্টার বা ট্রান্সনিস্ত্রিয়া:- দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। মলদোভা-ইউক্রেন সীমান্ত আর নিস্তার নদীর মাঝের একটি ছোট ভূখণ্ড, যা মালদোভা থেকে আলাদা।