মাছ চাষ শিখতে ৭ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব
মাছ চাষ শিখতে ৭ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব
একশজনের বিদেশে মাছ চাষ শিখতে প্রশিক্ষণ বাবদ ৭ কোটি টাকা চেয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এমন প্রস্তাবনায় প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন, সঙ্গে ব্যয় ও ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমানো জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর কমিশনের সুপারিশ মেনে দুই ব্যাচে ২০ জন কর্মকর্তাকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পাঠানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।
প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান সরকারি মৎস্য খামার ও বাঁওড়সমূহের সক্ষমতা এবং মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন’ এ ব্যয়প্রস্তাব করা হয়। কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের বন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মাদ মফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পে ১০০ জনের বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। আমরা এ সংখ্যা কমিয়ে দিতে বলেছি। যারা মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত শুধু তারাই ২ টি ব্যাচে ভ্রমণ করতে পারেন এটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তারা যেন ভ্রমণ না করেন এটাও বলা হয়েছে।
কোন দেশে ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বাংলাদেশের আশপাশে থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম এসব দেশ হতে পারে। যেখানে মাছের চাষাবাদ হয়। মাছ চাষ ও প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে। মংস্য দপ্তরের সঙ্গে যারা রয়েছেন শুধু তারাই ভ্রমণ করবেন। যাতে দেশে মাছ চাষ আরও সম্প্রসারণ হয়। এক হাজার ৪০৮ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয়, মৎস্য অধিদপ্তর সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১ টি গাড়ি হায়ারিং, চালক ও তেল বাবদ এক কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্রমণব্যয় বাবদ ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে থোক বাবদ। ৫ হাজার ৪৪০ জনের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ বাবদ ১৫ কোটি, ৮ কোটি পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ, গ্যাস ও জ্বালানিখাত দেখিয়ে থোক বরাদ্দ বাবদ ৫০ লাখ এবং ৫৬ টি প্রদর্শনী খামার পরিচালনা বাবদ ১১ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু মাছ চাষ বিষয়টা এমন নয়, একটা টেকনিক্যাল বিষয়ও। আমাদের চাষের জায়গা আছে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চাষের জন্য এক ইঞ্চি মাটিও ফেলে রাখা যাবে না। আমরাও একই উদ্যোগ নিয়েছি। একশ জনের পরিবর্তে এটা ২০ জনে নামানো হবে। আমরা পিছিয়ে আছি এগ্রিকালচারে আইটি ব্যবহারে। আইটি ব্যবহার করে কীভাবে খামার করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবো।
১৯৮০ সালে হ্যাচারিগুলোতে মাছের পোনা তৈরি অন্যতম পদক্ষেপ ছিল। এর জন্য আজ আমরা মাছ চাষে সাফল্য অর্জন করছি। মৎস্য অধিদপ্তরের কিছু লোক রাখা হবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ভ্রমণের জন্য। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য আমরা ভ্রমণে সংখ্যা ও ব্যয় কমাবো। ২০৪১ সালে ৮৬ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তাতে এ খাতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। শুধু মানুষের দেখানোর জন্য নয়, আমরা মাছ চাষের জন্য আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যাবো।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিদ্যমান ১১৩টি খামার সংস্কার ও ৫৬টি খামারের প্রতিটি খামারে একটি পুকুর নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হবে। ৫৩টি খামারে প্রশিক্ষণ সুবিধাদিসহ অফিস ভবন ও ১২০টি লেবার শেড নির্মাণ, দুটি খামারে উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও ক্রায়োপ্রিজারভেশন সুবিধাদি স্থাপন করা হবে। সরকারি মৎস্য খামার আধুনিকীকরণ ও সরকারি বাঁওড় উন্নয়ন, খামারে উন্নত মৎস্য প্রযুক্তি স্থাপন, উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন প্রজননক্ষম মাছ সংরক্ষণ এবং মৎস্য খামারে নিয়োজিত জনবলের কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে দক্ষতা উন্নয়ন। ছয়টি সরকারি বাঁওড় উন্নয়নের পাশাপাশি নিবিড় মৎস্য চাষ ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৫ হাজার ৫৪০ জন মৎস্য খামার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, উদ্যোক্তা ও বেসরকারি হ্যাচারি সংশ্লিষ্ট জনবলকে।
কখন যাবেন রোদে
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ১৪৩টি ছোট-বড় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার, হ্যাচারি ও নার্সারি রয়েছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য সেক্টরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নে মৎস্য অধিদপ্তর প্রধান ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নে মৎস্য অধিদপ্তর প্রধান ভূমিকা পালন করে। মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় তিন দশমিক ৫৭ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান। দেশের মোট কৃষিজ আয়ের ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ মৎস্য উপখাত থেকে আসে। দেশের রপ্তানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে মৎস্য উপখাত থেকে।
২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশ গড়তে মৎস্যখাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে জনপ্রতি মাছ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো আবশ্যক। বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে ৫ম। বিগত ১০ বছরে মাছের উৎপাদনে জিডিপি গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে প্রায় ছয় দশমিক ১১ শতাংশ। দেশের জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশের অধিক এ সেক্টরের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান দেয় মাছ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়।