ভ্রমণ

ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমণ

ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমণ

বালিকে “দ্য লাস্ট প্যারাডাইস অন আর্থ” অভিহিত করা হয়। বালি Bali  ইন্দোনেশিয়া এর জাভা শহর থেকে মাত্র ২/৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি দ্বীপ। ইন্দোনেশিয়ার Indonesia  অন্যান্য প্রদেশ থেকে বালি বেশ স্বতন্ত্র। বালির সংস্কৃতি এখানে আসা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষিত করে। বালি দ্বীপের বাসিন্দাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মুগ্ধতায় এখানে আগত পর্যটকেরা বারবার বালিতে অবকাশ যাপনের জন্য ফিরে আসেন।  বালির পবিত্রময় পর্বতকে বালির বাসিন্দারা পৃথিবীর ৮ টি চক্র বিন্দুর মধ্যে অন্যতম হিসাবে মনে করে। বালির স্থানীয় বাসিন্দারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে।

বালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: সারা বছরই বালির আবহাওয়া চমৎকার থাকে। এপ্রিল ও মে অথবা অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বালি ভ্রমণ করলে বৃষ্টি এবং পর্যটকদের ভিড় অনেকাংশেই এড়ানো যায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস এই দ্বীপটি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। নববিবাহিত দম্পতি কিংবা প্রেমিক যুগলদের অবকাশ যাপনের সকল আয়োজন রয়েছে এই দ্বীপে। বালিতে বিভিন্ন ধরণের পর্যটকদের আনাগোনা ঘটলেও মধুচন্দ্রিমার ক্ষেত্রে বালি দ্বীপ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। বালি দ্বীপে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকদের আগমণ ঘটলেও অস্ট্রেলীয়ানদের কাছে বালি সর্বাধিক জনপ্রিয়।

উলুয়াতু:

xr:d:DAFYj5wwcLQ:54,j:47941372912,t:23030202

বালির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের নাম উলুয়াতু। নির্মল পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উলুয়াতু-তে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বিচিত্রানুষ্ঠান পর্যটকদের মোহিত করে। এগারো শতকে নির্মিত পুরনো মন্দির রয়েছে বুকিট উপদ্বীপে। সমুদ্রের বুকে পাহাড়ের ৮০ মিটার উপর স্থাপিত প্রাচীন এই মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলীও বেশ নজরকাড়া। মন্দিরের উপর থেকে এক অপার্থিব সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়।আর বালিতে সার্ফিং করতে চাইলে এমন সুন্দর স্থান আর কোথাও পাবেন না।

কিউটা সৈকত:

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যটকদের সাথে বেশ আন্তরিক। বালির সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কিউটা সৈকত। কিউটা সৈকত তার রুপের মোহনীয়তায় জানিয়ে দেয় কেন বালির শ্রেষ্ঠত্ব। কিউটার সাদা ও সমতল সৈকত সার্ফিং ও ওয়ার্টার স্কিয়িং প্রেমীদের কাছে যেন সোনায় সোহাগা। এছাড়া সৈকতের কাছের মার্কেটে নানা রকম হস্তশিল্প, বর্ণিল পোশাক ইত্যাদি নানান ধরণের জিনিস পাওয়া যায়। আর কিউটা সৈকত থেকে সবচেয়ে কাছের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যেতে মাত্র ১৫-২০ মিনিট মতো।

কিন্তামানি মাউন্ট বাটুর:

xr:d:DAFYj5wwcLQ:56,j:47942963356,t:23030202

বালি দ্বীপের পূর্বে রয়েছে কিন্তামানি মাউন্ট বাতুর  ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি ১৮০০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৪ বার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে আর ১৯৭০ সালে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। পাহাড় বেয়ে ছড়িয়ে থাকা শীতল লাভা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাউন্ট বাটুরের পাদদেশে আছে বালির সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক লেক বাটুর। পাহাড় ও বসে হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য টিলার উপর ছোট ছোট রেঁস্তোরা গড়ে তোলা হয়েছে।

তানাহ্ লট:

xr:d:DAFYj5wwcLQ:58,j:47943505454,t:23030202

পাহাড়ে ঘেরা সমুদ্রের কোলঘেষে থাকা তানাহ লট তীর্থযাত্রীদের কাছে একটি পবিত্রতম স্থান। জোয়ারের সময় মন্দিরগুলো ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেন পদ্মফুলের মত ভাসতে থাকে। এখানে তিনটি পাহাড়ের চূড়ায় আছে প্রায়  হাজার বছরের পুরনো তিনটি দৃষ্টিনন্দন মন্দির। এই মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী, শান্ত পরিবেশ মনকে স্নিগ্ধতায় ভড়িয়ে তোলে।

আর্ট ভিলেজ:

xr:d:DAFYj5wwcLQ:61,j:47943908063,t:23030202

হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত আর্ট ভিলেজ বালির প্রাচীনতম গ্রামের মধ্যে অন্যতম। এখানে  আগত পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য চলে নানা আয়োজন। গ্রামের কোন অংশে চলে রূপার অলঙ্কার তৈরী, আর কোথাও চলে কাঠের কারুকাজের চিত্রকর্ম বা স্যুভেনির বানানোর কাজ।  বালির পর্যটন শিল্পের বিকাশের সাথে যেন এই গ্রাম জড়িয়ে আছে।

 

তির্তা এম্পুল:

স্থানীয়দের কাছে তির্তা এম্পুল মন্দিরের জল অতি পবিত্র বস্তু। তির্তা এম্পুল বালির একটি প্রাচীন মন্দির। কিন্তামনির থেকে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরের এক পাশে সবুজ পাহাড় এবং অন্য পাশে কয়েকটি জলাশয় রয়েছে। আর এই সকল ছোট ছোট জলাশয়ে পানি আসে পাহাড় থেকে আসা এক প্রস্রবণের মাধ্যমে। এখানে আগত দর্শনার্থীদের অনেকেই প্রস্রবণের জল শ্রদ্ধার সাথে মাথায় স্পর্শ করান।

 

লোভিনা:

পর্যটকদের ডলফিন দেখার জন্য লোভিনা বীচে একধরনের বিশেষ নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তবে ডলফিনের লাফালাফি আর সাঁতার দেখাতে হলে খুব ভোরে লোভিনার পথে রওনা হতে হবে। ডলফিন দেখার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের নাম লোভিনা।

বালির পাখিশালা:

xr:d:DAFYj5wwcLQ:63,j:47944231363,t:23030203

২ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত পাখিশালায় বিভিন্ন দেশের নানান বর্ণ ও বৈচিত্র্যের অসংখ্য পাখি রয়েছে। বালিতে অবস্থিত `বার্ড পার্ক` ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় পাখিশালা। স্বপরিবারে বেড়াতে আসা কিংবা হানিমুনে আগত পর্যটকেরা এই বার্ড পার্ক একবারের জন্য হলেও ঘুরে যান।

 

সানুর বীচ:

এই স্থানটি বালির অন্যতম প্রধান পর্যটন স্পট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুব ভোর থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য বিখ্যাত এই বীচে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এসে ভিড় করেন। বালি দ্বীপে সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে হলে আপনাকে সানুর বীচে আসতেই হবে। এছাড়া শান্ত, অগভীর সানুর বীচে সার্ফিংয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। সকাল বেলার সানুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ একজন ভ্রমণকারীকে স্বর্গীয় প্রশান্তি এনে দেয়। আপনার কাছে যদি সময় ও অর্থ থাকলে আরো যেসব স্পট ঘুরে আসতে পারেন তার মধ্যে আপসাইড ডাউন ওয়ার্ল্ড বালি, জিমব্রান বীচ,  তামপ্যাক সিরিং, বাজরা সান্ধি মিউজিয়াম, টাবানা, বেডুং, কুলাংকুন, জিয়ানইয়ান, বানলি, কারানগাছেম, ডেনপাসার ও বুলেলেং  অন্যতম। দেরি না করে হানিমুনটা তাহলে বালিতেই কাটিয়ে আসুন।

 

এয়ার টিকেট:

এয়ার টিকেটের দাম সাধারণত যাত্রার তারিখে কতদিন আগে থেকে কেনা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। মাস দুই আগে বালির টিকেট কাটলে ৩৫ থেকে ৪৩ হাজার টাকা লাগে। আবার সেই টিকেটাই ২/৩ দিন আগে কাটতে গেলে ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাগে। বাংলাদেশ থেকে এয়ার এশিয়া, মালিন্দো এয়ার, স্কুট ইত্যাদি এয়ারলাইন্স বালি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

 

থাকবেন কোথায়:

কুটা বিচ বা লেগিয়ান বিচের কাছাকাছি থাকলে হোটেল থেকেই সাগরের অনুভূতি পাবেন। বালিতে হোটেল ভাড়া তেমন আহামরি রকমের বেশি নয়। ৩৫০০ থেকে ৫০০০ বাংলাদেশী টাকা খরচ করলে কমপ্লিমেন্টারি নাস্তাসহ ভালমানের হোটেলে থাকতে পারবেন।  অনলাইনে হোটেলে বুকিং দিয়ে নিন।

কি খাবে :

বালিতে ম্যাকডোনাল, বারগার কিং, কেএফসি ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত ফুড চেইন শপের আউটলেট রয়েছে। আর কম খরচে বাহারি সি ফুড খেতে চাইলে বালির জুড়ি নেই। আর স্থানীয় ইন্দোনেশিয়ান খাবার যেমন – নাসি আয়াম, নাসি গোরাং, মি আয়াম ইত্যাদি খেতে চাইলে ৬০ হাজার রুপিয়া থেকে ৮০ হাজার রুপিয়া লাগবে।

কেনাকাটা:

বালির সব জায়গা থেকেই চাইলে কেনার জন্য কিছু না কিছু পাবেনই। Krisna Market ও Agung Bali মার্কেট থেকে ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাটিকের ডিজাইন করা সারং, জামা, শার্ট, স্কার্ফ ইত্যাদি কিনতে পারেন। এছাড়াও কিনতে পারেন কফি, চকলেট, কাঠের তৈরি জিনিস, হ্যান্ডিক্রাফটস, রুপার গয়না, বিডস আর মেটালিকের তৈরি গয়না, প্রসাধনী সামগ্রী, জুতা, পোষাক, স্যান্ডেল এবং ব্যাগ।

One thought on “ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *