ভ্রমণ

অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি…

অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি…

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে মসুয়া গ্রামে অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। এক সময়  বাড়িটিকে পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো বলে অভিহিত করা হতো।এই বাড়িতে প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জন্মেছেন ও সুকুমার রায় চৌধুরীর শৈশব কাল কেটেছে।

জরাজীর্ণ বাড়িটির পাশে দরবারগৃহটি বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা এটি দেখা শুনা তো দূরে থাক ইতিহাস পরযন্ত জানেন না। কারন সেখানে কোন তথ্য চোখে পরেনি। এটি প্রায় বিলুপ্ত, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে বিভিন্ন ভাবে কথা বলেও এখনো সুরাহা হয়নি বা রক্ষনাবেক্ষন করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি শুধুমাত্র একটি সাইন বোর্ড ব্যাস, এটাই তাদের কাছে রক্ষনাবেক্ষন এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো, প্রায় বিলুপ্ত এ বাড়িটির পুরানো ইটের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর পূর্ব পুরুষের নানা স্মৃতি। দ্বিতল ভবনটির ছাদ ভেঙ্গে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে লতাপাতা, শ্যাওলা আর বটবৃক্ষ ঢেকেগেছে ঐতিহাসিক ভবনটির চারপাশে বাহ্যিক সৌন্দর্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ২ একর জমির উপর নির্মিত এ জমিদার বাড়িটি সরকারের মালিকানায় থাকলেও বেশির ভাগ ভূমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। পুরাকীর্তি নিদর্শনের রক্ষণাবেক্ষণ যারা করেন তাদের উচিত ছিল অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের এ বাড়িটিকে পরিত্যক্ত হতেনা দিয়ে আরও ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা।
এ বাড়িটি সহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র ও গবেষণাগার গড়ে তোলা যায়।প্রত্নতত্ত বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন মহলের কাছে আহবান।

কিভাবে যাবেন ঢাকা থেকে কটিয়াদী দূরত্ব ভৈরব হয়ে ১১৫ কিলোমিটার প্রায় । ঢাকা থেকে যে বাস গুলো ভৈরব হয়ে কিশোরগঞ্জ যায় তার যে কোন একটায় চলে আসতে পারবেন কটিয়াদি উপজেলায়। বাসে আসতে সময় লাগবে প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টার মত। ঢাকার গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্য সুপার বা যাতায়াত বাসে আসতে পারবেন, ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে উজানভাটি বা অন্য কোন বাস ভাড়া ২৫০-২৮০টাকা লাগবে। চাইলে নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে ডে ট্রিপ এর জন্যে ঘুরে যেতে পারবেন। এছাড়া ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে হলে আপনাকে আন্তঃনগর ট্রেন এগারোসিন্দুর কিংবা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে মানিকখালী স্টেশনে নামতে হবে। মানিকখালী স্টেশন থেকে ইজিবাইক বা সিএনজিতে করে আসতে হবে কটিয়াদী। কটিয়াদী থেকে ইজিবাইক/অটোরিক্সা অথবা সিএনজি রিজার্ভ করে ৭ কিলোমিটার দূরে মসূয়া গ্রামে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িতে যেতে পারবেন।

সময় থাকলে কিশোরগঞ্জ শহরের কাছাকাছি আরও কিছু জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারেন: ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগা, মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার জঙ্গলবাড়ী, ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, ও নিকলি হাওর কটিয়াদি থেকে কিশোরগঞ্জ এর দূরত্ব প্রায় ২৪ কিলোমিটার।

যদি থাকতে চান যেতে হবে কিশোরগঞ্জ জেলে সদরে। কিশোরগঞ্জ সদরে গাংচিল, নিরালা, রিভার ভিউ, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছ। থাকা ও খাওয়া থাকার জন্য এখানে একটি মাত্র রেস্ট হাউজ থাকলেও এটি প্রায় বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। খাবার জন্যও তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তবে কটিয়াদী বাজারে কিছু সাধারণ মানের খাবার হোটেল পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *