স্বাস্থ্য ও পুষ্টি

ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম

চিকিৎসকরা বলে থাকেন, প্রতিদিন ৩০-৬০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে। ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান প্রায় ৭০-৮৫ শতাংশ কোকোয়া সমৃদ্ধ চকলেটকেই বলে ডার্ক চকলেট। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে নিয়মিত চকলেট খেলে, ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধেও ডার্ক চকলেট সহায়তা করে বেশ। নিয়মিত ডার্ক টকলেট খাওয়া যায়, তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমতে শুরু করে, ও রক্তচাপও স্বাভাবিক হয়ে যায়। মাথায় রাখতে হবে, আপেল বা ভালো খাবারের পরিবর্তে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকরা দেন না।

ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম

বহু শতাব্দী ধরে কোকোয়া বীজ এতই মূল্যবান ছিল যে, এ্ই বীজ গুলোকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কোকোয়া বীজের জাদুকরী শক্তি আছে বিশ্বাস করত দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষজন। কিংবদন্তি রয়েছে অ্যাজটেক রাজা মন্টেজুম; যখন স্প্যানিশ পর্যটকদের চকলেট খেতে দেন তখন তারা এর তিতকুটে স্বাদ একেবারেই পছন্দ করেনি। কিন্তু ১৭ শতাব্দীতে এসে ধীরে ধীরে ইউরোপে চকলেট জনপ্রিয় হতে শুরু করে। মায়া ও আজটেক মানুষের কথা মিথ্যা নয় আসলেই চকলেটের জাদুকরী গুণ রয়েছে।

তবে ভালো মানের কালো বা ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান প্রায় ৭০-৮৫ শতাংশ কোকোয়া সমৃদ্ধ চকলেটকেই বলে ডার্ক চকলেট। এতে আছে কপার, আঁশ, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম, লোহা, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। ডার্ক চকলেট দিনে অল্প পরিমাণ খেলেও ৫০ ভাগ পর্যন্ত হৃদ্রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে নিয়মিত চকলেট খেলে, ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধেও ডার্ক চকলেট সহায়তা করে বেশ।

ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় জৈব উপাদান রয়েছে, এসব উপাদান হলো পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানল যা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে ও ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো ফলের তুলনায় ডার্ক চকলেটে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান বেশি থাকে।

নেচার নিউরোসায়েন্সের গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০-৫৯ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তি যারা তিন মাস উচ্চ ফ্ল্যাভানলযুক্ত কোকোয়া পানীয় পান করেছেন, তাঁদের স্মৃতিশক্তি বেড়েছে। এটি বিষণ্নতা দূর করতে মহৌষধের মতো কাজ করে চকলেটে থাকা ট্রিপটফেন নামের একটি উপাদান বিষণ্নতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ট্রিপটফেন মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে শরীরে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে ২ সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়। এ ছাড়া চকলেটে ফিনাইল ইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে, গবেষকেরা যার নাম দিয়েছেন ‘লাভ কেমিক্যাল। কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা মানুষকে আর উদ্দীপিত করে তোলে তাই সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যও নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

ভালো চকলেট চেনার উপায়:-

সর্বোচ্চ মাত্রার কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটই ভালো। চকলেট এর গুণগত মান কমে যায় প্রক্রিয়াজাত করলে। এ ছাড়া শরীরের জন্য উপকারী নয় কোকোয়া বাটার, চিনি ও চর্বিসমৃদ্ধ চকলেট, তাই চকলেট কেনার সময় সবচেয়ে কম মিষ্টিটি কিনতে হবে। তাই সম্ভব হলে অরগানিক কি না সেটাও দেখে নিতে হবে। যদি চকলেটের লেবেলে লেখা থাকে প্রসেসড উইথ অ্যালকালি’ তবে তা পরিহার করা ভালো। কোকোয়া বাটার–বিহীন চকলেট কিনুন। কিন্তু সব উপকারী গুণাগুণ আছে বলেই যত খুশি চকলেট খাওয়া যাবেনা। সপ্তাহে ভালো মানের অল্প চকলেট খেলেও উপকারিতা পাবেন।

ডার্ক চকলেটের পুষ্টিগুণ:-

৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ কোকো সম্পন্ন ১০০ গ্রামের ডার্ক চকলেটের একটি বারে পাওয়া যায় ফাইবার ১১ গ্রাম, আয়রন ৬৭ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়াম ৫৮ শতাংশ, কপার ৮৯ শতাংশ ও ৯৮ শতাংশ ম্যাংগানিজ। সঙ্গে পাবেন স্যাচুরেটেড, মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:-

ধমনিতে নাইট্রিক অক্সাই়ড তৈরি হয় ডার্ক চকলেট খেলে। তাই রক্ত চলাচল আরও সহজে হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে মস্তিষ্ক ধমনিকে বিশ্রাম নেওয়ার বার্তা পাঠায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:-

ধমনিতে কোলেস্টেরল জমার হার কমে ডার্ক চকোলেট খেলে। ডার্ক চকোলেট শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে ও ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়:-

ডার্ক চকলেট নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা এতটা বৃদ্ধি পায় যে দেহে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের খোঁজ পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, আবার জটিল সব রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:-

ডার্ক চকলেট নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। টানা আট সপ্তাহ যদি নিয়মিত ডার্ক টকলেট খাওয়া যায়, তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমতে শুরু করে, ও রক্তচাপও স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সুরক্ষা দেয় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে:-

ডার্ক চকলেটের বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থ থাকে তা ত্বকের পক্ষে বেশ উপকারি। ডার্ক চকলেট ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় ও ত্বক উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি

প্রতিদিন কী পরিমাণ ডার্ক চকোলেট খাওয়া যেতে পারে?

চিকিৎসকরা বলে থাকেন, প্রতিদিন ৩০-৬০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে। প্রায় সমপরিমাণ ক্যালোরি মাঝারি আকারের একটি আপেল ও সেই আকারের ডার্ক চকোলেটে থাকে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, আপেল বা ভালো খাবারের পরিবর্তে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকরা দেন না। তবে তাদের কথায় যেকোনো স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে ডার্ক চকোলেট খাওয়া যেতে পারে।

One thought on “ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *