ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ সংযুক্ত সেপ্টেম্বরে: রেলমন্ত্রী
ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ সংযুক্ত সেপ্টেম্বরে: রেলমন্ত্রী
ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের শেষেই সংযুক্ত হবে বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। চলমান প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন রেলমন্ত্রী। অতিদ্রুত বাকি কাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কক্সবাজারের ঝিলংজায় দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে গত মঙ্গলবার ১৬ মে রেলমন্ত্রী একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বলে আশা রাখছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরেই এ রেল যাত্রার শুভ উদ্বোধন করবেন। এটি চালু হলে দেশের পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে রেল।
দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন এ পথের প্রধান আকর্ষণ। চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। বিশাল আকৃতির একটি ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা, তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি এ আবহের মাঝেই আসবে ট্রেন। দৃষ্টিনন্দন আধুনিক এ স্টেশন উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো দেখাবে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ। এটি নির্মাণের সময় বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, চীন, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করা হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতের তীর হতে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজার চান্দের পাড়ায় প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক ঝিনুকাকৃতির রেল স্টেশন এখন দৃশ্যমান।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটার রেল লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ এবং বাকি ২৫ কিলোমিটারের কাজ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে রেললাইন পুরোপুরি চালু হলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে পর্যটনশিল্পে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার নতুন যুগের সূচনা হতে পারে অক্টোবরেই।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, সব কিছু ঠিক-ঠাক থাকলে চলমান ২৫ কিলোমিটারের কাজ আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে পারব। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ২৫ কিলোমিটারের, শুধু স্লিপার আর রেল বিট বসবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই ২ মাসে ফিনিশিং ওয়ার্কসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করে অক্টোবরে ট্রায়ালরান উদ্বোধন করতে পারব বলে আশা করছি। আমরা প্রথমত এক জোড়া ট্রেন দিয়ে হলেও চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ ভাগের বেশি। এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয় তল বিশিষ্ট স্টেশনটির সম্পূর্ণ ফ্লোর এরিয়া ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং শ্রমিকসহ মোট ৬ শতাধিক লোকের চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ দৃশ্যমান। এখন চারদিকে চলছে গ্লাস ফিটিংস, ছাদের স্টিল ক্যানোফি, আর নানা ধরনের ফিটিংস বসানোর কাজ। রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
চিত্রনায়ক ফারুকের ব্যাংকঋণ, আসলে কত?
পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। শুধু এই আইকনিক রেলস্টেশন নয়, এই প্রকল্পের আওতায় আরও ৯ টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে রেলের এ মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মেগাপ্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপরদিকে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে রেললাইন নির্মাণ কাজটি করছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যে অংশে কাজ করেছে তাদের সেই অংশের কাজ খুব দ্রুত শেষ হয়েছে। তমা কনস্ট্রাকশনের অংশের কাজও এখন চলছে।
গত মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আইকনিক স্টেশনস্থল পরিদর্শন শেষে রামু হতে মায়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।