চিত্রনায়ক ফারুকের ব্যাংকঋণ, আসলে কত?
চিত্রনায়ক ফারুকের ব্যাংকঋণ, আসলে কত?
চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের ব্যাংকঋণ নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। কেউ কেউ বলছেন ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে তাঁর। অভিনেতার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের সত্যতা মেলেনি। এটা সত্য তিনি ঋণখেলাপি। তাহলে তাঁর ঋণের পরিমাণ কত?
ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠানের ব্যাংকঋণ থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ২৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এরপর ২ কোটি টাকা পরিশোধও করা হয়। তবে বিষয়টা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিষ্কার তথ্য সবাইকে জানাতে পারব। তবে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুদসহ প্রায় ১০১ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে প্রয়াত অভিনেতার নামে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আকবর হোসেন পাঠান। গাজীপুরে ১১৫ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলেন ফারুক ডাইং নিটিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। আবারও এই প্রকল্পে ২০১৩ সালে ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক। এর কিছুদিন পর ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে, বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। সোনালী ব্যাংক ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে।
ঢাকা-১৭ আসন থেকে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান আকবর হোসেন পাঠান। বিশেষ বিবেচনায় ঐ সময় ঋণটি পুনঃ তফসিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে বিশেষ অনুমতিও দেয়, তবে কারখানা আর চালু হয়নি ঋণও শোধ করেননি ফারুক। পরে ব্যাংক আবার অর্থঋণ আদালতে জারি মামলা দায়ের করে। তখন ব্যাংকঋণ সুদসহ বেড়ে দাঁড়ায় ১০১ কোটি টাকা। গাজীপুরের কারখানা ব্যাংকের কাছে বন্ধকী হিসেবে রয়েছে।
ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংক ঋণ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকে ফারুকের দেনা থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই কারখানায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। মর্টগেজ সম্পত্তি ভোগ, দখল ও বুঝিয়ে নেওয়ার রায় পেয়েছে ব্যাংক। এরপর বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী টাকা আদায়ের এটাই একমাত্র উপায়।
বিধ্বস্ত জনপদ সেন্ট মার্টিন
গতকাল সোমবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন চিত্রনায়ক ফারুক। ফারুকের মরদেহ বহন করা উড়োজাহাজটি আজ মঙ্গলবার সকাল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭টা ৫০ মিনিটে অবতরণ করে। সকাল সোয়া আটটায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে ফারুকের মরদেহ বের করা হয়। বিমানবন্দর থেকে ফারুকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর উত্তরায় তাঁর নিজের বাসভবনে। সেখান থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সেখানে রাখা হয় মরদেহ।
এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। এফডিসিতে ফারুককে শেষবারের মতো বিদায় জানান নির্মাতা, প্রযোজক, সহকর্মী শিল্পী ও কলাকুশলীরা। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে ফারুককে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়, সেখানে তাঁর জানাজা হয়। এরপর গুলশানে আজাদ মসজিদে তাঁর আরও একটি জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করাহয়।