জাতীয়

পদ্মা সেতুতে এক বছরে আয়

পদ্মা সেতুতে এক বছরে আয়

পদ্মা সেতু চালুর এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ রোববার। গত শুক্রবার পর্যন্ত এই সেতু থেকে সরকার টোল আদায় করেছে প্রায় ৭৯৫ কোটি টাকা। এ সময় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে ৫৬ লাখের বেশি। চালুর প্রথম বছর প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। সেতু বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। এখন ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়া যাচ্ছে তিন চার ঘণ্টায়। খুলনাতেও চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ। সহজ হয়েছে মালামাল পরিবহন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নানা জটিলতার পর দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল দুই ঠিকাদার চীনের। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার।

যুগান্তকারী এই স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প শেষ হতে দেড় দশক লেগেছে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা গত ৫ এপ্রিল পরিশোধ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকাও ১৯ জুন পরিশোধ করা হয়েগেছে। দুই দফায় মোট ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩ টাকা পরিশোধ করা হলো। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ২০০৭ সালে প্রকল্প নেওয়ার সময় পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১বছরে যে আয় হয়েছে, তা আরও বাড়বে। কারণ, সেতুতে রেল চলাচল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রকল্পের টাকায়। পুরো ব্যয় এখন সেতু কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। রেল ও বিদ্যুতের জন্য প্রকল্পে যে ব্যয় হয়েছে, সেই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করে দেবে।

দুটি বিকল্প নিয়ে রেল ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া সেতু বিভাগকে বার্ষিক হারে টোল দেবে। এর বাইরে গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সেবা সংস্থাও টোল দেবে। এ ক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণের বোঝা কমবে এবং টোল আয়ও বেড়ে যাবে। সেতু বিভাগের সচিব বলেন, পদ্মা সেতুর টোল ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে চুক্তি অনুসারে ঋণও পরিশোধ করছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, জিডিপিতে অবদান ও মানুষের দ্রুত যাতায়াতের মূল্য আরও অনেক। সমীক্ষা ও বাস্তবতা পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতিদিন পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করার কথা। ২০২৯ সালে তা হবে দৈনিক ৩৪ হাজার ৭২৫। ২০৫০ সালে এই সেতু দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলাচল করবে ৬৬ হাজার ৮২৯টি। সেতু বিভাগের হিসাবে, চালুর প্রথম বছর প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার করে যানবাহন চলাচল করেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ২৫ হাজার ৮০টি যানবাহন চলেছে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে

গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পুনরায় মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দৈনিক যানবাহন চলাচলের হার বেড়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, ২০২২ সালে সেতু থেকে টোল বাবদ ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা আয় করার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ২০২৯ সালে আয় হওয়ার কথা ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। আর ২০৫০ সালে এই সেতু থেকে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা আয় হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে ২০২৯ সাল থেকেই পদ্মা সেতু লাভজনক হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতি ১৫ বছর পরপর ১০ শতাংশ হার টোল বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথম ১ বছরে যানবাহন চলাচলের পরিমাণ ও আয়ের দিক থেকে পিছিয়ে আছে পদ্মা সেতু। টোলের টাকা থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট সরকারকে দিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, এরপর টোল আদায়ের জন্য যে ঠিকাদার পাঁচ বছরের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কে ৬৯৩ কোটি টাকা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে ব্যয় করতে হবে। এরপর যে টাকা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এসব খরচের পর টাকা থাকলে তা সেতু কর্তৃপক্ষের মুনাফা হিসেবে গণ্য হবে। আবার এই মুনাফা থেকে সরকারকে ২৫ শতাংশ করও দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *