খেলাধুলা

গোলে সহায়তায় এগিয়ে কারা

গোলে সহায়তায় এগিয়ে কারা

গোলটা যাঁর পা থেকে তৈরি হয়, তাঁকে খুব কম সময়ই মনে রাখা হয়। গোল যিনি করেন, তাঁকে ঘিরেই হয় সব উদ্‌যাপন। অনেক ক্ষেত্রে গোলদাতার চেয়ে একটি গোলের পেছনে যিনি গোলটিতে অ্যাসিস্ট বা সহায়তা করেছেন তাঁর অবদানই থাকে সবচেয়ে বেশি। একটা সময় ছিল, যখন প্লে–মেকার ও স্ট্রাইকারকে দাগ টেনে আলাদা করে দেওয়া যেত। কিন্তু আধুনিক ফুটবলে সে সীমারেখা অনেকটাই মুছে গেছে।

এর পেছনে অবশ্য ২ জন ফুটবলারের অবদান সবচেয়ে বেশি। লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-প্রায় দেড় দশক ধরে এই ২ জন সমানে গোল ও অ্যাসিস্ট করে গেছেন। ২১ শতকে সেরা ১০ গোলে সহায়তকারীর তালিকায়ও আছেন ২ জন, যেখানে মেসির অবস্থান আবার সবার ওপরে। এই শতকে সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তাকারীর তালিকাটি ফুটবল পরিসংখ্যান ভিত্তিক সাইট পপফুট। তালিকায় মেসির সঙ্গে আরও কারা আছেন।

লিওনেল মেসি:– ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টে ডি ব্রুইনার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও মোট অ্যাসিস্টে রাজত্ব মেসির দখলে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপাও। অ্যাসিস্টের চূড়ায়ও তাই তাঁর থাকাটা অনুমেয় ছিল। বার্সেলোনার হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করে গেছেন রেকর্ডের বরপুত্র মেসি। জাতীয় দলের হয়েও নিজে গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। ১০২৮ ম্যাচে ০.৩৫ গড়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার মোট অ্যাসিস্ট ৩৫৭টি।

কেভিন ডি ব্রুইনা:– কেভিন ডি ব্রুইনা এই শতকে বিশ্বের সেরা প্লেমেকারদের অন্যতম সংখ্যায় লিওনেল মেসির কাছে শীর্ষ স্থান হারালেও ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টের সংখ্যা বলছে। ২০০৮ সালে সিনিয়র দলে অভিষেক হয় ডি ব্রুইনার। চার বছর এই ক্লাবে খেলে ২০১২ সালে চলে যান চেলসিতে। যদিও এই ইংলিশ ক্লাবের হয়ে ৩ ম্যাচের বেশি খেলা হয়নি তাঁর। সিটির হয়ে নিজেকে সময়ের তো বটেই, সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এই বেলজিয়ান তারকা। জাতীয় দলের হয়েও একই সঙ্গে আলো ছড়ান ডি ব্রুইনা। চলতি মৌসুমে জিতেছেন ঐতিহাসিক ট্রেবলে। সব মিলিয়ে ম্যাচপ্রতি ০.৪১ অ্যাসিস্টে তাঁর গোলে মোট সহায়তার সংখ্যা ২৮১।

মেসুত ওজিল:- বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। নিজের সময়ের অন্যতম সেরা প্লে মেকার মেসুত ওজিলকে নিয়ে আক্ষেপই যেন বেশি। কিন্তু চোট ও বিতর্কে জড়িয়ে নিজের সেরাটা আর উপহার দিতে পারেননি ওজিল। এরপরও এই শতকের শীর্ষ অ্যাসিস্ট করা খেলোয়াড়দের তালিকায় আলো ছড়াচ্ছেন এই জার্মান ফুটবলার। ৬৯২ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্টি ২৪০টি, ম্যাচপ্রতি ০.৩৫।

নেইমার:– ক্যারিয়ার যেভাবে শুরু করেছিলেন, সে গতি পরে ধরে রাখতে পারেননি। ভুল সিদ্ধান্ত ও চোটের কারণে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে তাঁর অগ্রগতি। আক্ষেপ আছে নেইমারকে নিয়েও। এরপরও নেইমার বর্তমান সময়ের শীর্ষ তারকাদের একজন। গোলে সহায়তাও কথা বলছে তাঁর পক্ষে ৭০৭ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্ট ২৪৮টি, ম্যাচপ্রতি ০.৩৫।

দুসান তাদিচ:– ক্যারিয়ারে খুব একটা বড় ক্লাবে খেলেননি। সার্বিয়ান তারকা দুসান তাদিচের নাম এ তালিকায় একটু চমক জাগানোর মতোই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব সাউদাম্পটন ও ডাচ পরাশক্তি আয়াক্সেই নিজের সময়টা পার করেছেন তাদিচ। খেলেছেন ৯৮ ম্যাচ সার্বিয়ার হয়েও। সেভাবে শীর্ষ সারির ক্লাবে না খেলেও দারুণ সব অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৪ বছর বয়সী তাদিচ। ৭২২ ম্যাচে ০.৩২ গড়ে করেছেন ২৩৪ অ্যাসিস্ট।

টমাস মুলার:– জাতীয় দল জার্মানির হয়েও জিতেছেন বিশ্বকাপ। নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। জার্মান ফুটবলারদের ভেতর সবচেয়ে বেশি ৩৩টি শিরোপাও আছে মুলারের। ৭৮৭ ম্যাচে তাঁর অ্যাসিস্ট ২৪৪টি, ম্যাচপ্রতি ০.৩১ ।

আনহেল দি মারিয়া:– অবদান রেখেছেন আর্জেন্টিনার ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতার পথেও। দি মারিয়া ক্যারিয়ারে একাধিক শীর্ষ ক্লাবে খেলেছেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা দি মারিয়া জায়গা করে নিয়েছেন গত শতাব্দীর শীর্ষ তিন গোলে সহায়তাকারীর তালিকায়।২৬০ অ্যাসিস্ট, ম্যাচপ্রতি ০.৩১।

সেস ফ্যাব্রেগাস:– বিশ্বকাপজয়ী স্প্যানিশ এই ফুটবলার খেলেছেন আর্সেনাল ও বার্সেলোনার মতো শীর্ষ ক্লাবে। নিজের সময়ের সেরাদের একজন মিডফিল্ডে ছিলেন সেস ফেব্রেগাস। বার্সার হয়ে লা লিগা ও কোপা দেল রের শিরোপাও আছে ফেব্রেগাসের নামের পাশে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে অ্যাসিস্টে বিশেষ দক্ষতা দেখালেও, গোলও করেছেন অনেক। ২১ শতকে গোলে সহায়তাকারীদের তালিকায় আছে ফেব্রেগাসের নাম। ৮৩০ ম্যাচে ০.২৮ গড়ে করেছেন ২৩০ অ্যাসিস্ট।

শুভ জন্মদিন কিংবদন্তি

লুইস সুয়ারেজ:- লুইস সুয়ারেজ ক্যারিয়ারে লিভারপুল, বার্সেলোনা এবং আতলেতিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবে আলো ছড়িয়েছেন। গোল করা তাঁর মূল কাজ হলেও অ্যাসিস্টেও জাদু দেখিয়েছেন এই উরুগুইয়ান তারকা। ৯১১ ম্যাচে অ্যাসিস্ট ২৪৬টি, ম্যাচপ্রতি ০.২৭।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো:– এই শতকে গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্টেও দাপট দেখিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তবে গোলে সহায়তায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসির চেয়ে অনেকটা পিছিয়েই আছেন রোনালদো। ম্যাচপ্রতি অ্যাসিস্টের হারেও অনেকটা পিছিয়ে আছেন সিআর সেভেন। তবে অ্যাসিস্টে যেটুকু পিছিয়ে আছেন সেটা অবশ্য গোল করে ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন রোনালদো। ক্যারিয়ারে ১১৬৮ ম্যাচে ০.২০ গড়ে রোনালদোর অ্যাসিস্ট ২৩৬টি।

One thought on “গোলে সহায়তায় এগিয়ে কারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *