লবঙ্গ খেলে যা ঘটবে আপনার শরীরে
লবঙ্গ খেলে যা ঘটবে আপনার শরীরে
আর্য়ুবেদিক চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে লবঙ্গের ব্যবহার হয়ে আসছে। দৈনন্দিন জীবনে লবঙ্গ রান্নার অনেক খানি জুড়ে আছে। লবঙ্গকে রান্নার প্রাণবলা যেতে পারে। লবঙ্গ রান্নাকে সুস্বাদু করে ও সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেয়।
লবঙ্গ গাছের শুকিয়ে যাওয়া ফুলই হচ্ছে জনপ্রিয় মশলা লবঙ্গ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে লবঙ্গ গাছের নানা অংশ যেমন শুকনো ফুল, ডাল এবং পাতা ব্যবহার হয়ে। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য তরকারি হোক বা স্যুপ, বেকারি আইটেম হোক বা পায়েস, মাছ হোক বা মাংস মশলাটির প্রয়োগে যে কোনও খাদ্যবস্তুর লবঙ্গ ব্যবহার করা হয় ও স্বাদহয়ে ওঠে স্বর্গীয়।
লবঙ্গ গাছের ইংরেজি নাম ক্লোভ এবং বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিওমোরোমেটাম। হয়। লবঙ্গ গাছ ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বোটাসহ ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে গেলে লবঙ্গে পরিণত হয়। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুড়িকে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। লবঙ্গকে লং বলেও ডাকা ফল ১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়,এরা মাংসল,পাকার পরে শুকালে গাড়ো খয়েরী রঙ ধারণ করে। লবঙ্গের সুগন্ধের মূল কারণ ইউজেনল’ নামের যৌগ। এই ইউজেনল যৌগটির জীবাণুনাশক এবং বেদনা নাশক গুণ রয়েছে। লবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তেলের মূল উপাদান এবং এই তেলের প্রায় ৭২-৯০% অংশ জুড়ে ইউজেনল বিদ্যমান।
লবঙ্গের উপাদান হলো:- বেটা-ক্যারোফাইলিন, ট্যানিন, মিথাইল স্যালিসাইলেট, অ্যাসিটাইল ইউজেনল, গ্যালোট্যানিক অ্যাসিড, ক্লিনোলিক অ্যাসিড, ভ্যানিলিন, ক্র্যাটেগলিকঅ্যাসিড, র্যাম্নেটিন, ইউজেনটিন, ট্রি-টেরপেনয়েড, ফ্ল্যাভানয়েড, ইউজেনিন, স্টিগ্মাস্টেরল, সেস্কুইটার্পিন।
১০০ গ্রাম লবঙ্গে কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম, প্রোটিন ৬ গ্রাম, টোটাললিপিড ১৩ গ্রাম, সুগার ২ গ্রাম, ২৭৪ কিলো-ক্যালোরি শক্তি ও ৩৩ গ্রাম ডায়েটারিফাইবার থাকে। খনিজের মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক –কমবেশি সবই আছে। আর ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি-৬, বি-১২, সি, এ, ই, ডি, কে, রাইবোফ্লাভিন,থায়ামিন, নিয়াসিন, ফোলেট রয়েছে। এই সব যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ও মাদাগাস্কারে ব্যাপক ভাবে লবঙ্গ চাষ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপে লবঙ্গের আদিবাস। এর আদিবাস ইন্দোনেশিয়ায় হলেও বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে লবঙ্গ উৎপাদিত হয়।
প্রতিদিন খালি পেটে লবঙ্গ চিবালে খেলে একাধিক অসুখের আশঙ্কা কমে। বিশেষ করে পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে চাইলে ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে লবঙ্গের জবাব নেই। লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে তৈরি হওয়া ফ্রি র্যাডিকেলস ধ্বংস করতে পারে। ফলে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারও প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে লবঙ্গের। তাই একাধিক অসুখে লবঙ্গ আশ্চর্যজনক ভাবে কার্যকরী। জেনে নিন লবঙ্গের স্বাস্থ্য উপকারিতা:-
# হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লবঙ্গ। এরাফ্লাটুলেন্স, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডিসপেপসিয়া এবং নসিয়া কমাতে সাহায্য করে। হজমে সহায়তা করে এমন এনজাইমনিঃসরণের মাধ্যমে এবং অ্যাসিড ক্ষরণের মাধ্যমে লবঙ্গ আমাদের হজম ক্ষমতা সক্রিয় করে তোলে। এটি শরীরের রক্ত প্রবাহেরও উন্নতি ঘটায়।
# আসলে লবঙ্গে রয়েছে থায়মল এবং ইউজেনল নামে সক্রিয় উপাদান যা লিভারকে করে তোলে শক্তিশালী। লবঙ্গ লিভারে নতুন ও স্বাস্থ্যকর কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। লিভার থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন লবঙ্গ।
# লবঙ্গ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায়তা করে যেমন: গ্যাস, বমিভাব এবং বদহজমের মতো অনেক সমস্যায় লবঙ্গ খুব উপকারী। এছাড়াও প্রতিদিন লবঙ্গ খেলে গলায় সংক্রমণ হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় ও বুকের জমে থাকা কফ বের হয়ে যায়। হজম, পিত্তবিনাশকারী, কলেরা, বদহজম, হাঁপানি, জ্বর, মাথাব্যথা, হাঁচি এবং কাশির মতো রোগে লবঙ্গ বিশেষ উপকারী। ১টি লবঙ্গ ও ১ গ্লাস গরম পানি প্রত্যেক দিন রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে বিভিন্ন ধরনের রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সহজেই।
# লবঙ্গের আর একটি উপাদান হল নাইজেরিসিন। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই নাইজেরিসিন জন্যই রক্ত থেকে শর্করা বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেওয়া, ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ানো ও ইনসুলিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর মতো কাজ ভালো ভাবে হয়। মধ্য মাত্রার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ ভালো কাজে দেয়।
# কামোদ্দীপক ও যৌন রোগে উপকারি লবঙ্গ। এর সুবাস অবসাদ দূর করে, শরীর ও মনের ক্লান্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
ব্লাড সুগার কমাবে মিটবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
# পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, লবঙ্গের উপাদান হাড়ের জোর ও বোন ডেনসিটি বাড়াতে সাহায্য করে। লো-বোন মাস এমন একটি অবস্থা, যা বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
# লবঙ্গ আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা কমায়। লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। জয়েন্টপেইন কমানোর পাশাপাশি পেশির ব্যথা, হাঁটুতে, পিঠে বা হাড়ের ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষধটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
# লবঙ্গতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু বিক্রিয়া করে যে নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। দাঁতের ব্যথা কমায়, দাঁতের ব্যথা দূর করে এবং মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে। প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ।
# লবঙ্গ বমি বমি ভাব দূর করে, গর্ভবতী মায়েরা সকালের বমি বমি ভাব দূর করতে লবঙ্গ চুষতে খেতে পারেন। লবঙ্গের সুগণ্ধ বমিবমি ভাবদূর করে। বাসে ও ট্রেনে ভ্রমনের সময় যদি মাথা ঘুরতে থাকে বা বমি এসে যায় তাহলে মুখে একটি লবঙ্গ রেখে সেই রস চুষলে বমি ভাব ও মাথা ঘোরা কমে যাবে।
# লবঙ্গ চিবিয়ে রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে অ্যাজমা, সর্দি, কফ, ঠাণ্ডা লাগা, গলাফুলে ওঠা, রক্ত পিত্ত আর শ্বাস কষ্টে সুফল পাওয়া যায়। লবঙ্গ সর্দি–কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা কমায়। সর্দিকাশির মহৌষধ হিসেবে বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে লবঙ্গ।
# স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা কমায় লবঙ্গ, এক টুকরো লবঙ্গ মুখে ফেলে চুষে চুষে খেয়ে ফেলুন পান করতে পারেন লবঙ্গের চাও। মেজাজ ফুরফুরে হয়ে উঠবে।
# শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে লবঙ্গ। রক্ত পরিশোধন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে লবঙ্গ ও রক্তকে পরিস্কার করে।
আফগান দূতাবাস বন্ধ ভারতে
# লবঙ্গ ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে।
# লবঙ্গ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ত্বকের লাবণ্য চলে যাওয়া এমনকি মাথার খুসকিও দূর করে লবঙ্গ। মুখে তেল ছিটকে ফোসকা পড়েছে? মশার কামড়ে লাল হয়ে গেছে? লবঙ্গ তেলেই লুকিয়ে সমাধান। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন লবঙ্গ। যে কোনও দাগ ভ্যানিশ। লবঙ্গ তেল যে কোনও দাগ সহজেই তুলে দেয়। সেই সঙ্গে স্কিন টোন ভালো হয়। দাগ ছোপ মিলিয়ে যায়।
# চুল পড়া কমাতে এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে লবঙ্গ তেলের জুড়ি মেলা ভার। ছত্রাক ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে লবঙ্গ দারুণ কাজে দেয়। এক্ষেত্রে আধ চামচ লবঙ্গ তেলের সঙ্গে সম পরিমাণ অলিভ অয়েল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগিয়ে মিনিট দশেক মাসাজ করতে হবে। বিশ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নিয়মিত এইভাবে চুলের যত্ন নিলেই উপকার মিলবে। লেবুর রস ও লবঙ্গ তেল একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালেও খুশকি চলে যায়।
Pingback: স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা চালুর পদ্ধতি - Amader Khabar
Good Information
ধন্যবাদ আপনাকে