গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (নাপাক থেকে পবিত্রতার) গোসলের ন্যায় গোসল করে ও নামাজের জন্য মসজিদে যায়, তিনি যেন একটি উট কোরবানি করল। চারটি কারণের যেকোনো একটি হলেই গোসল ফরজ হয়। গোসল শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করা। জীবিতদের জন্য; মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।তাই আজ আমাদের আলোচনা বিষয় গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি?
গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী
শরিয়তের পরিভাষায়, পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়। গোসল আরবি শব্দ যার অর্থ পুরো শরীর ধোয়া।
গোসলের ফরজ হওয়ার কারণ
এই চারটি কারণের যেকোনো একটি হলেই গোসল ফরজ হয়।
জানাবাত (মানে নাপাক ব্যক্তি) থেকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা হওয়ার গোসল। নারী–পুরুষের সহবাস, স্বপ্নদোষ বা যেকোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে। আল্লাহ নির্দেশ দেন; আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও। (সুরা মায়িদা– আয়াত: ৬)
নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর, পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের; গোসল করা ফরজ।
জীবিতদের জন্য; মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।
আরও পড়ুন: রাতের খাওয়া সন্ধ্যা সাতটার ভেতর সারবেন
ওযু ও গোসলের ফরজ কয়টি
১] কুলি করা, ২] নাকে পানি দেওয়া, ৩]. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া, যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)
ফরজ গোসলের নিয়ম:
গোসল শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করা।
দুই হাতের কবজি পর্যন্ত হাত ধোয়া।
বাঁ হাতে পানি দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা এবং সম্ভব হলে প্রস্রাব করে নেওয়া।
শরীরের কোনো অংশে বা কাপড়ে নাপাক কিছু লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।
# অজুর মতো অজু করে নেওয়া (পা ধোয়া ছাড়া)।
গোসলের ৩ কাজ কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। এমন ভাবে ধুয়ে নেওয়া যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।
গোসলের স্থান থেকে সরে এসে [সম্ভব হলে উঁচু স্থানে দাড়িয়ে] উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।
ফরজ গোসলের
উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় বা গায়ে ছিটা না লাগে ও পানির অপচয় করা যাবে না। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা, লোকসমাগম যেখানে হয় সেই স্থানে গোসল না করা। বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না।
নেলপালিশ, রং বা সুপার গ্লু যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয় তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। না হলে গোসল শুদ্ধ হবে না।
পুরুষের ফরজ গোসলে
পুরুষের ফরজ গোসলে দাঁড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে ও নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো বা সম্পূর্ণ চুল ধোয়া। আবার নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। কিন্তু কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
অনেকের বিভিন্ন রোগের কারণে দাঁতে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না বা তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়। যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি।
আরও পড়ুন: শীতেও মাঝেমধ্যে ঘরের সব জানালা খুলে দিন
জুমার দিন গোসলের মর্যাদা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (নাপাক থেকে পবিত্রতার) গোসলের ন্যায় গোসল করে ও নামাজের জন্য মসজিদে যায়, তিনি যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে যায়, তিনি যেন একটি গাভি কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে যায়, তিনি যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যায়, তিনি যেন একটি মুরগি কোরবানি করল ও পঞ্চম পর্যায়ে যে যায়, তিনি যেন একটি ডিম কোরবানি করল।
মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কিফায়া, আবার কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন। যাঁরা গোসল দিতে পারদর্শী তাঁরাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবেন।
মৃত ব্যক্তিকে গোসলের সময় গোসলের খাটে শোয়াতে হবে। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে পুরুষ হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা কাপড় রাখতে হবে।
প্রায় বসার মতো করে মৃত ব্যক্তির মাথাকে উঁচু করতে হবে, আলতোভাবে মৃত ব্যক্তির পেটকে চাপ দিয়ে বেশি করে পানি ঢেলে ময়লা বের করতে হয়।
গোসলদাতার হাতে একটি ন্যাকড়া পেঁচিয়ে বা হাত মোজা পরে নেওয়া।
# প্রথমে গোসলের নিয়ত করে নামাজের অজুর ন্যায় মৃত ব্যক্তিকে অজু করানো, কিন্তু মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করানো যাবে না। তবে ভিজা আঙুলদ্বয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করানো।
# মহিলাদের সন্তান প্রসব করার পর মারা গেলে মুখ ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি।
# দাঁত ও মাড়ি তুলা দিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়া।
# সাবান ও বরইপাতা মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে প্রথমে মৃত ব্যক্তির মাথা ও দাঁড়ি ধোয়া।
# ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ডান পাশ ধুয়ে বাঁ পর উপর রেখে পিঠের ডান অংশ ধোয়া।
# এমন ভাবে ৩ বার ধৌত করা। এরপরেও যদি ময়লা থাকে, তবে ময়লা পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত বেজোড় সংখ্য হিসাবে করে ধৌত করা।
# শেষবারের পানির সঙ্গে করপুর, আতর মিশিয়ে সারা শরীরে পানি ঢেলে দেওয়া।
# মৃত ব্যক্তির গোঁফ বা নখ বেশি লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা (এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে)।
# মৃত ব্যক্তির শরীরের পানি একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া।
# মৃত ব্যক্তি নারী হলে চুল; বেণি করে পেছনের দিকে রাখা।
পরিশেষ
গোসল দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে ময়লা বের হলে, বের হওয়ার স্থান ধৌত করে তুলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। তবে ক্ষেত্রে কেউ বলেছেন, অজু করাতে হবে। তাই পরিশেষে বলা যায় গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী আপনারা এর পুরপুরি উত্তর পেয়েছেন। আশা করি আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্ট করবেন ইনশাআল্লাহ।
Pingback: নারকেল তেল শীতকালে জমে কেন - amaderkhabar