জাতীয়

ভিসা নিষেধাজ্ঞার আবেদন অস্ট্রেলিয়ায়

ভিসা নিষেধাজ্ঞার আবেদন অস্ট্রেলিয়ায়

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দানকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন দেশটির কয়েক জন এমপি। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এর প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দায়ী ব্যক্তিরা যেন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান তারা। দেশটির ১৫ জন এমপি গত বুধবার ৪ অক্টোবর, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ বরাবর এ চিঠি লিখেন।

অস্ট্রেলিয়ার এমপিরা চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে একটি বিশেষ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক। ঐ নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদের কেউ অনুরূপ নীতি প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক।

আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যে কোনো কাজকে উদ্বেগজনক মনে করি। এরমধ্যে আছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে মত প্রকাশে বাঁধা। আমাদের বিশ্বাস নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ নাগরিক, এক্টিভিস্ট, ইউনিয়ন নেতা বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন কি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের নির্যাতনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য এনজিওগুলো র‌্যাবকে সরকারী ডেথ স্কোয়াড হিসেবেও চিহ্নিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা বা বলপূর্বক গুমের ঘটনা সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেছেন র‌্যাবের দুই ইনফরমার ও সাবেক সদস্য। এই ধরণের অপরাধগুলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই যাতে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার বা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

অস্ট্রেলিয়ার এমপিরা বলেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিগত ২ টি জাতীয় নির্বাচন বিতর্ক এবং অনিয়মে ভরা ছিল। অভিযোগ ছিল ভয় প্রদর্শন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার ওপর সহিংসতার। সরকারকে অনুরোধ করছি বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যা দেখা গেছে তা প্রতিরোধ করতে আমরা নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে একটি গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য।

স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা চালুর পদ্ধতি

আমরা চাইছি, অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশের কাছে স্পষ্টভাবে আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করুক যে আগামী নির্বাচনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের অফিসের মানবাধিকার স্ট্যান্ডার্ডস অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কেউ বাঁধা দিলে তাদেরকে ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার অধীনে টার্গেট করবে অস্ট্রেলিয়া।

আমরা আশা করি আপনি আমাদের এই চিঠিকে গুরুত্ব দেবেন, আমরা যে বিষয়গুলি উত্থাপন করেছি তা নিয়ে আপনার কাছ থেকে শোনার জন্য আমরা উন্মুখ। যেহেতু অস্ট্রেলিয়া সরকার কূটনীতির মাধ্যমে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিরা হচ্ছেন, সিনেটর বারবারা পোকক, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, সিনেটর জ্যানেট রাইস, স্টিফেন বেটস এমপি, সিনেটর মেহরীন ফারুকী, সিনেটর ডেভিড শোব্রিজ, সিনেটর জর্ডন স্টিল-জন, অ্যাডাম ব্যান্ড এমপি, সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, সিনেটর দরিন্দা কক্স, সিনেটর পেনি অলম্যান, সিনেটর পিটার হুইস-উইলসন, সিনেটর নিক ম্যাককিম, ম্যাক্স চ্যান্ডলার এমপি এবং সিনেটর সারাহ হ্যানসন।

One thought on “ভিসা নিষেধাজ্ঞার আবেদন অস্ট্রেলিয়ায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *