পাকলে ফলের রং বদল পরোক্ষ ও সুদূরপ্রসারী
পাকলে ফলের রং বদল পরোক্ষ ও সুদূরপ্রসারী
বেশির ভাগ ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে ফলের রং বদলে যায়। একবারও কি ভেবেছেন পাকলে কেন রঙিন হয়ে ওঠে ফল। পাকলে কলা-আম হলুদ রঙের, আপেল, পেঁপে ইত্যাদি লাল রঙের বাহারে সাজে কিন্তু কেন? রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি আর অনুপস্থিতি ফল রঙিন হওয়ার মূল কারণ।
পরোক্ষ কারণ কিন্তু সুদূরপ্রসারী।
পরোক্ষ কারণ হলো পৃথিবীতে প্রজাতির টিকে থাকা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ আবাস দেওয়ার লক্ষ্য। ক্লোরোফিল নামের রঞ্জক পদার্থ গাছের সবুজ রঙের উৎস। আবার ক্লোরোফিল যেমন গাছের সবুজ রঙের জন্য দায়ী, তেমনি খাদ্য তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
সূর্যের আলো, কার্বন ডাই-অক্সাইড আর ক্লোরোফিলের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে গাছ নিজের জন্য খাদ্য তৈরি করে। গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। তবে এই তিনের কোনো একটা অনুপস্থিত থাকলে গাছের পক্ষে সম্ভব নয় খাদ্য তৈরি করা। কিন্তু গাছকে নিজেই তৈরি করতে হয় ক্লোরোফিল আর অন্য দুটি প্রকৃতি থেকে আসে। তাই এই জিনিসটা অত্যন্ত দামি, অন্তত গাছের জন্য।
থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন থাকে কতবেলে
প্রশ্ন তাহলে ক্লোরোফিল গাছের পাতা, ডালপালা আর ফলকে কিভাবে সবুজ রঙে রাঙায়? বিষয়টা খুব সহজ, সূর্যের সাদা আলো আসলে সাত রঙের মিশ্রণ নীল, বেগুনি, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা আর লাল। সূর্যের আলোতে আসা সাত রঙের মিশ্রণ থেকে সবুজ বাদে বাকি সব রং শোষণ করে নেয় ক্লোরোফিল। আর সবুজ রং প্রতিফলিত হয় গাছ থেকে। তাই গাছের পাতা-কাণ্ড সব সবুজ রঙের। ক্লোরোফিল থাকে কাঁচা ফলেও, তাই সেটা সবুজ রঙের।
কিন্তু ফল যখন পাকতে শুরু করে, তখন ক্লোরোফিলগুলো সরে যায়। আসলে গাছ নিজেই ফল থেকে ক্লোরোফিল সরিয়ে নেয়। শুধু ক্লোরোফিল নয়, ফলে আরো কিছু রঞ্জক পদার্থ থাকে। কাঁচা ফলে সেগুলোর প্রভাব কম। ক্লোরোফিল বাতাস বা আলো থেকে পাওয়া যায় না, গাছকে নিজেই উৎপন্ন করতে হয়। তাই এ ক্লোরোফিল এত দামি গাছের কাছে। ফল পাকা শুরু হলে আর খাদ্যের প্রয়োজন থাকে না, তখন ফুরায় ক্লোরোফিলের প্রয়োজনীয়তাও। এবং গাছ তখন ফল থেকে ক্লোরোফিল সরিয়ে নেয়, ফলের সবুজ ভাব ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে, তখন উজ্জ্বল হতে শুরু করে অন্য রঞ্জক পদার্থগুলো। তখনই কোনো ফল লাল, কোনোটা হলুদ, কোনোটা কমলা রঙের হয়।
খেজুর খাওয়ার এর উপকারিতা
সুদূরপ্রসারী কারণও আছে ফলের রং পরিবর্তনে। মা গাছের নিচে বা আশপাশে যদি ছানাপোনা জন্মায়, তখন মা-বাচ্চা দুই পক্ষের জন্য ক্ষতির। কারণ গাছ শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফিল আর সূর্যের আলো থেকে খাদ্য তৈরি করে না, খাদ্যের বড় একটা জোগান আসে মাটি থেকে, শেকড়ের মাধ্যমে। যেমন পানির জোগান মাটি থেকে আসে। তাই একই জায়গায় অনেক গাছ থাকলে তাদের মধ্যে খাদ্য আর পানি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হয়। আবার বড় গাছ ছোট চারা গাছে আলো পড়তে বাধা দেয়। সকল জীবই তার নিজের সন্তানদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে না খাদ্য, পানি, বাতাস আর আলোর জন্য।
সকল জীবই চায় তার নিজের সন্তানরা বেড়ে উঠুক সুস্থ-সুন্দরভাবে। তাই নিজের সন্তানরা যাতে দূরে কোনো খোলামেলা জায়গায় বেড়ে উঠতে পারে, সে ব্যবস্থা করা মায়ের দায়িত্ব। তার মানে গাছেরা বুদ্ধি করে এ কাজ করে গাছের মস্তিষ্ক নেই, বুদ্ধিও নেই। গাছেরা যেটা করে, সেটা তার ডিএনএর নকশায়ই লেখা থাকে। এই তথ্য গাছেরা পেয়েছে প্রকৃতি থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বা বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায়।
ফলের রঙিন হওয়ার মানে গাছের টিকে থাকা। ফল রঙিন হলে ফল পাখি বা প্রাণীর নজরে পড়ে সহজেই। তখন সেই ফল খেয়ে ঐসব পাখি-প্রাণী বীজ বয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে উপযুক্ত জায়গায়। যেখানে নতুন চারা সহজেই বেড়ে উঠতে পারে। ফল তত দিন সবুজ থাকে, যত দিন না ফলের ভেতরের বীজ পুষ্ট হয়, অঙ্কুরিত হওয়ার উপযোগী হয়। তাই তত দিন পর্যন্ত ফলকে এসব পাখি-প্রাণীর নজর থেকে লুকিয়ে রাখার দরকার পড়ে। ফলের রং সবুজ হলে গাছের পাতা ও ডালপালার আড়ালে সহজেই ফল মিশে থাকতে পারে। আবার কাঁচা ফলের স্বাদও অতটা ভালো নয়। যখন লুকিয়ে রাখার দিন শেষ হয় তখন ফল রঙিন হয়ে ওঠে, ফলভুক প্রাণীদের আমন্ত্রণ জানায়।
Pingback: কান্নার বৈজ্ঞানিক কারণ কী কী - Amader Khabar
🙉🙉🙉🙈🙈🙈
Thank U.