কাকের বাসায় কোকিলের ডিম
কাকের বাসায় কোকিলের ডিম
পাখির স্বভাবই ডিম পাড়ার সময় হলে সে খড়কুটো নিয়ে নিজের বাসা তৈরি করে। তাহলে কোকিল কেন নিজের বাসায় ডিম না পেড়ে কাকের বাসায় ডিম পাড়তে যায়? ডিমে তা দেওয়া, ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নিলে বাচ্চার জন্য খাবার জোগাড় করে আনা, বেশির ভাগ পাখিদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। কোকিলের বাসা বাঁধার কোনো প্রবণতা অন্য পাখিদের মতো দেখা যায় না বা কোকিলের এসবে কোনো আগ্রহ নেই।
তাহলে কোকিল কি ইচ্ছা করেই এমনটা করে?
জীবরেই সহজাত কিছু প্রবণতা থাকে, যা জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অবশ্য হরমোনের প্রভাবেও সহজাত কাজগুলো করে প্রাণীরা। প্রোল্যাকটিন নামের হরমোন পাখিদের দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেয়। পাখিদের বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া, ছানা পরিচর্যার পেছনেও রয়েছে হরমোনের কারসাজি। প্রোল্যাকটিন ক্ষরণ হয় পাখির মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে কিন্তু কোকিলের বেলায় শরীরে প্রোল্যাকটিন কাজ করে না।
কোকিল বা এর সমগোত্রীয় পাখিদের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এই প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসৃত হয় না। তাই কোকিলদের ভেতরে মাতৃত্বের দায়িত্ববোধ জন্মায় না। কোকিল মাতৃত্ব না জাগলেও ডিম পাড়ে, আর সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া দরকার। এ জন্য কোকিলকে কোনো না কোনো উপায় বের করতে হয়। কোকিল এ ব্যাপারে কাকেদের বোকা বানায়। তাই মেয়ে কোকিল ডিম পাড়ার আগে দেখে নেয়, কোন কাকের বাসায় সদ্য ডিম পাড়া হয়েছে। উপযুক্ত বাসা পেলে সেই বাসায় ডিম পেড়ে আসে মেয়ে কোকিল।
কোকিল দেখলেই তেড়ে যায় কেন? কোকিলের দ্বারা কাকের বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এটা কাক বোঝে। তবে সহজে কাকের বাসায় ডিম পেড়ে আসতে পারে না কোকিল। মেয়ে কোকিল কাজটা করতে তখন পুরষ কোকিলের সাহায্য নেয় স্ত্রী কোকিল। কাকেদের উত্ত্যক্ত করে পুরুষ কোকিলরা।
টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচার উপায়
রেগেমেগে কাকেরা পুরুষ কোকিলকে ধাওয়া করতে যায়। সেই ফাঁকে সুযোগ বুঝে স্ত্রী কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। কাক আর কোকিলের ডিম দেখতে অনেকটা একই রকম। ফলে কাক এই ডিম চিনতে পারে না। নিজের ডিম মনে করে তা দেয়। তা ছাড়া কাক ডিম গুনতেও জানে না। তাই বুঝতেই পারে না, বাসায় অতিরিক্ত ডিম আছে। নিজের ডিমের সঙ্গে তা দেয়।
অন্যদিকে কাকের ডিম ফোটার বেশ কয়েক দিন আগে কোকিলের ডিম ফুটে ছানা বের হয়। নিজের ছানাদের মতো বলে কাক বুঝতেও পারে না, সেগুলো তার ছানা নয়। আগে ডিম ফোটে বলে, কোকিলের ছানারা বাড়তি খাতির-যত্ন পায় কাকেদের কাছ থেকে, বেড়েও ওঠে আগে।
সূত্র:-বিচিত্র পক্ষিজৎ/ অজয় হোম, প্রাণিবিজ্ঞান/ ভূপেন্দ্রনাথ স্যানাল।
Pingback: বিড়ালের চোখ জ্বল জ্বল করে কেন - Amader Khabar