ফ্রান্সে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ
ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার নবম দিনের বিক্ষোভে দশ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফ্রান্সে পেনশন পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে লাগাতার প্রতিবাদ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। খবর বিবিসি।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৪১ জন সদস্য আহত হয়েছে। বোর্দো শহরের ঐতিহাসিক পৌর ভবনের দরজায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভের সময় গতকাল বহু জায়গায় অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু শহরে দাঙ্গা পুলিশের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেডে আহত হয়েছে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীও।
কিছু কিছু বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও প্যারিস ও বোর্দোসহ আরও কয়েকটি শহরে মিছিলের বাইরে সহিংসতা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছেন রাজধানীর রাস্তাতেই ৯০৩টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বোর্দো শহরের ঐতিহাসিক অষ্টাদশ শতাব্দীর টাউন হলটিতে কে আগুন লাগিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে দমকল বাহিনী কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। পুরো বোর্দো শহরের প্রাণকেন্দ্র এই টাউন হলে যে কেউ হামলা চালাতে পারে সেটা দেখে আমি গভীরভাবে মর্মাহত স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ বলেছেন শহরের মেয়র, যিনি অগ্নি কাণ্ডের মাত্র কয়েক মিনিট আগে টাউন হল থেকে বের হয়ে যান।
এই বিক্ষোভকারীরা কিছু দোকানের জানলা ভেঙেছে, একটি ম্যাকডোনাল্ডের রেস্তরাঁয় হামলা করেছে এবং রাস্তার ওপর একটি ছোট দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্যারিসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলার মধ্যেই কোথাও কোথাও পুলিশ ও মুখোশধারী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী বাহিনী যাদের মোতায়েন করা হয়েছে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বর্ন এক টুইট বার্তায় বলেছেন বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ভিন্ন মত পোষণ নাগরিকের অধিকার। কিন্তু যেসব সহিংসতা এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় পরিষদে চূড়ান্ত ভোটাভুটি ছাড়াই ৪৯:৩ নামে সংবিধানের বিশেষ একটি ধারা প্রয়োগ করে সরকার অবসর গ্রহণের বয়স সংক্রান্ত এই সংস্কার পাশ করিয়েছে বলে ম্যাক্রঁ এই সাক্ষাৎকারে জানান। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের এভাবে ফুঁসে ওঠার পেছনে ছিল বুধবার প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারটি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এই সংস্কার আনা হচ্ছে। এর ফলে তিনি জনপ্রিয়তা হারালেও তা তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ সংসদকে পাশ কাটিয়ে পেনশন পদ্ধতিতে এই সংস্কার আনায় ক্রুদ্ধ হয়েছে বহু মানুষ। এই সংস্কার অনুযায়ী অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে।
পেনশন সংস্কার যতক্ষণ না সরকার রদ করছে আমরা পথে নামা বন্ধ করব না, বলেন দমকল বাহিনীর কর্মী ক্রিস্টফ মারিন। আমাদের আন্দোলন কিছুটা থিতিয়ে পড়েছিল, কিন্তু ৪৯.৩ ধারার প্রয়োগের কথা শোনার পর ফরাসি জনগণ আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। আমরাও নতুন উদ্যমে প্রতিবাদে নামছি।
তেল পরিশোধনাগার আর তেলের ডিপো অবরোধ করার কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বিক্ষোভ আর অসন্তোষে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। ল্য ফিগারো ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ১৫ শতাংশ পেট্রল স্টেশনে পেট্রল ও ডিজেল ফুরিয়ে গেছে। বামপন্থীরামনে করছেন সাম্প্রতিক দফার এই হরতাল সফল হয়েছে। তবে এই প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত কতদূর গড়াবে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিরোধীরা বলছে তাদের প্রতিবাদ গতি হারাবে না। প্যারিসের বহু এলাকায় জঞ্জাল বিন উপছে পড়ছে। যারা প্যারিসের বাসাবাড়ি ও রাস্তা থেকে আবর্জনা তুলে নিয়ে যায়, তারাও প্রতিবাদে যোগ দেওয়ায় দুই সপ্তাহের ওপর আবর্জনার বিনগুলো খালি করা হয়নি।
এই সংস্কারের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে ম্যাক্রঁ বলছেন তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন পেন্সনভোগীর সংখ্যা ছিল এক কোটি, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখে।
অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করার জন্য আনা এই সংস্কার কার্যকর করতে সংবিধানের ৪৩.৯ ধারা প্রয়োগ করার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যাক্রঁ তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটা বড়ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।