জাতীয়স্বাস্থ্য ও পুষ্টি

ইফতার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে

পাড়া-মহল্লার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে তৈরি ভাজাপোড়ার মচমচে আইটেম অধিকাংশ মানুষের ইফতারির অংশ হয়ে উঠছে। দিনভর রোজা রেখে ইফতারিতে তেলেভাজা বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বুন্দিয়া, জিলাপির মতো মুখরোচক খাদ্য গ্রহণ আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। বাহারি পদের এসব খাবারের বেশিরভাগই অতিরিক্ত তেলে ভাজা থাকে। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, রোজার মাসে ইফতারিতে ফলমূল জাতীয় সুষম খাবার খেতে হবে। সারা দিন রোজা রেখে অস্বাস্থ্যকর তেলেভাজা ইফতারি হৃদরোগ-স্ট্রোকে আক্রান্তসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, এসব খাবার পরিহার করতে হবে। একই তেল দিনের পর দিন ব্যবহার করে তৈরি খাবার নিয়মিত গ্রহণে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রেই ইফতারির জন্য বাইরের ভাজাপোড়া খাবার তৈরিতে একই তেল বারবার ব্যববহার করা হয়। তেলের মান নির্ভর করে স্মোক পয়েন্ট অর্থাৎ তেল কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফোটানো হয় তার উপর। অতিরিক্ত তাপে ভাজা হলে স্মোক পয়েন্ট বেশি হয়। তখন সেটি র‌্যানসিড তথা হাইড্রোজেনেটেড অয়েলে পরিণিত হয়ে তেলের স্বাভাবিক গঠন ভেঙে যায়। যার আরেক নাম ট্রান্সফ্যাট। ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। একই তেল দিয়ে কোনো কিছু পুনরায় ভাজা ঠিক নয়। এছাড়া একই তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহারের আগে স্মোক পয়েন্টে যাওয়ার পর সেটিকে ভালোভাবে ছেকে পোড়া অংশ ফেলে দিতে হবে। ফ্রাইসহ বিভিন্ন ভাজাপোড়ায় তাপমাত্রা ৬০০ ডিগ্রি পর্যন্ত পেরিয়ে যায়। ফলে বেগুনি, আলুর চপ, ছোলা দোপিয়াজুসহ ভাজা পোড়া খাবারে প্রোটিনসহ নানা উপাদান থাকলেও অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটে বারবার ভাজা হলে সেটি গ্রহণে ফ্যাটি লিভার, ক্যানসার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। সয়াবিন, সরিষা, অলিভ ওয়েলসহ সব তেলেই পৃথক স্মোক পয়েন্ট থাকে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভাজাপোড়ার ক্ষেত্রে ডিপ ফ্রাইড তথা ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা অতিরিক্ত তাপামাত্রায় ভাজাপোড়া খাবার তৈরি করা হয়। ডিপ ফ্রাইয়িংয়ে সাধারণত ২৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়।

যে কোনো ধরনের তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির কারণ। যাদের পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। একই তেল নিয়মিতভাবে উত্তপ্ত বা ভাজার ফলে সেটির কিছু রাসায়নিক গুণগত পরিবর্তন হয়। ফ্যাটি লিভার তৈরি হতে পারে। এছাড়া একই তেলে বারবার ভাজা খাদ্য গ্রহণে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় দেরি ও ক্ষুধামন্দা তৈরি হয়। তাছাড়া যেকোনো খাবারই হজম হওয়ার পর প্রথমে লিভারের মধ্য দিয়ে শরীরে রক্তে যায়। তাই সারা দিন অভুক্ত থাকার পর স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তা পাকস্থলীর পরিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।

একই তেল বারবার গরম করে ভাজাপোড়া খাদ্য তৈরি করে খাওয়ার ফলে হজমে গোলযোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত ফুটানোর ফলে তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এগুলোর পরিবর্তে ইফতারের সময় ডালভাতের মতো ভারী খাবার, শরবত, পানি, টক দই, দুধ, চিড়া, কলা, ছাতু ও যব দিয়ে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি দেশি ফলমূল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি ও তরমুজ খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পরিমিত মাছ, মুরগি, ডিম দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া যেতে পারে।

ইফতার মানেই ভাজাপোড়া জাতীয় তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া হয়। এটা বিশেষ করে যারা হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব খাবারে হৃদরোগ না হলেও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবার খেলে প্রথমত হজমের সমস্যা হয়। পরে কোলেস্টেরল লেভেল, ব্লাড সুগার লেভেলের কন্ট্রোল ঠিক থাকে না। এজন্য ভাজাপোড়া কম খেয়ে শাকসবজি, চিড়ামুড়ি, দই এ ধরনের খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এগুলো হজমের জন্য ভালো, আবার কোলেস্টেরল, সুগার লেভেলও ভালো রাখে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা আরও জানান, ফাস্ট ফুড শপ বা রেস্টুরেন্টের ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চিনিযুক্ত পানীয়তে উচ্চমাত্রায় লবণ ও ক্ষতিকর এসিড থাকে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ইফতারিতে এসব খাবারসহ ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, পাকোরার মতো ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খেতে হবে। এক্ষত্রে খিচুড়ি, চিড়া, ভাত, শরবত, খেজুর, ফলমূল জাতীয় খাদ্য উপাদান খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *