জাতীয়

পানির জন্য হাহাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে

পানির জন্য হাহাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে

সংকটে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামার পাশাপাশি লবণাক্ততা, আর্সেনিক ও আয়রনের প্রভাবে সুপেয় পানির। গ্রীষ্মের দাবদাহ এই সংকট বাড়িয়েছে বহুগুণ। এই পরিস্থিতিতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি নানা জটিল রোগের প্রদুর্ভাবও। সংকট সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরুর আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।

অপরিচিত কিছু নয় লাইন ধরে পুকুরের পানি সংগ্রহের দৃশ্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়। অনেকেরই একমাত্র ভরসা পুকুর এবং বৃষ্টির পানি। তবে একটু ভিন্ন এবারের চিত্রটা। বিশুদ্ধ পানির সংকট গরম পড়ার আগেই দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দেখা না মিললে গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। খাল বেদখল, পুকুর ভরাট, অনিয়ন্ত্রিত চিংড়ি চাষ, চিংড়ি ঘেরে উঁচু বাঁধ না দেয়া, নদীর প্রবাহ আটকে দেয়াসহ নানা কারণে এই অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের নিরাপদ পানির তীব্র সংকটের মধ্যে দিন পার করতে হয়। সেই সঙ্গে আছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা।

এই এলাকার জন্য খাবার পানি বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা বলেন, কোথাও খাওয়ার উপযুক্ত পানি নেই মাটির ওপর বা নিচে। মাটির উপরিভাগের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ত আর নিচের পানিতে আয়রনযুক্ত হওয়ায় খাওয়ার উপযুক্ত নয়। ফলে এখানে পানি সংগ্রহ খাবার করা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। এ ছাড়া পেটের রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়ের প্রকোপ বেশি হয়। এই এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া, আমাশয়ে ভোগেন।

আরসেনিক, লবণাক্ততা এবং আয়রন-সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিতে প্রধানত এই তিনটি অন্তরায় উপকূলীয় মানুষের। তবে বৃষ্টির পানি সেই সমস্যা দূর করেছে অনেকটাই। বৃষ্টিপাতের মৌসুমে ছাদে জমে থাকা পানি পাইপ হয়ে নেমে আসে বড় বড় জারে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ফিল্টারিংয়ের পর হয়ে ওঠে পানের উপযোগী, যা বছরব্যাপী ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। স্থানীয়দের দাবি এখন বৃষ্টির পানি ব্যবহারে রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। তারা জানান, টিউবলের পানিতে আয়রন এবং আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। তখন পেটের পীড়াও কমবেশি সবার লেগে থাকত।

খুলনার পাইকগাছায় প্রয়োজনের পুরোটা না হলেও অনেকটাই মিটেছে পানির সংকট বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের সহায়তার। ওয়াটার এইড বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ছাড়াও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে স্থানীয় পৌরসভার বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে সহায়তা দিচ্ছে।

প্রকৌশলী ইয়াসিন অরাফাত ওয়াটারএইডের প্রোগ্রাম অফিসার বলেন, প্রাথমিক উপায় হিসেবে আমরা মূলত বৃষ্টির পানি ধরে তা ফিল্টার করে সরবরাহ করি। এলাকার মানুষের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে আর্সেনিক দূরীকরণ প্লান্টসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় বিশুদ্ধ পানি।
সুপেয় পানির আবাস মাটির নিচে ক্রমেই কমছে। একমাত্র ভরসা এখন পুকুর, সেখান থেকে প্রতিদিন লাইন ধরে খাবার পানি সংগ্রহ করেন এলাকাবাসী।

রাশিয়ার ঋণ, চীনা মুদ্রায় 

সরকারি এক পরিসংখ্যান বলছে, ২২ শতাংশ খুলনায়, বাগেরহাটের ১৫ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ সাতক্ষীরার মানুষের খাবার পানির সংকটে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই তথ্যের থেকে বাস্তবের চিত্র আরও ভয়াবহ উল্লেখ করে পানি সমস্যা সমাধানে সরকারকে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নেয়ার তাগিদ।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টের বলেন, খুব দ্রুতই দেশ সুপেয় পানির সংকটে পড়তে পারে বলে শঙ্কা তার। আগে মাটির নিচের পানির কি অবস্থা তা দেখতে পরামর্শ দেন। সেখানে কতটুকু পানি আছে তা জেনে এরপর সে অনুযায়ী পানি তোলা উচিত। তিনি আরও বলেন, পানি তো আমরা শুধু খাওয়ার জন্য তুলি না, কারখানার কাজে খরচ হয়, কৃষির কাজে খরচ হয়। এই সবকিছু মিলিয়ে একটি সমন্বয় করতে বললেন হাসিন।

দেশের ১০ উপকূলীয় জেলায় নিরাপদ বৃষ্টির পানি সরবরাহ করতে প্রায় ৯৬২ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। যার সুফল পাবে ২২২টি ইউনিয়নের মানুষ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে।

6 thoughts on “পানির জন্য হাহাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *