দুঃসময়ের বন্ধুদের ভুলে যায় না: প্রধানমন্ত্রী
দুঃসময়ের বন্ধুদের ভুলে যায় না: প্রধানমন্ত্রী
জাপানের ৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য। ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশের দুঃসময়ে বিদেশি যেসব বন্ধু আমাদের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কখনো তাদের ভুলে যেতে পারে না বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় জাপানের স্কুলশিক্ষার্থীরা টিফিনের পয়সা ত্রাণ তহবিলে দান করেছিল। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জাপান সফরে এসেছিলেন, তখন শেখ রেহানা এবং ছোট ভাই শেখ রাসেল পিতার ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার টোকিওর আকাসাকা প্যালেসের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রয়াত রাজনীতিবিদ হিদেও তাকানো, অকালপ্রয়াত ফটোগ্রাফার ইচিনোসে তাইজো, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট তাদাতেরু কনোয়ে এবং শিক্ষাবিদ পেমা গালপোকে ”ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার” সম্মানে ভূষিত করা হয়। প্রয়াত দুই সম্মানিত জাপানের নাগরিকের পক্ষ থেকে সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন যথাক্রমে হিদেও তাকানোর স্ত্রী ইয়ুকো তাকানো এবং ইচিনোসে তাইজোর নিকটাত্মীয় কিওকো জামা। তাদাতেরু কনোয়ে ও পেমা গালপো সস্ত্রীক অনুষ্ঠানে উপস্থিতেও ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব) কাজি সাজ্জাদ আলী জহীর বীর প্রতীক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়, সম্মানিত চার জাপানির জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত সম্মাননা সনদ পাঠ করে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
জাপান রেডক্রস সোসাইটির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদাতেরু কনোয়ে দীর্ঘ সময়। ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর ১ মাস তিনি হাতিয়া দ্বীপে ত্রাণকাজ চালান। জাপান রেডক্রসের পক্ষ থেকে সেবামূলক কাজে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের কেম্পে।
পেমা গালপো জাপানের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মূলত ১ জন তিব্বতি। ১৯৭১ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে আলোড়িত করে। সহপাঠীদের নিয়ে বাংলাদেশের সহায়তায় অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করেন তিনি। সেই সময় টোকিওর পাকিস্তান দূতাবাসের বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। সেই কূটনীতিকদের পক্ষ ত্যাগের পর বিভিন্ন উপায়ে তিনি তাঁদের সাহায্য করেন। জাপানের ছাত্রসমাজের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ন্যায্যতার বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি নিউজ লেটার প্রকাশ করতেন।
প্রয়াত ২ জাপানির মধ্যে হিদেও তাকানো বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একাত্তরে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সলিডারিটি কমিটি। শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতেন তারা। বিভিন্ন সমাবেশ, অনুষ্ঠান ও প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতনের খবর সহানুভূতিশীল পোঁছে দিতেন জাপানিদের কাছে।
রেল লাইন বেঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা
প্রয়াত অন্য সম্মানিত জাপানি ইচিনোসে তাইজো সুপরিচিত ১ জন ফটোগ্রাফার ছিলেন। ক্যামেরা হাতে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকায় উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির সচিত্র প্রতিবেদন জাপানিদের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে ব্রত হিসেবে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিখোঁজ হন ১৯৭৩ সালে কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধের ছবি তোলার কাজে জড়িত থাকা অবস্থায়। তাঁর গুলিবিদ্ধ ক্যামেরার সন্ধান অনেক পরে পাওয়া গিয়েছিল। তাইজোর মৃত্যুর পর তাঁর মা উদ্যোগী হয়ে পুত্রের তোলা বিভিন্ন ছবির যে বই প্রকাশ করেছেন, সেই বইয়ে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশেরও বেশ কিছু ছবি সেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসে তাঁদের সমবেত হওয়ার স্মৃতিচারণা করে পেমা গালপো বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উঠেছিল, তখন লক্ষ করি যে কারোরই চোখ শুকনা নেই। আনন্দের অশ্রু নামছিল সবার চোখ বেয়ে।
অনুষ্ঠান শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে পেমা গালপো বলেন, ‘আমার অবদান ছিল খুবই সামান্য। তবে তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে আমাকে মনে রেখেছে, সে জন্য আমি অভিভূত। এই বাস্তবতা প্রমাণ করছে যে এমনকি সামান্য ভালো কিছু আমরা করলে কারও না কারও সেটা নজরে আসে।
Right