স্বাস্থ্য ও পুষ্টি

স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব অভ্যাস

স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব অভ্যাস

আমাদের জীবনে ব্রেইন স্ট্রোক মারাত্মক একটি রোগ। স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে কোষগুলো মরে গেলে। এ ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব জীবনযাপনে সামান্য একটু পরিবর্তন আনলেই ।

স্ট্রোক হলে একদিকে রোগী ও তার স্বজনের মাঝে থাকে মৃত্যুর বিভীষিকা। মৃত্যু না হলেও তাদের প্যারালাইসিস হবার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করে। মানুষকে স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণ ও কর্মক্ষমতার নিয়মিত সঠিক পরিচর্যা না করলে।

গবেষণায় দেখাছে, আমেরিকার মতো জায়গায় বছরে অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ স্ট্রোকে মারা যান। এবং প্রতি বছর সাত লাখ ৯৫ হাজার স্ট্রোক রোগে আক্রান্ত হন। দিন দিন বাংলাদেশেও বাড়ছে এই রোগ ও এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে আগেই সচেতন হবার।

বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক মানুষের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক রোগে মস্তিষ্কের অংশবিশেষ নষ্ট হওয়ায় রোগীর দেহে বেশ কিছু শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়। যেগুলোকে স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন:- প্যারালাইসিস, পা, হাত, মুখ অথবা শরীরের ডান বা বাম অংশ অবশ হয়ে যাওয়া। একটা চোখে অথবা উভয় চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, অথবা ঝাপসা দেখা, চলাফেরা করতে না পারা, চলাফেরায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া, হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা দেখা দেওয়া, কথা বলতে বা কথা বুঝতে সমস্যা হওয়া, বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পতিত হওয়া, কথা জড়িয়ে আসা ইত্যাদি।

প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস রয়েছে যা হতে পারে স্ট্রোকের কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক আমাদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। যদি জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস সঠিক থাকে, তাহলে অনেক অসুখই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। জীবনধারায় কোন কোন অনিয়মের কারণে স্ট্রোকের সমস্যা দেখা দেয়।

অতিরিক্ত মেদ জমলে:- ওবেসিটি হলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলেই তাকে ওবেসিটির সমস্যা বলা হয়। এছাড়া ওবেসিটির ফলে ডায়াবেটিস রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এতে অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

মদ্যপান:- বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক মাত্রায় মদ্যপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালকোহল শিরা ও ধমনীর স্থিতিস্থাপকতাকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অতিরিক্ত মদ্যপান অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের অন্যতম কারণ। যা স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।

ফ্যাটজাতীয় খাবার:- খাবারের তালিকায় প্রতিদিন স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটজাতীয় খাবার থাকলে তা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে প্যাকেটজাত ও প্যাকেটজাত খাবারে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লবণ এবং নাইট্রেট প্রিজারভেটিভ থাকে প্যাকেটজাত খাবারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারে অধিক মাত্রায় লবণের ব্যবহারও রক্তচাপ বাড়িয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ওজন ও অ্যাসিডিটি কমায় জোয়ান

শরীরচর্চার:- বিশেষজ্ঞরা অতি ব্যস্ত থাকার মাঝেও নিয়মিত শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরচর্চা না করলে উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। শরীরচর্চা না করলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে শরীরে ফলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ধূমপান:- বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহলের মতো ধূমপানও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানের ফলে শরীরে অসংখ্য ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করে। ধূমপান হৃদপিণ্ডের যেমন ক্ষতি করে তেমনি রক্তচাপেও প্রভাব ফেলে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ফলে ফুসফুসের পাশাপাশি ক্ষতি হয় সংবহনতন্ত্রেরও। এমনকি, পরোক্ষ ধূমপানেও প্রবল ক্ষতি হয় শরীরের।

পরিশ্রম:- যারা প্রতিদিন কাজ বা যাদের শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমন জীবনযাত্রার কারণে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ভবিষ্যতে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। স্থূলতা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় দিনের অধিকাংশ সময় বসে থাকায়।

One thought on “স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব অভ্যাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *